Home ব্লগবাজি টিচার ~ নীল অভিজিৎ

টিচার ~ নীল অভিজিৎ

টিচার    ~   নীল অভিজিৎ

টিচার
-নীল অভিজিৎ-

***************************

 

[ এই ছোট্ট গল্পটির সকল চরিত্রই কিছু বাস্তব ও কিছু কাল্পনিক এবং সামাজিক কিছু
ঘটনার আধারে লেখা ]

উর্মিলা খান, প্রয়াত মেজর বিক্রম মুখার্জীর বড় মেয়ে, বয়স ৩৮ কনভেন্ট পাস আউট,
চোস্ত ইংরাজি প্রনাউসিয়েশন ভাইটাল স্টাট ৩৮-৩৪-৪০, হা হা হা… উর্মিলার নিজের
হাসি পায়, লোয়ার পোর্শান চিরদিন হেভি ছিল ইদানিং আপার পোর্শনও একটু হেভি হয়ে
গেছে, বয়সের সাথে স্টাট বরাবরই প্যারালালি ফলোয়াপ করে, এখন জিম আর ডায়াটিং
বয়সের কাছে হার মানে । শাড়ি কোনদিন পরে না, কলেজ লাইফ থেকেই জিন্স স্কার্ট
পেনসিল হিলে অভ্যস্ত । খান পদবিটা না নিলেও চলত, অনেকটা উর্মিলার ইচ্ছা করে নাওয়া
। কেতন খানকে ভালোবেসে বিয়ে? না ঠিক তা নয়, উর্মিলা বাচ্চা-টাচ্চার খুব একটা
পক্ষপাতি না, জীবনটা বেশ চওড়া হোক, আদিল সেখ্ কিছুতেই নিজের নামটা উর্মিলার
সাথে জড়াতে চায়’না, আপার ক্লাস অফ মুসলিম সোসাইটিতে বিলংগিং টুডেস্ জেনেরেশন,
কিন্তু কন্ডোম ফন্ডোম ব্যাবহার পোষায় না, উর্মিলা দু-দুবার প্রেগনেন্ট হওয়ার
পরে একটু ঝেমেলায় এ্যবর্শন করাতে হয়, আদিল আর রিস্ক নিতে চায় না, অন্যভাবে
দেখলে উর্মিলার অনেকটা নিজেকে বাঁচানোর জন্যে, তা না হলে বার-সিংগারদের
মধ্যরাত অবধি এ’লাইনে কাজ করা মুশকিল । আসলে এই লাইনটা এরকমই, এখানে ব্যাচেলার
হলে, যত উটকো ঝামেলায় ফাঁসতে হয় । কেতন খান রেস্পন্সেবিল ট্রিংকাস ফ্লোর
ম্যানেজার, মুসলিম ইনফ্লুয়েনশিয়াল লবি ওর হাতে, পার্ক স্ট্রিট থেকে পাকসার্কাশ
পর্যন্ত এলাকা এক-ডাকে ওকে সবাই চেনে, রোজকার ফ্লোরের মাঝারি বা ছোটখাটো
ঝামেলা মারামারি সামলানোর দায়িত্ব ওর । কেতন খানকে বিয়ে করাটা সেজন্যেই, উর্মিলার
অনেকটা অবশানাল হয়ে পড়েছিল, শেষে আদিলের উপদেশে এই এগ্রিমেন্টটাই বেছে নিয়েছিল
। সে জন্যে, আদিল সাউথ ক্যালকাটায় নিজের প্রডাক্টের একটা ডিলার সিপ্ কেতনকে
দিয়েছিল, থাক সে কথা ।

