Home অফ-বিট জানেন কী, পৃথিবীর কোন কোন দেশে সাপ একদমই নেই!!

জানেন কী, পৃথিবীর কোন কোন দেশে সাপ একদমই নেই!!

জানেন কী,  পৃথিবীর  কোন কোন দেশে সাপ একদমই নেই!!

ওয়েবডেস্ক: ভগবান শিবের গলায়ও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান সর্পরাজ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে এমন দেশ রয়েছে নাকি যেখানে সাপ নেই!! অবাক হয়ে যাচ্ছেন তো… হ্যাঁ। প্রাকৃতিক নিয়মে এমন দেশও আছে যেখানে সাপেরা থাকতে পারে না। সাধারণত অনেক সংবাদ মাধ্যম প্রচার করে আয়ারল্যান্ডে নাকি সাপ নেই কিন্তু কেবলমাত্র আয়ারল্যান্ড নয় নিউজিল্যান্ড, হাওয়াই, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও আন্টার্টিকাতেও সাপের দেখা মেলে না।

আসলে সাপ শীতল রক্তের প্রাণী তাই আবহাওয়া খুব ঠান্ডা এমন স্থানে সাপের দেখা পাওয়া যায় না। বরফের মতোই হয়ে থাকে মাটির তাপমাত্রা। আয়ারল্যান্ডের চতুর্দিক বরফ ও ঠান্ডা জল দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছে। শীতল রক্তের সরীসৃপ প্রাণী সাপ এই ঠান্ডা পরিবেশে কোনো দিন জন্মায়নি। তবে এখন আকাশ পথে বিজ্ঞানী সংস্থার থেকে সাপ ফেলে দেখা হচ্ছে, এই সমস্ত স্থানে সাপের বংশবিস্তার করতে পারে কিনা..

আসলে বিজ্ঞানীদের মতে, এক লক্ষ বছর আগে ক্রিটেসিয়াস (প্রাক প্রস্তর) যুগে টিকটিকির কোনো প্রজাতি থেকেই মনে করা হয় সাপের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়ে ডাইনোসরের পূর্বপুরুষ টাইনোসরের আধিপত্য পৃথিবীতে অনেক বেশি ছিল। তখন আয়ারল্যান্ড জলের নীচে ছিল, পৃথিবীর ভূভাগের অংশ হয়ে ওঠেনি।

বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে মনে করা হয় প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ বছর আগে সেনোজয়িক যুগে বরফ অবস্থা থেকে পৃথিবী শুকোতে শুরু করে, সেই সময় উত্তর গোলার্ধের বিশাল অঞ্চল তৃণভূমিতে পরিণত হয়। পাঁচ লক্ষ বছর আগে এই অঞ্চলে অজগরসহ অসংখ্য সাপের উদ্ভব হয়। আর আনুমানিক আড়াই লক্ষ বছর আগে কোবরাসহ আকারে ছোট অন্য বিষধর সাপের উৎপত্তি হয়।

সাপ সাধারণত মিষ্টি জল, নোনা জল, নদী-নালা, খাল-বিল, জঙ্গল, মরুভূমি এমনকি পাহাড়েও দেখতে পাওয়া যায়। উপরের ম্যাপ অনুসারে শুধু বরফাচ্ছাদিত মহাদেশের অংশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় না। তার মধ্যেই অন্যতম হল আয়ারল্যান্ড। তবে আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডস, হাওয়াই এবং গ্রিনল্যান্ডেও কোনো সাপ নেই। জল ও স্থলভাগ অতিমাত্রায় শীতল থাকায় এই সমস্ত দেশে সাপ বসবাস করতে পারে না। হ্যাঁ, সাপ হয়তো দেখতেই পাবেন, তবে তা যেখানে সেখানে প্রকৃতির মধ্যে থাকবে না, চিড়িয়াখানায়। বিশেষভাবে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে বাঁচিয়ে রাখা হয়। সেগুলো মোটেও দেশীয় সাপ নয়, বাইরে থেকে নিয়ে আসা।

কেন নেই?

এসব দেশের নিজেস্ব সাপ নেই তার আরেকটি কারণের কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতামত অনুসারে, অন্য স্থলভাগ থেকে জল দিয়ে বিচ্ছিন্ন থাকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে ঠান্ডা সাগর-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেখানে কখনো সাপ যেতে পারেনি। ইউরোপের ভূখণ্ডসমূহ মহাবিবর্তনের মধ্য দিয়ে স্থলপথে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন সরীসৃপ প্রাণী আয়ারল্যান্ডে গেছে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় পৌঁছাতে পারেনি সাপ। ফলে যুক্তরাজ্যে সাপ থাকলেও আয়ারল্যান্ডে দেখা যায় না।

সর্বশেষ বরফ যুগ শুরু হয়েছে 3 মিলিয়ন বছর আগে এবং এখনো তা ক্রমবর্ধমান। এই সময়ের মধ্যে অন্তত 20 বার হিমবাহ পরিবর্তিত হয়েছে। তার প্রভাবে বরফের চাদরে ঢেকে গেছে আয়ারল্যান্ড। এত হিম পরিবেশে এক বছরও সাপ বাঁচতে পারবে না।

লোককথা….

আয়ারল্যান্ডে সাপ না থাকার বিষয়ে জনপ্রিয় লোককথা প্রচলিত রয়েছে। গল্পটি খানিকটা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতোই সত্য। সেন্ট প্যাট্রিক নামে ইতালির এক ধর্মযাজক ধর্ম প্রচারে আয়ারল্যান্ডে এসেছিলেন। তিনি তার লাঠির ইশারায় সব সাপ একটি চূড়ায় জড়ো করে ফেলে দিয়েছিলেন সাগরে। সেই থেকে আয়ারল্যান্ডে আর কোনো দিন সাপ দেখা যায়নি। এই লোককথার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও যুক্তি মেলে না তবে প্রাচীন রোম শহরে এখনো পাথরে খোদাই করা আছে সেন্ট প্যাট্রিকের সাপ তাড়ানোর সেই অলৌকিক দৃশ্য গেলেই দেখতে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here