Home পাঁচমিশালি সেল্ফি মৃত্যু – পরোক্ষে কি আমরাও দায়ী ?

সেল্ফি মৃত্যু – পরোক্ষে কি আমরাও দায়ী ?

সেল্ফি মৃত্যু – পরোক্ষে কি আমরাও দায়ী ?
প্রথমেই সেল্ফি মৃত্যু সংক্রান্ত কিছু তথ্য দেখে নিই –
২০১৮ গ্লোবাল স্টাডি বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিশ্বে ১৩৭টি ঘটনায় সেল্ফি তুলতে গিয়ে ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের গড় বয়স ২২.৯৪ বছর । সেল্ফি সংক্রান্ত মৃত্যু ভারত, রাশিয়া, অ্যামেরিকা ও পাকিস্তানে তুলনামূলক অনেক বেশী ।
এছাড়াও ২০১৪ তে (তথাকথিত “ইয়ার অব দ্য সেল্ফি”র বছরে) ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন হিসেব করে দেখেছে যে যান চালানোর সময় সেল ফোন ব্যবহার করে ৩৩০০০ জন আহত হয়েছে ।
২০১৫ সালের সার্ভেতে এরিই ইন্সুরেন্স গ্রুপ খুঁজে পেয়েছে ৪% ড্রাইভারদের যারা স্বীকার করেছে যে তারা যান চালানোর সময় সেল্ফি তুলেছে ।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করেছে যে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের অগাস্ট মাস অবধি ভারতে সেল্ফি তুলতে গিয়ে কমপক্ষে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে ২০১৫ সালেই কমপক্ষে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
Image result for selfie death
ইন্ডিয়ান মিনিস্ট্রি অব ট্যুরিজম রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলো “সেল্ফি ডেঞ্জার” এরিয়াগুলো আইডেন্টিফাই করার জন্য এবং ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য যেটা সেল্ফি ডেথ আটকানোর জন্য প্রথম জাতীয় পদক্ষেপ ছিলো ।
একজন লোক সেল্ফি-টেকারকে বাঁচাতে ডুবে যাওয়ার পরে মুম্বাই পুলিশ কমপক্ষে ১৬টি “সেল্ফি ডেঞ্জার” জোন খুঁজে বের করেছিলো ।
তাছাড়া কুম্ভ মেলার উদ্যোক্তারাও কিছু জায়গাগুলোকে নো-সেল্ফি জোন হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছিলো ।
কিন্তু এতকিছুর পরেও তো সেল্ফি মৃত্যু হয়েই চলেছে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত ঝুঁকি (যে তুলছে তার কাছে হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে ঝুঁকি মনেই হয় না) নিয়ে সেল্ফি তুলছে কেন ? যে সেল্ফি মৃত্যুকেও হাতছানি দেয় বা দিচ্ছে তাকে বরণ করতেও পিছপা হচ্ছেনা কেন ?
আমরা প্রায় সবাই জানি এর কারণটা । ঠিক ধরেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার জন্য । ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের বাহবা কুড়নোর জন্য । প্রচুর প্রচুর বা প্রচুরস লাইক, কমেন্ট শেয়ার পাবার জন্য । একটু হটকে সেল্ফি দিয়ে নিজেকে ‘হিরো’ দেখানোর জন্য, তাতে ‘একটু ঝুঁকি’ নিলে আপত্তি কিসের ! সাধের প্রাণটা যে চলে যেতে পারে সেই চিন্তাই তখন কাজ করে না ।
Image result for selfie death
আসলে সেল্ফি ডেথ আটকানো একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় । আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত, শুভচিন্তক, সচেতন নাগরিক মনে করি, আমাদের এগিয়ে আসতে হবে ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আমরা এগিয়ে আসবো ?
আমরা এগিয়ে আসবো এই ঝুঁকিপূর্ন সেল্ফি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে নিজেকে ‘হিরো’ জাহির করার উদ্দেশ্যটাকে ব্যাহত করে ।
কিভাবে ?
কিভাবে বলার আগে একটু অন্য কথায় যাই ।
ইদানীং দেখছি খুব বেশী নাচার বা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করার ভিডিও বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এর ফলে দিনদিন তা বেড়েই যাচ্ছে ।
আসলে অল্পকিছু করে বা কাজের কিছু না করেও এই “সস্তার জনপ্রিয়তা” বিশেষত যুব সমাজকে বিপথগামী করছে বা বোকা করে রাখছে ।
কোন চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন হচ্ছে না, বিশেষ কাজও করতে হচ্ছে না, এমনিতেই “জনপ্রিয়তা” লাভ করার এই মানসিকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে খুবই পরিকল্পিতভাবে, যা খুবই দুঃখজনক ।
আমাদের এর থেকে বেরনো উচিত এক্ষুণি । এইগুলো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে আমাদের । সদ্য যুবদেরও বোঝাতে হবে, না হলে আসল কাজের মানুষ কমে যাবে দ্রুত ।
ঠিক এইভাবেই ঝুঁকিপূর্ন সেল্ফিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হয় । তারা যেহেতু কাজের কাজ কিছু করতে পারে না, কোন ভালো কিছু পোস্ট করতে পারে না, তাই সস্তার জনপ্রিয়তা পেতে এইগুলো পোস্ট করে ।
আমাদের দায়িত্ব থাকবে এই ঝুঁকিপূর্ন সেল্ফিগুলো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার না করে তাদের নিরুৎসাহ প্রদান করা ।
আরেকটি ব্যাপারেও আমাদের সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে, সেটা হলো ভালো পোস্টগুলোকে উৎসাহিত করা । সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধুমাত্র ভালো পোস্টগুলোকে উৎসাহিত করলেই ‘আজেবাজে’ পোস্টগুলো একটা সময় পরে কমে যাবে বা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারই বেশী মাত্রায় দেখা যায় । কেউ হয়তো একটা ছবি পোস্ট করলো । দেখা গেল ৮০০ লাইক পড়েছে । খুশিতে একটা ভালো কিছু পোস্ট করলো । এবার হয়তো দেখলো ১০টি লাইক পড়েছে । এবার তার মনে ক্রিয়া করতে শুরু করলো যে ভালো পোস্টে যেহেতু লাইক পাই না, তাই এগুলো আর দেবো না । তার মূল্যায়নে অবনতি দেখা দিলো । শুধুমাত্র লাইক পাওয়ার আশায় তার দৃষ্টিকোণে অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা দেখা দিলো ।
এবং এই পুরো ব্যাপারটির জন্য পরোক্ষভাবে হলেও আমরাই দায়ী নই কি ?
পরিশেষে, সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে সুন্দর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আগামীদিনে আমরা যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আরো সচেতন, আরো সতর্ক থাকার চেষ্টায় থাকি ।।
রাজা দেবরায়