জানেন কি, ‘কেমোথেরাপি’ ছড়িয়ে দিচ্ছে ক্যানসার! অবাক লাগছে? জানতে হলে লিংকে টিপুন…

ওয়েব ডেস্কঃ    কেমোথেরাপি ক্যানসারের চিকিৎসার সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র, তাও জানা যাচ্ছে আমাদের শরীরে ক্যানসার কবলিত কোষগুলিকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে কেমো। দ্রুত, আরও বেশি পরিমাণে শরীরের অন্যান্য অংশেও কেন খুলে দিচ্ছে কেমো… গবেষণা বলছে কেমোথেরাপি করানোর পর দুরারোগ্য ক্যানসারের জটিল জটে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছেন রোগীরা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা এমনটাই দাবি করছে। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘নিওঅ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি ইনডিউসেস ব্রেস্ট ক্যানসার মেটাস্টাসিস থ্রু আ টিএমইএম-মেডিয়েটেড মেকানিজম’। গবেষণাপত্রটিতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটি নিয়ে ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা অবশ্য কিছুটা দ্বিধাবিভক্তই। কেউ কেউ সমর্থন করছেন, কেউ বা বলছেন ভিন্ন সুরে। ফলে, বিতর্ক চরমে পৌঁছেছে। আলোড়ন উঠেছে।

স্তন ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপিতে যে ওষুধগুলি দেওয়া হয়, সেই সব ওষুধ শরীরে ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলিতে পৌঁছে কী কী কাজ করছে আর তাদের ফলাফল কী হচ্ছে, সেটাই ছিল গবেষণার মূল বিবেচ্য। শুধুই ইঁদুরের ওপরে নয়, মানুষের ওপরেও গবেষণাটি চালানো হয়েছিল।

গবেষকরা দেখেছেন, কেমোথেরাপির ওষুধগুলি শরীরে ঢুকে তাদের টার্গেট – ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলিতে পৌঁছে ফুলে-ফেঁপে ওঠা কোষগুলির ‘বাড়তি মেদ’ ঝরিয়ে তাদের প্রাথমিক ভাবে গায়েগতরে কিছুটা হাল্কা (শ্রিঙ্ক) করে দেয়। যদিও তা খুবই সাময়িক ভাবে।

অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু যে ‘বিষ’ ঢেলে ওষুধগুলি ক্যানসার কোষকে প্রথমে কিছুটা নিস্তেজ করে দিচ্ছে, সেই ‘বিষ’ই পরে শরীরের মেরামতি ব্যবস্থার (রিপেয়ার মেকানিজম) ওপর উল্টো প্রভাব ফেলছে।  ক্যানসার কোষগুলি শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যা শরীরের মেরামতি ব্যবস্থাকে মেনে নিতে হচ্ছে। ফলে, ক্যানসার কোষগুলি আরও দ্রুত, আরও বেশি সংখ্যায় শরীরের অন্যান্য অংশেও যাচ্ছে। মাধ্যম হল রক্ত।

গবেষকরা বলছেন, তাঁরা দেখেছেন কেমোথেরাপির ওষুধগুলি রক্তে ক্যানসার কোষগুলির ঢুকে পড়ার ‘দরজা’র সংখ্যাগুলো দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে, রক্তে আরও বেশি জায়গা (পড়ুন, ফাঁকফোকড়) দিয়ে ঢুকতে পারছে ক্যানসারে কাবু কোষগুলি। সেগুলি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে ও ছড়িয়ে পড়ছেও অসম্ভব দ্রুত হারে।

মূল গবেষক, নিউইয়র্কের ইয়েসিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের অধ্যাপক, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জর্জ ক্যারিগিয়ান্নিস ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘শরীরে কোষগুলির একটি বিশেষ জোট (গ্রুপ) রয়েছে। যার নাম- ‘টিউমার মাইক্রো-এনভায়রনমেন্ট অফ মেটাস্টাসিস (টিএমইএম)। এরাই টিউমার কোষগুলিকে আরও বেশি করে ঢুকতে ও ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে। আমরা স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপির সবচেয়ে প্রচলিত ওষুধগুলির মধ্যে দু’টি ওষুধকে নিয়ে কাজ করেছি। তাতে দেখেছি, ওই ওষুধগুলিই শরীরে টিএমইএমের সক্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্যানসার কোষগুলিকে রক্তে আরও দ্রুত, আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।”

ক্যানসার চিকিৎসার অসুবিধার মূল কারণটা লুকিয়ে রয়েছে ক্যানসার কোষগুলির জন্ম, বিকাশ আর তাদের বেড়ে ওঠার মধ্যেই। বহুদিন আগে এক বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ক্যানসার আসলে একটি প্রজাতি বা স্পিসিস। যা মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির জন্মের সঙ্গেই প্রবহমান। তিনি হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন, মানবসভ্যতার ২০ শতাংশের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের কবলে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই জোরালো।

কলকাতার বিশিষ্ট অঙ্কোলজিস্টের কথায়, ‘‘মুশকিলটা এখানেই যে, ক্যানসার কোষ কোনও বিজাতীয় কোষ নয়। তারা তৈরি হয় আমাদের শরীরের সুস্থ, স্বাভাবিক কোষ থেকেই। তাই ক্যানসার আমাদের দেহের কোষ-সাম্রাজ্যেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার সঙ্গে সুস্থ, স্বাভাবিক কোষের তফাৎ একটাই। সেটা শুধুই চরিত্রের। এখানেই ক্যানসারের ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা।” তিনি এমনটাই মনে করেন। ক্যানসারের সমস্যা বেড়েই চলেছে।

ক্যানসারের চিকিৎসা এখন হয় কী কী ভাবে?

