আজব-ভাবনা (৩) :রসে তোমায় চোবাবো না "দেখোতো মা, রান্নাটা ঠিক হলো কিনা ?" ভারতীয় সময়ের হিসেবে তখন সকাল, কিন্তু সময়ের নিরিখে চীন তো আড়াই ঘন্টা এগিয়ে । এখন গুগল স্মেল, গুগল ফীল আর গুগল টেস্টের যুগে, জলপাইগুড়ির শান্তিপাড়ায় বসে শাশুড়ী মায়ের এক মিনিট লাগলো , চিনের জিনানে থাকা বৌমাকে গাইড করতে। ব্যাপারটা খুবই সহজ , এখন রান্নার ছবির সাথে তার প্রকৃত স্বাদ গন্ধও পাঠিয়ে দেওয়া যায়। ছেলের বউ চীনে হলেও বাংলাটা বেশ ভালো জানে। যে বার প্রথম দেখা হয়েছিল সেবার বেনু দত্ত রায়ের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়ে অবাক করে দিয়েছিলো । "গন্ধ তো ঠিকই আছে, বাবাই নুনটা একটু কম খায়।" প্রথম যেদিন রূপমায়া সিনেমা থিয়েটারে , জলপাইগুড়ির ড: বুধাদিত্যের আবিষ্কৃত, শব্দ, আলোর সাথে মিশিয়ে স্বাদ - গন্ধ যুক্ত ছবি 'রসে তোমায় চোবাবো না' দেখানো হলো , সেদিন সে কি উত্তেজনা ! রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব শ্রীমতি সংযুক্তা রায় , নিঃস্ব ব্যাঙ্কের প্রধান নোবোমা তো ছিলেনই , বৈজ্ঞানিক স্বয়ং ছিলেন। দৈনিক জনমতের সমালোচক ছিদ্রান্বেষী বক্সী লিখলেন, "স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, এক অপূর্ব সৃষ্টি ।" এখন এসব ফিচার ছাড়া মোবাইলই হয়না তা নয় , তবে উত্তর বঙ্গে তো ভাবাই যায়না। এখন প্রেমিকাকে তাজা লাল গোলাপ পাঠালে , তার সাথে ভালোবাসার সুগন্ধ , আলতো ছোঁয়া , সব পৌঁছে যায়। ভালোবাসা পৌঁছানোর প্রযুক্তি এখনো তৈরি হয়নি। জলপাইগুড়িতে আজও মহালায়ায় সারারাত বাজির আলো দেখা যায় , আওয়াজ পাওয়া যায়। আজও লোকে মহালয়ার সকালে রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনে , সেই আশ্বিনের শারদ প্রাতে , সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র , সাথে ধুপ- ধুনো- ফুলের গন্ধ, মায়ের প্রসাদের স্বাদ নেহাতই বাড়তি পাওনা। দেবব্রত সান্যালঃ ০১/০৬/২০১৭