[ad_1]
শহরের সুযোগ-সুবিধায় মোড়া আধুনিক গ্রাম। জাস্ট এক বছরেই বদলে গিয়েছে চালচিত্র। গ্রামে থেকেও আধুনিক জীবন যাপন করছে মানুষ। দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ। কিন্তু সম্ভব হল কীভাবে? কোন ম্যাজিকে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাল এই গ্রামের মানুষ? বিশ্বে নজর কাড়ছে বাংলাদেশের স্মার্ট ভিলেজ হিজলী। অজ পাড়া সাজছে আধুনিকতার রঙে।
হিজলী গ্রাম রয়েছে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলায়। একটা সময় এই গ্রামের মানুষ ছিল ভীষণ দরিদ্র। ঋণ নিয়ে চলত কাজকর্ম। সাপে কাটলে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হত ওঝার কাছে। যে বয়সে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই বয়সেই বসানো হতো বিয়ের পিঁড়িতে। মাত্র ১ বছরে আমুল বদলে গিয়েছে সেই চালচিত্র। এখন গেলে চিনতে পারবেন না। এই গ্রাম হার মানাবে বড় বড় শহর গুলোকে।
২০২০ সালের জরিপ বলছে, হিজলী গ্রামে শিক্ষার হার ছিল ৫০শতাংশ। বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে ছিল প্রায় ২০ জন মেয়ে। নারীদের হাতে সেভাবে কোন কাজ ছিল না, অথচ সংসারে ছিল প্রচুর অভাব। ঘরে বসে দুশ্চিন্তায় কাটত দিন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম। অসুস্থ হলে পড়তে হত দালালদের খপ্পরে। খেলার মাঠ থাকলেও তা ভরা ছিল জঙ্গলে। এখন গেলে দেখতে পাবেন খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামের শিশু থেকে যুবকরা। চিকিৎসা পেতে আর হয়রানি হতে হয় না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এনজিও প্রতিনিধি, সরকারি দপ্তর, স্কুল শিক্ষক এবং জনপ্রতিনিধিরা।
কাজটা কিন্তু অতটাও সহজ ছিল না। সবটাই হয়েছে সুষ্ঠু পরিকল্পনায়। জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কিছু কর্মকর্তা মিলে প্রথমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে। সেগুলোর সমাধান করতেই সুফল দেখছে গোটা বাংলাদেশ। গ্রামটিতে প্রায় ৩৩৪ টি পরিবারের বাস । জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের কাছে। যাদের মধ্যে বড় জোর ৪৫ থেকে ৫০ জন চাকরিজীবী। বাকিরাও কিন্তু বসে থাকে না। স্বাধীনভাবে কেউ করেন ব্যবসা, আবার কেউ যুক্ত রয়েছে কৃষিকাজে। গ্রামের রাস্তায় বা বাড়ির বাইরে কোন আবর্জনা দেখতে পাবেন না। বসানো আছে ডাস্টবিন। হিজলী গ্রামে ঘুরতে গেলে মনে হবে না সাধারণ কোনো গ্রাম। গ্রামের কাছেই রয়েছে বাঁওড়। যেখানে দাঁড়ালে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। মনে হবে, দু’দন্ড দাঁড়িয়ে একটু বিশ্রাম নিই।
যে গ্রাম ছিল একসময় সন্ত্রাসীদের আখড়া, এখন সেই গ্রামে অপরাধ মুক্ত। পাশাপাশি চলছে অবকাঠামগত উন্নয়ন এবং নানামুখী প্রশিক্ষণ। গোটা বাংলাদেশের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে গ্রাম। শুধু তাই নয়, পিছিয়ে পড়া বহু গ্রাম দেখে শিখবে কিভাবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমূল বদলে ফেলা যায়। আসলে গ্রামের মানুষগুলো হাল ছাড়েনি। ভরসা রেখেছে নিজেদের পরিশ্রমের উপর। এখন গ্রাম জুড়ে যেন চলছে কর্মযজ্ঞ। কেউ বসে নেই। গ্রামের মহিলারা সুই সুতো দিয়ে অপূর্ব নকশার কাজ করছেন। সমস্ত পণ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে ঢাকায়। গ্রামের মানুষরা যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, যাতে ভাতা সমানভাবে পান তার জন্য রয়েছে বিশেষ স্মার্ট কার্ড। আগে গ্রামে কোন ক্লাব ছিল না। এখন একটা ক্লাব হয়েছে। সেখানে নিয়মিত খেলা ধুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আশ্চর্যের ব্যাপার, এই গ্রামটার সাথে জেলা বা উপজেলা শহরের সরাসরি কোন সড়ক পথ নেই। গ্রামের তিনটে বাড়িতে রয়েছে বায়ো গ্যাস প্লান্ট। দ্রুতগতির মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য রয়েছে নতুন টাওয়ার। এছাড়াও রয়েছে মডেল ফার্মেসি সহ আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ। প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করা হয় টিউবয়েলের আর্সেনিক। মহিলাদের জন্য রয়েছে স্মার্ট মহিলা ক্লাব। এভাবেই বাস্তবায়ন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ পরিকল্পনা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়