বগটুই কাণ্ডের পর এই প্রথম বীরভূমে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। যাঁকে তিনি কেষ্ট বলেই ডাকেন। গরুপাচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সেই কেষ্ট এখন কারাগারে বন্দি। ফলত অনুব্রতকে ছাড়াই তিনি বীরভূমে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরে বীরভূমকে দলের তরফেও কার্যত অনুব্রতহীন করে তোলা হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুনে থাকছে না অনুব্রত মণ্ডলের নাম বা ছবি। তার নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে। কেউ বলছেন, দল থেকে জেলবন্দি অনুব্রতকে ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হল। খোদ দলের প্রধান নেত্রীর উপস্থিতিতে সেই বার্তা দিয়ে দেওয়া হল। আবার একটি ব্যাখ্যা হল এই সফরকে ঘিরে যদি পোস্টার ব্যানারে অনুব্রতর ছবি রাখা হতো তবে তৃণমূল জেলার সভাপতির উপর প্রভাবশালীর তকমা লাগত। বিচারপ্রক্রিয়া যা তাঁর পক্ষে জটিলতা তৈরি করত। তা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ। তবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যাই হোক না কেউ পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রত উপস্থিত না থাকা বীরভূমের চলমান রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো বটেই।
ঝেড়ে ফেলার তত্ত্বটা আপাতত সরিয়ে রাখাই যেতে পারে। কারণ এখনও অনুব্রত বীরভূমের জেলার সভাপতি। ওই পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়নি। যেমনটা করা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। জেলবন্দি হওয়ার পর দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মহাসচিবের পদ থেকে। তার পক্ষে দলের কেউ গলাও ফাটাননি। উল্টে কেউ কেউ বলেছেন অন্যায় করলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। খোদ দলনেত্রী বলেছিলেন, বীরভূমের জেলা সভাপতি জেল থেকে বেরোলে তাঁক সংম্বর্ধনা দেওয়া হবে। পুর ও নগরোন্নমন্ত্রী ফিরদাহ হাকিম তাঁকে বলেছিলেন বীরভূমের বাঘ। তাই পোস্টার-ব্যানারে কেষ্টর ‘নাম ও নিশান’ না থাকার তত্ত্বটাই আপাতত জোরালো।
বীরভূমে কী কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক সেরে বইমেলার উদ্বোধনের পর বীরভূমে রওনা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারদিনের জেলা সফরে তিন জেলায় যাবেন তিনি। বীরভূমের সঙ্গে রয়েছে মালদা ও বর্ধমান। ৩০ তারিখ জেলায় পৌঁছেই জেলার, সাংসদ, বিধায়ক, ব্লক সভাপতি ও জেলা কোর কমিটির সদস্য মোট ৭০ জনকে নিয়ে তিনি একটি বৈঠক করবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রত হীন বীরভূমে যে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। জেলায় দলের মধ্যে ফল্গুধারার মতো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের স্রোত বইতো তা ‘দাপুটে’ জেলা সভাপতি না থাকায় তা ক্রমশ বেগবান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে নেতৃত্বেকে স্পষ্ট বার্তা দিতে পারেন দলনেত্রী। যা পঞ্চায়েত ভোটের আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশের সঙ্গে দেখা করতে পারেন মমতা। অমর্ত্য সেন বর্তমানে বোলপুরে রয়েছেন। তাই তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। যদি তিনি যান, তবে সম্প্রতি নোবেলজয়ীর সঙ্গে বিশ্বভারতীর বিবাদকে কেন্দ্র করে তা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বার্তা হবে। মাঝে তিনি মালদা যাবেন। পর দিন অর্থাৎ পয়লা ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরে এসে বোলপুরে ডাকবাংলোর মাঠে একটি প্রশাসনিক সভাও করবেন।
বীরভূমে বেশি বিক্ষোভের মুখে ‘দিদির দূত’
তথ্য বলছে বীরভূমেই বেশি বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূত’ রা। কারণ হিসাবে কেউ বলেছে, অনুব্রত না থাকাতেই মানুষ মুখ খুলছেন। সে কারণেই বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন তাঁরা। কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছে এলাকায় যাঁরা তৃণমূল বলে পরিচিত তাঁরাও ‘দিদির দূত’-এর কাছে সরকারি পরিষেবা না পাওয়ার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। রামপুরহাট, হাসন, মুরারই, নানুর— যেখানে যেখানে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ‘দিদির দূত’, সেখানে গত বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল।
আগে দলীয় কর্মিসভায় জেলা সভাপতির সামনে কেউ কেউ রাস্তা বা অন্য না পাওয়া বা অন্য সমস্যার কথা বলতেন। কিন্তু সেই সময় ‘শক্ত হাতে’ সেই অভিযোগ পরিচালনা করতেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর অভাব অনুভূত দিদির ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাস্তা বা অন্য পরিষেবা নিয়ে যাতে মানুষের ক্ষোভ না থাকে তা নিয়ে দলীয় নেতাদের সভায় এবং প্রশাসনিক সভার বার্তা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুব্রতহীন বীরভূমকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর আগামী বছর লোকসভা ভোট। তা আগে ওই জেলা সংগঠনকে জেলায় আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়েছে গেরুয়া শিবির। সেই দিক থেকে দেখলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এইবারের বীরভূম সফর দলের পক্ষে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাজ্য রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই।
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)