ক্যানসার চিকিৎসার মূলত তিনটি উপায় রয়েছে। এক, অস্ত্রোপচার। দুই, রেডিওথেরাপি। তিন, কেমোথেরাপি (যার মধ্যে পড়ে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের মাধ্যমে টার্গেটেড থেরাপিও)। ওই তিনটির মধ্যে প্রাচীনতম পদ্ধতির নাম অস্ত্রোপচার বা সার্জারি। ইতিহাস বলছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ক্যানসার রোগীদের অস্ত্রোপচার করতেন শুশ্রূত। অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে ক্যানসারে কাবু কোষগুলিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি বহু দিন ধরে চালু ছিল। একমেবাদ্বিতীয়ম হিসেবে মনে করা হত!

ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে শুরু হয় রেডিওথেরাপি। এই পদ্ধতিতে খুব শক্তিশালী বিকিরণ দিয়ে ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলিকে পুড়িয়ে, নষ্ট করে দেওয়া হয়, আজও কোথাও কোথাও এমনটি করা হয়।

সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির নাম- কেমোথেরাপি। টার্গেটেড থেরাপিও তার আওতায় পড়ে। মোটামুটি ভাবে ১৯৪০ সালে শুরু হয় কেমোথেরাপি। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে গত ৮০ বছরে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই কেমোথেরাপিই। অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে, প্রয়োজন অনুসারে, এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ওষুধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে (কম্বিনেশন) ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় রোগীকে। কখনও বা তাঁকে খেতে দেওয়া হয় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল (টার্গেটেড থেরাপিতে)। কেমোথেরাপির ওই ওষুধ বা ইঞ্জেকশনগুলি শরীরে ক্যানসারে কাবু কোষগুলিকে নিস্তেজ করে দেয়।

তবে কেমোথেরাপিও পুরোপুরি ‘নিশ্ছিদ্র’ নয়, এমনটাই বলছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা। ডাক্তারের কথায় ক্যানসার কোষকে বেছে বেছে, আলাদা করে ধ্বংস করা যায় না। তবু কোনও কোনও ক্যানসারে কেমোথেরাপির অবদান অনস্বীকার্য। তার মূল কারণও সেই নির্দিষ্ট ক্যানসারের চরিত্রের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সেই সব ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি প্রয়োগ করলে যেমন প্রচুর পরিমাণে সুস্থ কোষ মারা যায়, তেমনই প্রচুর পরিমাণে মারা যায় ক্যানসার কোষও।

তবে ক্যানসারে কাবু সব কোষই মরে না। বাকি ক্যানসার কোষগুলো চলে যায় সুপ্তাবস্থায়। তারা হয় ঘুমিয়ে পড়ে সাময়িক ভাবে বা ঘুমানোর ‘ভান’ করে থাকে! তাতে কিছুটা উপকার হয় রোগীর। কারণ, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ক্যানসারে কাবু কোষগুলি আর শরীরে ধ্বংস বা তাণ্ডব চালিয়ে যেতে পারে না। তবে তাদের সেই নিদ্রাবস্থা কত দিন ধরে চলতে পারে তা কিন্তু বলাটা খুবই মুশকিল। বোঝাই যাচ্ছে ক্যানসারকে এখনও মানুষ কাবু করতে পারেনি। এক ভয়ংকর ব্যাধি।

Recent Posts

Swami Pradiptananda: হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হলে চুপ করে থাকব না, ঈশ্বর ওনাকে চৈতন্য দিন: কার্তিক মহারাজ

লোকসভা ভোটের প্রচারে ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজকে উদ্দেশ করে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ…

1 hour ago

মা উড়ালপুলে যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনা ঠেকাতে নয়া উদ্যোগ, প্রস্তাব যাবে নবান্নে

মা উড়ালপুল দিয়ে বিপুল পরিমাণ গাড়ি যাতায়াত করে থাকে। এটা শহরের ব্যস্ততম উড়ালপুল। এই উড়ালপুল…

4 hours ago

নষ্ট হওয়া ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বর্জ্য থেকে শহরবাসীকে মুক্তি, উদ্যোগ নিল কলকাতা পুরসভা

প্রযুক্তি ব্যবহারের জেরে শহরে বেড়েছে ইলেকট্রনিক আবর্জনা। এটাকেই অনেকে ই–বর্জ্য বলে থাকেন। শহরের প্রায় প্রত্যেকটি…

6 hours ago

Digha train: মোটরভ্যানের সঙ্গে দিঘাগামী লোকালের সংঘর্ষ, অল্পের জন্য রক্ষা যাত্রীদের

রবিবার সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে পাঁশকুড়া ছাড়ে দিঘা লোকাল। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হেঁড়িয়া ও…

6 hours ago

নাগাড়ে বৃষ্টিতে তিস্তার জল বেড়ে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক, রংপো থেকে উদ্ধার তিন পর্যটক

উত্তরবঙ্গে এখন ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে। কারণ পার্বত্য এলাকা–সহ পাঁচ জেলায় ভারী বৃষ্টি দেখা…

6 hours ago

Sundarbans: মাথায় ‘কুডুলের কোপ’, সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের হাতে খুন বনকর্মী

চোরা শিকারিদের হাতে খুন হলেন এক বনকর্মী।  রাতে টহল দেওয়ার সময় হামলা চালায় এক দল…

7 hours ago