ভারতের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক ও বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ সমন্বিত শহর হল কলকাতা যা সভ্যতার বিভিন্ন স্তরে সামাজিক নানান কর্মকান্ডের স্মারক বহন করছে। চাইনিজ, আমেরিকান, জিউইস্ এবং অন্যান্য বহিরাগত জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কলকাতাকে নিজের আবাস বলে মনে করেছে। তাই এই শহরটির স্থাপত্য ও কারিগরি দিকটি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করে। এখানে ছয়টি বিল্ডিং সম্পর্কিত তথ্যাবলি ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষ তথা কলকাতার স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন বর্ণনা করেছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল —
কলকাতার অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত স্থাপত্য হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল যা ১৯০৬ ও ১৯২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে রানী ভিক্টোরিয়ার (১৯০১) মৃত্যুর স্মারক হিসাবে নির্মিত হয়। ব্রিটিশ স্থপতি উইলিয়াম এমারসনের প্ল্যান হিসাবে এই বিল্ডিংটি সাদা মার্বেল দ্বারা নির্মিত যা রাজস্থান থেকে আমদানিকৃত এবং ভারতীয় ও ব্রিটিশ স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন হিসাবে বিরাজমান। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থাপত্যের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এই স্মৃতিসৌধটি ইজিপ্ট, মুঘল, ডেকান, ভেনেটিয়ান প্রভৃতি জাতি ও দেশের স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন বহন করছে।
সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল–
ভারতের সিটি অফ জয় তে ১৮৪৭ সালে নির্মিত এই গীর্জাটি সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। গথিক স্থাপত্য ও ছোট রঙিন কাঁচের টুকরো দ্বারা নির্মিত জানালা বিশিষ্ট, দুধসাদা ক্যাথিড্রাল চার্চ কলকাতার ক্রমবর্ধমান ইওরোপিয়ানদের স্বাক্ষর বহন করে প্রাথমিক ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এর আগে অনেক ছোট সেন্ট জনস্ ক্যাথিড্রালে তাদের যাতায়াত ছিল যেটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৮৭ সালে।
ক্যাথিড্রাল রোড, কলকাতা
মার্বেল প্যালেস–
ঐতিহাসিক উত্তর কলকাতায় অবস্থিত ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক, এক বনেদী বাঙালী ধনকুবের নির্মিত এই মার্বেল প্যালেস অবস্থিত। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের অসাধারণ কারিগরি ও শিল্পমনস্কতার পরিচয় হিসাবে এই তিনতলা মার্বেলের দেওয়াল ও মেঝে সমেত বিল্ডিংটি নির্মিত হয়। দেওয়ালে ভারতীয় ও ইওরোপিয়ান আর্টিস্টদের আঁকা অসাধারণ চিত্রাবলী শোভা পাচ্ছে। সাথেই অসাধারণ স্থাপত্য,প্রাচীন আসবাবপত্র এবং অন্যান্য দামী জিনিসপত্র এখানে রয়েছে। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের বংশধরগণ এখানে বসবাসকালীন এই মার্বেল প্যালেসের বেশ কিছু অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
৪৬, মুক্তারাম বাবু ষ্ট্রীট,কলকাতা, জোড়াসাঁকো,রাম মন্দিরের বিপরীতে এটি অবস্থিত।
কলকাতা টাউন হল–
১৮১৩ সালে কলকাতার ইওরোপীয়ান কম্যুনিটি একসাথে একজায়গায় জমায়েত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালন করার জন্য এই টাউন হলের নির্মাণ করে যা বর্তমানে কলকাতার অন্যতম পরিচিত একটি বিল্ডিং। রোমান ডরিক স্টাইলে নির্মিত এই বিল্ডিংটি ঊনবিংশ শতকের একটা সময় আইনকানুন প্রয়োগের প্রয়োজনে ব্যবহার হত কারণ কলকাতা হাইকোর্ট তখন তৈরী হচ্ছিল। এখানে বর্তমানে মিউজিয়াম ছাড়াও একটি লাইব্রেরী আছে যেখানে প্রায় ১২,০০০ বই এবং পুরানো সংবাদপত্র আছে যেগুলি আজ সারা দুনিয়ায়য় অমিল।
এসপ্ল্যানেড রো ওয়েস্ট, বি বি দি বাগ, কলকাতা
কলকাতা হাই কোর্ট —
এটি সারা ভারতের সর্বাপেক্ষা পুরাতন হাই কোর্ট যেটি ১৮৮২ সালে নির্মিত। নিও গথিক স্টাইলে নির্মিত এই বিল্ডিংটি ব্রিটিশ স্থপতি ওয়ালটার গ্র্যানভাইলের ডিজাইন অনুযায়ী নির্মিত হয়। বলা হয় যে, এটি বেলজিয়ামের ওয়াইপ্রাসের ক্লথ হলের মডেলকে মনে রেখে বানানো হয়েছিল।
৩,এসপ্ল্যানেড রো ওয়েস্ট, বি বি দি বাগ, কলকাতা
বেলভেডিয়ার এস্টেট —
ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ ইন্ডিয়ার মুখ্য “বাড়ী” হিসাবে, সমগ্র ভারতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ লাইব্রেরী, বেলভেডিয়ার এস্টেট আঠারোশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থাপিত হয়। বেলভেডিয়ার হাউস তৈরী করেন মীর জাফর আলি খান, বাংলার নবাব, ১৭৬০ সালে, যিনি পরবর্তী সময়ে এটি তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
বেলভেডিয়ার রোড, ব্লক এ,আলিপুর, কলকাতা