আমার চোখে রবীন্দ্রনাথ :-- বৈশাখী চ্যাটার্জী রবীন্দ্রনাথ -সেই ছোট বেলায় সহজপাঠে রবীন্দ্রনাথ এর সাথে প্রথম পরিচয় -'ছোট খোকা বলে অ আ শেখে নি সে কথা কওয়া 'এরপর বড় হতে হতে আরও যত তার কবিতা -গল্প -নাটক পড়তে শুরু করলাম ততই কেমন যেন একটা টান জন্মাল--,কেমন যেন প্রেমে পড়ে গেলাম আমার প্রথম প্রেম রবীন্দ্রনাথ । হা তাঁকে দিয়েই শুরু হয় অনুভুতিগুলো -শিহরণ জাগানো এক কবি ,আনন্দ -দুঃখ -বৃষ্টি -ঝড় -আকাশ -বাতাস -পাখি -গান সব কিছুতেই কেমন আমার সঙ্গী হয়ে গেলেন এই বিশ্বকবি - প্রথম প্রেমের পুরুষটি যখন জীবনে উঁকিঝুঁকি মারছে দেখি কত কবিতার ডালি -কত গান নিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয়বন্ধু রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ।আবার যখন মন ভাঙ্গনের দিনে একলা বসে কেঁদে চলেছি -তখন ও সেই রবীন্দ্রনাথ ।আসলে কবিগুরু আমাদের সবার জীবনের সবখানটিতে বর্তমান ।তাঁকে চেনা খুব সহজ না হলেও তিনি কিন্তু আমাদের মনের কবি -মন যা চায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যভান্ডারে সেই সবটুকুই রেখে গেছেন । যদি রবীন্দ্রনাথ আর প্রেম নিয়ে আলচনা করি তবে তাঁর অন্যতম উপন্যাস শেষের কবিতার কথা না বলে পারি না -অমিত -লাবণ্যের এক অমর প্রেম তৈরি করে গিয়েছিলেন শিলং পাহাড়ে ,আবার যদি অবৈধ প্রেমের কথা দেখি -তবে চোখে পড়ে চোখের বালি। ত্রিকোণ প্রেম- চতুষ্কোণ পরিমন্ডল -দ্বন্দ -মানসিক আবর্তনের নানা দিক খুঁজে পাই তাঁর কাব্যে --আবার দেখি ঈশ্বরকে যেন তিনি একেবারে কাছ থেকে উপলব্দি করেছিলেন -তাঁর পূজা ছিল তাঁর গান, পূজা পর্যায়ের গানগুলি আমাদের যেন ঈশ্বরকে বুঝতে সাহায্য করে -ঈশ্বর উপলব্ধি আরও বাড়িয়ে দেয় । রবীন্দ্রচরিত্র সমালোচনা করতে গিয়ে প্রথম নজর যায় প্রেমিক হিসেবে কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ -কাদম্বরী প্রসঙ্গ বাদ দেয়া যায় না -বউঠান -কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দনাথের কাব্যোকাশের ধ্রুবতারা --মৃণালিনী দেবী তাঁর স্ত্রী ছিলেন,- বিবাহিত জীবন আর সহধর্মিণী এ- ব্যপারে রবীন্দ্রনাথ চিরকাল নীরব থেকে গেছেন -এছাড়াও রবীন্দ্রজীবনে প্রেম এসেছে বার বার আর সেই প্রেম- মিলন -বিরহ রবীন্দ্রকাব্যের উৎকর্ষ এর পিছনে অনেকটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। রবীন্দ্রজীবন আলোচনা করলে দেখতে পাই -মৃত্যুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাত হয়েছে বার বার খুব কাছ থেকে ,--স্ত্রী -পুত্র -বৌঠান একের পর এক প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন তিনি ,--জীবন দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত জীবন ও কাব্যে -জীবন সম্পর্কে যে দর্শন উপস্থাপিত করে গেছেন -সেখান থেকে যা উপলব্ধি করি সেটা হল -জীবন প্রেমেরই সেখানে বেদনা অনস্বীকার্য ,-বিশ্বাস মানুষকে উন্নতির সেই শিখরে নিয়ে যায় যেখান থেকে পৃথিবী কে স্বর্গ মনে হয় -ভরসা আর বিশ্বাসই যে জীবনের একমাত্র পাথেয় -তাঁর উপলব্ধি থেকে সেকথা বার বার উপলব্দি করেছি ।বলেছিলেন 'নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই হবে '-এক অদ্ভুত ধৈর্য্য রবীন্দ্রনাথেরা জীবনে চোখে পড়ে --কোন পরিস্থিতিতেই বিচলিত হননি তিনি আর বাকিদেরও এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন বার বার তাঁর সমস্ত রচনার মধ্যে দিয়ে ।-তিনি ছিলেন অতি আধুনিক চিন্তা ভাবনার কবি । রবীন্দ্রনাথের মত এক সমুদ্র ব্যাক্তিত্ব আলোচনায় শেষ করা সম্ভব না -খুব ছোট্ট করে আমার চোখে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম -কবি তোমাকে প্রণাম ।।
২৫ শে বৈশাখ, ১৪২৪