উর্মিলা ট্রিংকাস লাউঞ্জে উঠে দাঁড়িয়ে মাইক্রফোনে একটু ফুঁ-মাড়লেই হাজার ক্লাপে
ফ্লোর ফাটে, কে জানত স্কুল লাইফের শেখা প্রাথমিক হিন্দুস্থানী ক্লাসিকাল একদিন
নিজেকে বাথরুম সিংগার থেকে শেষে স্টেজ পপ্-সিংগারে দাঁড় করাবে ? উর্মিলার এই
লাইফে আশা, অনেকটা অযাচিত অনুগ্রহ, ছোট্ট বোনটা বাদে সবাইকে হারায়, লরেটো
কনভেন্ট কলেজ ফাইনাল ইয়ারের তখন, পড়াশোনা সবকিছু গোল্লায় দিয়ে উর্মিলা, আদিল সেখ্
এর প্রেমে হাবুডুবু, আর ছয়মাস ধরে লোকটার সাথে লিভটুগেদার করার পর‘যে
এরকম হবে, তা আনবিলিভেবল । নিজের বললে বোন ছাড়া কেই’বা আছে ? মম, বাবিন
দার্জিলিং থেকে ফেরার পথে সেই বীভৎস এক্সিডেন্টে মারা যাওয়া এবং তারপর
উর্মিলার জীবনের বিরাট শুন্যতা থেকে প্রেরণা যা’কিছুই ছিল, তখন একমাত্র
আদিল । আর সেই আদিলের হাতে ধরে অম্বর, গ্লুফক্স, ট্রিংকাস চেনা ।
মধ্যরাত পর্যন্ত পার্কস্ট্রিট্ কাটানো, শেষটুকু আদিলের ফ্ল্যাটে নিজেকে
নতুন করে ভাবতে শেখা । হু, বদার… জীবন স্রোতে আদিলের শক্ত কাঁধে ভর
করে চলতে শেখাটা, তখন অনেকটা ভাগ্যের সাথে প্রথম পরিচয়ের মতো । ঠিক
যেন বিশাল
শূন্যতার মাঝে এক পূর্ণতা লাভ । আদিলদের সেখ্-এন্ড-সন্স্ এর বিভারেজ প্রডাক্ট
্ শুধু কলকাতা কেন, সাড়া ভারতে তখন দাপিয়ে বেরাচ্ছে । আর আদিল যেন সকল
প্রাচুর্যের মাঝে একটা ব্লাংক চেক-বুক । কে জানত, হি ইজ মেরেড গ্যাই ? আর
জানলেই বা খুব বেশী পার্থক্য হতো কি ? ব্যাপারটা আদিলের বাবাও একটু আধটু
জানত, কিন্তু সব কেঁচে গেল, আদিলের বউ শীতল সেখ্ এর জন্যে, শুনেছিল ওর
বাবা নাকি মুম্বাই এর একজন প্রফাউন্ড ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট যার হাত পৌঁছে যায়
সি-এম লেভেল পর্যন্ত । হটাৎ করে মুম্বাই থেকে কোন এক সূত্রে খবর পেয়ে হুঁট করে
একদিন বাড়িতে এসে চড়াও হওয়া, আর অপমান করে সেদিন ফ্রিস্কুল স্ট্রিটের আদিলের
ফ্যাট থেকে উর্মিলাকে বের করে দাওয়াটা, আজও ভোলা যায় না । উফ্ কি ভীষণ
অসহায় অবস্থা তখন ! শেষে ট্রিংকাস ফ্লোর মেনেজার কেতন খানকে ফোন করতে
হয়েছিল, কেতন ট্রিংকাসের স্টাফ রেসিডেন্সের একটা রুম মেনেজ করে দিয়েছিল ।

মিসেস জুলির সাথে পরিচয় করে নেওয়া, পিয়ানো প্লে অ্যান্ড সিংগিং শুরু করা যেন নিজের
পায়ের তলায় মাটি খোঁজার সমান । জুলি তখন ফ্রিস্কুল স্ট্রিটের আদিলের ফ্যাটের
পাশে একটা পুরানো বাড়িতে ছোট্ট ঘর ভাড়া করে ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকত, সিনিয়ার
ভেটারেন বার-সিংগার, আদিলের রেফারেন্সই হোক না কেন, কিন্তু খুব যত্ন নিয়ে
উর্মিলাকে পিয়ানো আর ওয়েস্ট্রান ক্যাসিকাল শিখিয়েছিল, বলতো ইউ আর
ব্রিলিয়ান্ট, লাইক
মাই এল্ডার ডটার, শুনেছিল বড়মেয়ের চিকিৎসার পিছনে জুলি ফতুর হয়ে যায়, পনের বছর
বয়সে লিউকেমিয়ায় মারা যায় । আল্টিমেটলি আদিলের স্পেশাল রেকমেনডেশন আর নিজের
ভয়েস কাম লুক্সে, পুরি ব্রাদার্স অফ ট্রিংকাস রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট
লিমিটেডকে উর্মিলা
সেদিন হেলিয়ে দিয়েছিল, তাই সহজেই ট্রিংকাসে রেগুলার সিংগার হিসাবে এন্ট্রি
পেয়েছিল । যাইহোক এ’লাইনে বেশ পয়সা আছে, তবুও কয়েক বছর উর্মিলাকে স্ট্রাগল
করতে হয়েছিল, কিন্তু খুব বেশী দিন অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়নি । মুম্বাই ফিলিম
থেকে হটাৎ করে সিংগিং অফার, আর পরপর দুটো গান হিট করা, বাজারে তখন ইয়ংদের
মুখে-মুখে
। তারপর ভাগ্য চড়চড় করে উপরে উঠতে থাকে । এখন কে না চেনে উর্মিলাকে, এই শহর
কলকাতায় ? ও এখন একজন এস্টাব্লিস্ সিংগার কাম একট্রেস্, ছোট-এড আর বাংলা
ফ্লিমের ছোটখাট নায়িকাও বলা যায়, কোন স্পেশাল প্রোগ্রাম থাকলে হোটেল পার্ক, ওবেরয়
থেকে প্রায়ই রিকুয়েস্ট আসে । এসবই ইনডাইরেক্টলি আদিল ওর বাবাকে দিয়ে
করিয়েছিল, অবশ্য
ওই টুকু প্লাটফর্ম না’পেলে আজকাল এ’লাইনে নিজেকে এস্ট্যাবলিস্ করাও শক্ত ।
উর্মিলা জানে, আদিল ওর রূপ আর ব্যক্তিত্বের কাছে বিড়াল হয়ে যায়, সেজন্যে তার
ফায়দাও উঠিয়েছে, বোনকে দেরাদুনে ওয়েলামস্ স্কুলে ভর্তি করান থেকে হোস্টেল
খরচা সবকিছুর ব্যাবস্থা আজ আদিল করে দিয়েছে, এমন কি টাকা পয়সার ব্যাপারে কখন
চিন্তা করতে হয়নি । যাইহোক ছেলেটার কথার দাম আছে, আদিল হেল্প না করলে কলকাতার
ইস্টার্ন বাই পাসের উপর, আম্বুজা দশতলায় চোদ্দশো স্কোয়ার ফুটের নিজস্ব একটা
ফ্ল্যাট পাওয়া অসম্ভব ছিল, সম্পূর্ন টাকাটা তখন আদিল ইনভেষ্ট করেছিল, ভীষণ
লজ্জা লেগেছিল উর্মিলার, বারবার আদিলকে রিকুয়েস্টও করেছিল, এটলিষ্ট দুজনের
নামে জয়েন্ট প্রপার্টি কর, কিন্তু আদিল ওসব ঝামেলায় যেতে চায়’না, সোজা
উর্মিলার নামে করে দিয়েছিল । আদিলের একটাই প্রবলেম, ওর বউ শীতল, যাক ওটা ওর
একান্তই পার্সোনাল, ওখানে উর্মিলা কোনদিন ঢুকতেও চায়’না । বেশ আছে, মাঝে মধ্যে
কেতন আসে, দেখাশোনা করে, কখন কি লাগবে ? খোঁজ খবর করে যায়, সপ্তাহে একবার করে
ফোনে জিজ্ঞাসা, ব্যাস ওটুকুই । বাকি সম্পূর্ন জীবনটা ঘিরে আছে আদিল ।

