Home ঘুরে আসি দূরদেশে ~ বিদেশ ভ্রমণ ‘কাসাব্ল্যাংকা’

দূরদেশে ~ বিদেশ ভ্রমণ ‘কাসাব্ল্যাংকা’

0
দূরদেশে ~ বিদেশ ভ্রমণ ‘কাসাব্ল্যাংকা’

কেন কাসাব্লাংকা: ভ্রমণের জায়গা হিসেবে ভারতীয়দের কাছে সেভাবে জনপ্রিয় নয় এই শহর। কিন্তু ইউরোপ বা আমেরিকার পর্যটকদের কাছে এই শহরের আকর্ষণ অনেক বেশি। কারণ এখানকার স্থাপত্য, শিল্প বা জীবনযাত্রার সঙ্গে ভারতের মিল অনেক। সেই কারেণই ভারতীয় পর্যটক এখানে গেলে অনেক কিছুই তাঁর পরিচিত বলে মনে হবে। কিন্তু তার পরেও কাসাব্লাংকা অবশ্যই যাওয়া উচিত। কারণ এই শহরের কসমোপলিটান সংস্কৃতি।

কীভাবে পৌঁছন: মরোক্কোর সবচেয়ে বড় শহর কাসাব্লাংকা। কিন্তু মরোক্কোর রাজধানী নয়। রাজধানী রাবাত হয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দিল্লি বা মুম্বই— দুটো শহর থেকেই রাবাতের বিমানের ভাড়া বেশি। তাই ভারত থেকে যেতে হলে সরাসরি কাসাব্লাংকার বিমান ধরাই ভালো। ইজিপ্ট এয়ার বা গাল্ফ এয়ারের ভাড়া তুলনায় কম। তবে লম্বা সময় স্টপওভারে অপেক্ষা করতে হবে, এটা মাথায় রাখা উচিত। ইজিপ্ট এয়ারে হলে কায়রোয়, গাল্ফ এয়ারে হলে বাহরিনে ১০ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয় কোনও কোনও ফ্লাইটের জন্য। তবুও প্রায় ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি বাঁচিয়ে ফেলা যায় এইটুকু কষ্ট সহ্য করে।

থাকা-খাওয়া: প্রথমে থাকা আর খাওয়ার বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়া যাক। এখানে থাকার জন্য খুব বেশি খরচ করতে হবে না। ভারতীয় টাকায় রাত প্রতি ৭০০ টাকায় খুব ভালো হোস্টেলের বেড ভাড়া পাওয়া যায়। যাঁরা শহরের কেন্দ্রে থাকতে চান, তাঁরাও এই টাকায় হোস্টলে বেড পাবেন, যাঁরা কোলাহল থেকে অনেক দূরে থাকতে চান, তাঁরাও শহরের কেন্দ্র থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মধ্যে হোস্টেল পাবেন। খরচ একই। তবে শহর ঘোরার জন্য হাতে বেশি দিন না থাকলে, শহরের কেন্দ্রে থাকাই ভালো। আর খাওয়ার জন্য শহরের কেন্দ্রে রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ। কোপতা স্যান্ডউইচ, সালাড খেয়ে পেট ভরাতে অসুবিধা না থাকলে খুব সস্তায় মিটে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যাঁরা মদ্যপান করতে পছন্দ করেন, তাঁরা এই সব রেস্তোরাঁয় সস্তায় বিয়ার পাবেন। কসমোপলিটান সংস্কৃতির কারণেই এই শহরের অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় মহিলারা কোনও সমস্যা ছাড়াই মদ্যপান করতে পারেন। বিয়ার বা অন্য পানীয়ের সঙ্গে পপকর্ন আর জলপাই (অলিভ) দেওয়া হয় বিনামূল্যে। রেস্তোরাঁর পানীয় সরবরাহকারীকে হাত করতে পারলে জলপাইয়ের সরবরাহ নিরন্তর চলবে। খরচও বাড়বে না।

কাসাব্লাংকার দেখার জিনিস: এবার আসা যাক আসল কথায়। যে জন্য মরোক্কোর এই শহরে আসা। আদি যুগে এই শহরের পত্তন করেছিলেন মৎসজীবীরা। কিন্তু তারপর কখনও রোমান, কখনও পর্তুগিজরা এই শহর দখল করে। পর্তুগিজদের হাতে শহর ধ্বংসও হয়। তারা পরে নতুন করে শহরটি তৈরিও করে। কিন্তু সেটি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়। কাসাব্লাংকা তারও পরে নতুন করে বানান মরোক্কোর সুলতান। স্প্যানিশ ব্যবসায়ীরা শহরের নামকরণ করে কাসাব্লাংকা। ১৯০৭ সালে ফরাসিরা এখানে কলোনি তৈরি করে। এইইতিহাসটা থেকেই আন্দাজ করা যায়, শহরটি কেন এত কসমোপলিটান। শহরের স্থাপত্য, শিল্প, সংস্কৃতি— সবেতেই এই কসমোপলিটান ইতাহাসের ছাপ রয়েছে।

দেখার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে রাজা দ্বিতীয় হাসানের মসজিদ। মরোক্কোর বৃহত্তম মসজিদ এটি। পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম। মরোক্কোর দু’টি প্রধান মসজিদের একটি, যে দু’টিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষ প্রবেশ করতে পারেন। মসদিজের তলায় রয়েছে হামাম। সেটিও দেখার মতোই। তবে হামাম হিসেবে এটি এখনও ব্যবহার হয় না।


এই মসজিদ ছাড়া শহরের অন্যতম দেখার জায়গা সৈকত এলাকা। এক সময় এখানে বিলাসবহুল রিসর্ট ছিল। কিন্তু এখন রিসর্টে থাকার ট্রেন্ড কমেছে। মূলত নাইটক্লাবে যাঁরা যেতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এই এলাকা একেবারে প্রাণকেন্দ্র।


তবে কাসাব্লাংকার আসল আকর্ষণ ঘুরে ঘুরে এখানকার স্থাপত্য দেখা। একেবারে আধুনিক থেকে আর্ট ডেকো— সব যুগেরই প্রতিনিধিত্ব করার মতো স্থাপত্য রয়েছে এই শহরে। তবে নিজর মতো ঘুরে খুব বেশি জানা যাবে না সে সম্পর্কে। কাসামেময়ার-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে, যারা কনডাকটেড ট্যুরে এই শহরের স্থাপত্য ঘুরিয়ে দেখায় পর্যটকদের। সঙ্গে জানায় ইতিহাসটাও। তেমন কোনও সংস্থার সাহায্য নিলে ভালো। নচেত এই ইউনেসকো হেরিটেজ সাইট-টির অনেক কিছুই অজানা থেকে যাবে।

ফটো সৌজন্য ঃ তীর্থ রায়