[ad_1]
জলপাইগুড়ি: চারপাশে শুধুই ঘন জঙ্গল। ভেতর থেকে কখন যে হাতি বা বুনো শুয়োর বেড়িয়ে এসে আক্রমণ করবে তা কেউ জানে না। গোটা জীবনটাই অনিশ্চয়তায় ভরা। মা-বাবা চা বাগানের সামান্য শ্রমিক। দিন আনি দিন খাইয়ের থেকেও খারাপ অবস্থা। প্রতিটা দিন বেঁচে থাকা মানে অভাবনীয় সংগ্রাম। এই লড়াইয়ের বীজ ওরা রাগবি বলটার মধ্যে বপন করেছে। জীবনের এই সংগ্রাম মাঠে ওদের হাত ধরে সত্যিই হয়ে ওঠে। আর তাই প্রত্যন্ত চা বাগানের এই মেয়েরা প্রতিপক্ষকে ডজ করার মতোই পক্ষপাতমূলক সমাজকে হেলায় কাটিয়ে মাঝেমধ্যেই পাড়ি দিচ্ছে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর। জলপাইগুড়ির চা শ্রমিক পরিবারের এই মেয়েরাই এখন ভারতীয় রাগবি দলের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক!
আরও পড়ুন: অভিনব কায়দায় সেজে উঠেছে রাজমাতার নামের বিদ্যালয়, কমেছে স্কুল ছুটের সংখ্যা
জলপাইগুড়ির সরস্বতীপুর চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের একদল মেয়েকে নিয়ে এমনই রূপকথা রচনার কাণ্ডারী যিনি তাঁর নাম রোশন খাকরা। তিনিও এই সরস্বতীপুর চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলে। তবে রোশনের রাগবি প্রেমের সামনে কোনও কিছুই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। তিনি দীর্ঘদিন কলকাতায় থেকে রাজ্য মহিলা রাগবি দলের কোচের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর হাত ধরে উঠে আসে দেশের একের পর এক রাখবি তারকা। ২০১৩ সালে রাজ্যের দায়িত্ব ছেড়ে নিজের এলাকায় ফিরে আসেন রোশন। সরস্বতীপুর চা বাগানে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ফিরে এলেও প্রথমদিকে তাঁর অবস্থা ছিল অনেকটা ঢাল-তরোয়াল ছাড়া নিধিরাম সর্দারের মতো। তবে হাল ছাড়েননি। আজ তারই ফল পাচ্ছেন এই রাগবি কোচ।
জঙ্গল ঘেরা চা বাগানের মেয়েদের নিয়ে শুরু করেন রাগবি প্রশিক্ষণ। যা আগে এলাকার কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। খেলো রাগবি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সামান্য সাহায্যে টুকু ছাড়া তাঁর আর কিছুই সম্বল ছিল না। নিজের সংকল্পের প্রতি এই কোচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকায় অচিরেই আদিবাসী পরিবারের মেয়েগুলির প্রতিভা ফুটে বেরতে শুরু করে। এই মুহুর্তে সরস্বতীপুর চা বাগান থেকে ১১ জন মহিলা রাগবি খেলোয়াড় দেশ এবং বিদেশের মাটি কাঁপিয়ে খেলছে। খেলার জন্য বিদেশ সফর তাদের কাছে এখন জলভাত হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে তারা রাগবি দলের সঙ্গে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফ্রান্স সফর করে এসেছে।
তবে রোশন খাকরা এখানেই থেমে যেতে চান না। আগামী দিনে তিনি জলপাইগুড়ির আরেকটি জনপদ ওদলাবাড়ির মেয়েদের জন্য সেখানে রাগবি প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। রোশনের হাত ধরেই উঠে এসেছেন রিমা ওঁরাও। যিনি বর্তমানে অনূর্ধ্ব ১৫ ভারতীয় মেয়ে রাগবি দলের কোচ। অতি সম্প্রতি দলের মেয়েদের নিয়ে ফ্রান্সে খেলতে যাওয়ার কথা রিমার। সেখানে দেশের তেরঙ্গা পতাকা মাথার উপর তুলে ধরার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চা বাগানের এই উজ্জ্বল রত্ন।
সুরজিৎ দে
জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি
Tags: Jalpaiguri News, Sports