Home ঘুরে আসি ঘুরে আসুন ~ রোমিও-জুলিয়েটের শহরে

ঘুরে আসুন ~ রোমিও-জুলিয়েটের শহরে

0
ঘুরে আসুন ~ রোমিও-জুলিয়েটের শহরে

সাহিত্যের অনুরাগী না হলেও শেক্সপিয়ারের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ সম্পর্কে জানেন না, এমন ব্যক্তি পাওয়া বিরল। কারণ প্রেমের চিরন্তন প্রতিমূর্তিই হয়ে গিয়েছে এই দুই চরিত্র। তাই প্রেমে যাঁদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে, তাঁদের জন্য অবশ্যগন্তব্য ইতালির ভেরোনা।

কীভাবে পৌঁছনো: শুধুমাত্র ভেরোনা দেখার জন্য কলকাতা বা ভারত থেকে উজিয়ে ভেরোনা যাওয়ার সেভাবে অর্থ হয় না। ইতালি গেলে যে কেউ-ই তালিকার পরথম দিকে রাখেন রোম, ভেনিস, ফ্লোরেন্সের মতো শহর। যাঁরা তাঁদের তালিকায় ভেনিস বা মিলান রাখেন, তাঁদের পক্ষে ভেরোনা যাওয়াটা তুলনায় সহজ। কারণ ভেরোনা এই দুই শহরের মাঝামাঝি জায়গায়।

কলকাতা ট্রেনে দিল্লি, সেখান থেকে বিমানে আমাদের মিলান যাত্রা। পরিকল্পনা ছিল মিলানে দু’দিন কাটিয়ে সেখান থেকে ভেনিসের দিকে পা বাড়াবো। কিন্তু বন্ধু এবং মিলানের হোস্ট আলেসান্দ্রো এক প্রকার জোর করেই ভেরোনা যাওয়ার টিকিট কাটা করালো। ত্রেনর্দ-এর ট্রেন। যাকে বলে রিজিওনাল রেলগাড়ি। যেতে ঘণ্টা দেড়েক। ভাড়া ভারতীয় টাকায় ৭২০ টাকা মতো।

দেখার মতো: ভেরোনা তুলনায় আধুনিক শহর। কিন্তু একই সঙ্গে শহরের ঐতিহ্যও তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধরা আছে নিপুন ভাবে। তাই শহরে পা দিয়েই ডান-বাঁয়ের দৃশ্যের বৈপরীত্য তাক লাগায় যো কোনও পর্যটককে। কিন্তু শহরের এই ওপর ওপর ভ্রমণে চলবে না। ঘুরে দেখতে হবে ভেরোনার যা যা খুঁটিয়ে দেখার, তার সব কিছুই। সেই তালিকায় প্রথমেই আলেসান্দ্রো লিখে দিয়েছিল ‘এরিনা’র নাম। কারণ এটা হল এমন এক অ্যাম্ফিথিয়েটার, যার গড়ন অবিকল রোমের কলোসিয়ামের মতো।

কিন্তু কলোসিয়ামের একটা অংশ ভাঙা। কিন্তু ভেরোনার এরিনা সম্পূর্ণ গোটা। ভিতরে ছোট একটা অংশ ভূমিকম্পে ভেঙে পড়লেও, বাকিটা অক্ষত। কপাল ভালো থাকলে এখানে অপেরা দেখার সুযোগও পান কোনও কোনও পর্যটক। যদিও আমাদের কপাল অতটাও ভালো ছিল না।
ঠিক যতটা ভিড় চোখে পড়ল এরিনা দেখতে গিয়ে, তার অর্ধেকও পড়ল না কাসতেলভেচ্চো দেখতে গিয়ে। চতুর্দশ শতকের দূর্গ।

লাল ইঁটের তৈরি। আদিজে নদীর পাশের এই দূর্গে রাখা আছে রেনেশাঁস যুগের একাধিক পেইন্টিং। সঙ্গে রয়েছে মিউজিয়াম। যাঁরা মিউজিয়ামে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, একটু নিভৃতে ছবি বা অন্য শিল্পকলা দেখতে পছন্দ করেন, তাঁদের এই দূর্গ হতাশ করবে না।


দ্বিতীয় দিন সকালেই আমরা হাজির হলাম ভেরোনার দুয়োমায়। দুয়োমা মানে ক্যাথিড্রাল। ইতালির সমস্ত শহরের কেন্দ্রেই একটি করে দুয়োমো। মিলানের দুয়োমা পৃথিবীবিখ্যাত। ভেরোনার দুয়োমা অত বড় না হলেও, ঐতিহাসিক গুরুত্বে এবং শিল্পকলায় কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। ভূমিকম্প অনেক ক্ষতি হয়ে গেলেও অষ্টম শতকের এই স্থাপত্য এখনও সাজিয়ে রেখেছে অসংখ্য তৈলচিত্র, অসংখ্য গথিক শিল্পকলা।
‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর সেই বিখ্যাত ব্যালকনির কথা মনে আছে? যেখানে লুকিয়ে দেখা হয়েছিল দু’জনের।

সেই বিখ্যাত ব্যালকনিও ভেরোনার অবশ্য দ্রষ্টব্যর একটি। শহরের কেন্দ্রেই রয়েছে এই ‘কাজা দি জুলিয়েত্তা’ (জুলিয়েটের বাড়ি)। তবে এই বাড়ির সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে শেক্সপিয়ারের লেখার কোনও সম্পর্ক নেই। বাড়িটি পুরনো, ব্যালকনিটি বাড়ি তৈরির সময় ছিল না। ১৯৩৬ সালে সেটি বাড়ির সঙ্গে যোগ করে বাড়িটির এই নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও একে উপেক্ষা করে যাওয়ার নয়।

থাকার জায়গা: ইতালির বাকি শহর, বিশেষ করে রোমের নিরিখে ভেরোনায় থাকার জায়গার ভাড়া তুলনায় বেশি। রোমে হোস্টলে মাথা পিছু ভারতীয় টাকায় ১০০০-এর কমে বেড ভাড়া পেলেও, এখানে ১৮০০-র কমে মুশকিল। আর হোটেলের রুম রাত প্রতি পৌঁছবে ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার (ভারতীয় টাকায়)।

খাবেন কী: পিৎজার দেশ হলেও, ভেরোনা বিখ্যাত পাস্তার জন্য। আর সর্বভুকদের জন্য রয়েছে এখানকার বিখ্যাত পদ কাভাল্লো, যার মূল উপাদান ঘোড়ার মাংস।

কেনাকাটা: ইতালির সব বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের দোকান এখানে আছে। রয়েছে মণিহারি দোকানও।