Home পাঁচমিশালি চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজোতে মাতলেন সন্তানবতী হিন্দু নারীরা…

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজোতে মাতলেন সন্তানবতী হিন্দু নারীরা…

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজোতে মাতলেন সন্তানবতী হিন্দু নারীরা…

“আজি বাঁধিতেছি বসি সংকল্প নূতন  অন্তরে আমার ,

  সংসারে ফিরিয়া গিয়া হয়তো কখন  ভুলিব আবার।

তখন কঠিন ঘাতে এনো অশ্রু আঁখিপাতে  অধমের করিয়ো বিচার।
আজি নব-বরষ-প্রভাতে
ভিক্ষা চাহি মার্জনা সবার।”

Image result for নীল ষষ্ঠী

চৈত্রের শেষ আর গম্ভীরা -কে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে উৎসব আজ। পুরাণ প্রতীকী হয়ে ধরা দেয় শিবের পুজোর অর্ঘ্যপাত্র নিয়ে কিন্তু এই গম্ভীরা, চড়ক এমন নামের উল্লেখ নেই পুরাণে। এমনকি বর্ষক্রিয়াকৌমুদী, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণেও সেই উল্লেখ নেই। সম্প্রদায় ভিত্তিক বিভাজনে উচ্চ স্তরের সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পুজোর চল নেই বললেই চলে, তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে এর চল ব্যাপক।

Image result for নীল ষষ্ঠী

এখন প্রশ্ন কে প্রথম করেন এই পুজো? আর কেন ই বা এই পুজোর প্রচলন! সত্যিই কি এ বাণীটি যথার্থ! ” নীলের ঘরে দিয়ে বাতি, জল খেয়ো গো পুত্রবতী। ” আগে না হয় প্রচলন টাই বলি। চড়ক পূজার এক অঙ্গ নীল পূজা। সন্তানের মায়েরা সন্তানদের উদ্দেশ্যে মঙ্গলকামনায় এই পূজা করেন। আর বিশ্বাস যে নীল হলো মা ষষ্ঠী, আর তাই শিবের মাথায় জল ঢেলে, বাতি জালিয়ে মায়ের আরাধনা করা হয়।

সন্তান আর সংসারের মঙ্গলার্থেই এইকামনা। এইদিন কায়স্থদের ঘরে ধান লক্ষ্মীর পূজা হয়।উপাচারে ফল, মূল সহযোগে এই পূজা পরিসমাপ্ত হয়। আর এই দিন বাবারর মাথায় জল না দিয়ে কখনই মায়েরা জল খান না। সেদিন কেবলই ফল, মিষ্টি প্রসাদ আকারে গ্রহণ করতে হবে। তবে সবটাই সংস্কার আর আয়োজনের শরিকি।

এবার আসি চড়কের প্রচলনে :

সময়টা ১৪৮৫, রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর  এই পূজো প্রচলন করেন। কিন্তু এই যে বললাম রাজা রাজাদের পূজা নয় – আসলে যেমন করে চাঁদ সদাগরের সেই বাম হাতে ছুঁড়ে দেওয়া ফুল মনসার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনের বাহক হয়েছিল, অনুরূপে নীল পুজো। আর সচেতন করতে আছে বাঙালী সংস্কৃতির সেই সংস্কারের নিত্য কর্ম পদ্ধতির পাঁচালী। মায়েরা তার বাচ্চাদের সুখী আর সুস্থ রাখতেই এই পূজা করেন।

এই দিনের বিশেষ আকর্ষণ “চড়ক পূজা “। আগের দিনে নিকানো গাছ আর তার উপর এক পাত্র। যেখানে শিবের প্রতীকী করে পূজা করা হয়। আর পূজোর দায়িত্বে থাকেন প্রধান পুরোহিত। আর এই পূজার শিবকে বুড়োশিব বলে চিহ্নিত করা হয়। আর বাবার মানসিকী পূরণ করতে চলে আগুনের উপর দিয়ে হাঁটা, জিভ ফুটো করে ঝাঁপ, বাণফোঁড়া ইত্যাদি। এই নৃশংস ক্রীড়া অনেকটাই কৌম জাতির নরবলি তুল্য, তবু সংস্কার পূরণ আর মানুষ বলে প্রত্যাশা নেই তাই জীবন পূর্ণ।এখানে প্রত্যাশা তাই জীবনের চলন আর দ্বন্দ্বে অজ্ঞতার প্রতারণা।

একজন করে শিব আর দুইসখী নিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে ভিক্ষা আর তা দিয়ে পুজো। তবে এখানেই আবদ্ধ নয়, আর নীলের সাথে ফল পূজা, কাদা পূজো ইত্যাদি। আর এইদিন যারা সন্ন্যাস নেন তাঁরা উপোস করেন আর সারারাত না খেয়ে পরের দিন উপোস ভাঙেন। তবে শিবকে তুষ্ট কররে উপাচারে সন্ন্যাসীরা নরমুণ্ড নিয়ে তাতেই সেবন করে। এমনকি সংস্কারের বাতি জ্বেলে বাবার গাজন যেন ঘরে ঘরে উৎসবের রাস। বাংলাদেশেও সাধারণ কৃষিভিত্তিক স্থান গুলিতে এই উৎসব দেখা যায়। আর পশ্চিমবঙ্গে পুরাতনের পরিসমাপ্তি আর নতুনের জয়ধ্বনি আর নতুন উদ্যোমে খাতা সারাই, আর উচ্চারণে –” হে নূতন,
                দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ ॥ 
                তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন 
                               সূর্যের মতন। 
                রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন। 
                         ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
                ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়। “

Image result for নীল ষষ্ঠী

এই পূজা এক নতুন দিনের উন্মোচনের সূত্রপাত করে। কারণ সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ পুষ্ট আধ্যাত্ম এক হয়ে কোথাও নিবেদনের সুরে,আগামীর আহ্বানে রবি কবির ভাষায় –

আজিকে ভোর-ঊষায়, বর্ষপরিক্রমায় নেমে এলো, এলো বৈশাখ !
শুরু হলো চারুকলায় শুভ মঙ্গলযাত্রা, বৈশাখী উষ্ণতায়……
বাঙালি জীবনে, পরতে পরতে উথলি উঠেছে, জীবনের ছন্দ
ঢাকডুমাডুম ডুমডুম ঢোল, রংবেরঙ পরিচ্ছদের বৈশাখী উচ্ছ্বাস…

Related image

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here