Home ঘুরে আসি ঘুরে আসি ~ ঘরের কাছে ছোট্ট তিব্বত: কাগবেনি

ঘুরে আসি ~ ঘরের কাছে ছোট্ট তিব্বত: কাগবেনি

0
ঘুরে আসি ~ ঘরের কাছে ছোট্ট তিব্বত: কাগবেনি

 

কেন কাগবেনি: তিব্বত যাওয়া সহজ নয়। বিশেষতঃ ভারতীয়দের পক্ষে। চিনের কাছ থেকে ভিসা পাওয়া, এবং বেজিং হয়ে তিব্বতের লাসা পৌঁছনোর ঝক্কি অনেক। তাছাড়া খরচের অঙ্কও বেশ বড়। তিব্বতের ছোট গ্রামগুলো দেখতে গেলে, লাসা থেকে সে সব জায়গায় যেতে পারমিট বের করতে হবে, যার হেপাও কম নয়। কিন্তু এত সব ঝামেলা না করেই যদি তিব্বতের মতো একই রকম সুন্দর জায়গায় ঘুরে আসা যায়? সেটাই সম্ভব কাগবেনি গেলে। নেপালের উত্তর-পশ্চিম দিকের এই গ্রাম একেবারেই ক্ষুদ্র তিব্বত।

কীভাবে যাওয়া: কলকাতা থেকে সস্তার যাত্রা অবশ্যই ট্রেনে। হাওড়া থেকে রক্সোল। সেখান থেকে নেপাল সীমান্তের বীরগঞ্জ। বীরগঞ্জে পারমিটের কাগজ বানিয়ে নিয়ে বাসে পোখারা। সকালে বাস ধরলে বিকেল হয়ে যাবে পৌঁছতে। পরের দিনটা পোখারা ঘুরে কাটানোই যেতে পারে। তারপর দিন কাগবেনির দিকে যাত্রা।

তবে যাত্রাপথ খুব একটা সুগম নয়। বাসে ভয়ানক রাস্তা দিয়ে জোমসোম পর্যন্ত যেতে হবে। জোমসোম অন্নপূর্ণা রেঞ্জে আশপাশের সবচেয়ে বড় শহর। সদর শহরও বটে। বাস নিয়ে যাবে ওই পর্যন্ত। তার ছোট্ট ব্রিজ পায়ে হেঁটে ওপারে গিয়ে আবার গাড়ি ধরতে হবে। ছোট বাস বা টাটা সুমোর মতো বাড় রয়েছে ওপার থেকে। সেটাই সোজা নিয়ে যাবে কাগবেনি। পোখারা থেকে জোমসোম পৌঁছতে বেশি দেরি হলে, সেদিন আর কাগবেনি যাওয়ার ঝক্কি না নেওয়াই ভালো। পরদিন সকালে জোমসোম তেকে কাগবেনি যাওয়া যেতে পারে। সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক।


যাঁরা নিয়মিত ট্রেক করেন, তাঁরা নেপালের অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক সম্পর্কে জানেন। অন্নাপূর্ণার রেঞ্জকে প্রদক্ষিণ করে থোরোং লা (পাস) হয়ে সার্কিট ট্রেকের পথ শেষ হয় মুক্তিনাথ মন্দিরে এসে। মুক্তিনাথ থেকে গাড়ির রাস্তা নেমে আসে জোমসোমে। সেই গাড়ির রাস্তারই মাঝে এই কাগবেনি। তাই যাঁরা সার্কিট ট্রেক করে ফিরবেন, তাঁরা কাগবেনির ওপর দিয়েই ফিরবেন জোমসোমে।

কেন যাবেন এখানে: বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই জোমসোম ছিল তিব্বতের অন্তর্গত। এলাকার সব মানুষি ছিলেন তিব্বতি। পরে তিব্বতের সঙ্গে এই এলাকার দখল নিয়ে নেপালের যুদ্ধ হয়। নেপাল যুদ্ধে যেতে। এবং কাগবেনির দখল নেয়। দখল নিলেও নেপালের স্থানীয় অধিবাসীরা এলাকার কোনও বদল ঘটাননি। আদি যুগের তিব্বতের বাড়িঘর এখনও একই ভাবে তাঁরা রেখে দিয়েছেন, পরিচর্যা করে চলেছেন এবং নিজেরাও বাস করছেন সেই সব জায়গায়।

জোমসোমের দিক থেকে কাগবেনির ঢোকার মুখে কিছু আধুনিক বাড়ি দেখা গেলেও, যত ভিতরে যাওয়া যায়, দৃশ্য বদলে পুরোপুরি তিব্বতী গ্রামের আদল নেয়।মাটির ঘরবাড়ি, বাঁকে বাঁকে প্রাচীন তিব্বতী তান্ত্রিক বৌদ্ধ মূর্তি, তিব্বতীদের রেখে যাওয়া আস্তাবল— সব কিছু।


তবে এটাই একমাত্রকারণ নয়। অনেকেই জানেন, নেপালের অন্যতম দূর্গম জায়গা আপার মুসটাং ভ্যালি। শালগ্রাম শিলার দেশ। পৃথিবীর একমাত্র জায়গা, যেখানে পাওয়া যায় এই শিলা। মনে করা হয় জুরাসিক যুগের পরে যেখানকার ভূমিরূপে আর কোনও বদল হয়নি।

সেই আপার মুসটাং ভ্যালিতে পৌঁছন যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। দীর্ঘদিনের ট্রেক। লোকলস্কর, মালপত্র নিয়ে যাত্রা। তার ওপর রয়েছে পারমিটের বিরাট খরচ। ভারতীয় টাকায় মাথাপিছু ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। এই এলাকায় খুব বেশি মানুষের পা পড়ুক চায় না নেপালের সরকার থেকে পুরাতত্ত্ববিদরা— কেউ-ই। সেই কারণেই বিপুল টাকা খরচ করতে হয় পারমিট পেতে।

আর সেই কারেণই এই জায়গার কোনওপরিবর্তন হয়নি সভ্যতার এত সর্বগ্রাসী অগ্রগতির পরেও। কিন্তু যাঁরা আপার মুসটাং দেখতে চান, কিন্তু এতটা ঝক্কি না সামলেই, তাঁদের জন্য কাগবেনি আদর্শ ডেস্টিনেশন। এটি প্রকৃত পক্ষে লোয়ার মুসটাং ভ্যালির অন্তর্গত। এবং এই পর্যন্ত পৌঁছতে মুসটাং ভ্যালির পারমিট লাগে না। অন্নপূর্ণা রেঞ্জের পারমিট থাকলেই হয়।

ফেরার সময়: ফেরার সময় জোমসোম থেকে বিমানেও আসতে পারেন পোখারা। আকাশ থেকে দেখা যায় গোটা মুসটাং। তবে বিমানযাত্রার আশঙ্কাও আছে। এই ছোট বিমান মাঝেমাঝেই দুর্ঘটনায় পড়ে। ঝড়বাদলে তাই বিমানের অপশন না ভাবাই ভালো।

ছবি সৌজন্য ঃ তীর্থ রায়