ইদানিং উর্মিলার হাতে নতুন প্রজেক্ট, আদিলের বাবার প্রডাকশনে মুম্বাই
কলকাতা ফ্লিম
ইন্ডাস্ট্রিস, মিলেমিশে কাজ, সিটি অফ্ জয় এর, বার সিংগারদের নিয়ে একটা ভালো
বাংলা গল্পের উপর “টুঁটে সিতারো” যার বাংলা ভার্শনের নাম “ছিন্ন বীনা” ।
বুদ্ধিটা উর্মিলাই প্রথমে আদিলকে দিয়েছিল, তাই কলকাতা কোয়ার্ডিনেশনের
সম্পূর্ণ চাপ উর্মিলার উপর এখন এসে পড়েছে, আজ কলকাতা থেকে মুম্বাই সকালে উড়ে
আসতে হোল, এয়ার পোর্ট ট্যার্মিনাল থেকে বেরনোর সাথে সাথেই, কলকাতা
আম্বুজা-হাউজিং কমপ্লেক্সের সিকিউরিটির ফোন, ম্যাডাম আপনার সাথে একজন মহিলা
দেখা করতে চায় । কি নাম ? উর্মিলা জানতে চায়, একটু ধরুন দেখছি, রেজিস্টারে এন্ট্রি
দেখে সিকিউরিটি জানায় মিসেস জুলি । উর্মিলা উত্তর দেয়, আমি’তো এখন কলকাতার
বাইরে আছি ওকে দুইদিন পরে আসতে বল । এরপরে প্রায় ছয় মাস কেটেছে ডুএল ভার্শন
ছবির প্রিমিয়ার শো এর ব্যস্ততায়, একটা সপ্তাহ নিশ্বাস ফেলার সময় পাই’নি, চার
দিকের ফোন এটেন্ড আর কোয়ার্ডিনেশন ঝামেলা ইত্যাদিতে উর্মিলা যেন হাঁপিয়ে উঠেছে,
ভাবাই যায় না বক্স অফিসে দুইশ কোটি টাকার সাফল্য । আজ নিজেকে অনেকটা ফ্রি মনে
হচ্ছে, আর কোথাও বেরতে ইচ্ছা করেছে না । আদিলের বাবার গিফটেড্ শ্যাম্পেনের
বোতলটা খুলে আজ নিজেকে সব হই হট্টগোল থেকে দূরে রাখবে, শুধু একলা রেস্ট নেবে ।
সব সময়ের কাজের মেয়ে মিনাকে বলে দিয়েছে কেউ যেন ফোনে ডিস্ট্রাব না করে ।

এরই মধ্যে বাইরে থেকে নক করে মিনা ঘরে এসে বলল, ম্যাডাম আপনার সাথে দেখা করতে
একটা একটা মেয়ে এসেছে, গেটের বাইরে অপেক্ষা করছে । উফ্ উর্মিলার জীবনে
শান্তি নেই যেন, উত্তর দিল, কে এসেছে ? ঠিক আছে, ড্রইং রুমে বসাও আমি যাচ্ছি
। নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে উর্মিলা দেখতে পেল সামনের ড্রইং রুমে বছর পঁচিশ –
ছাব্বিশের এর হবে, পনির টেইল, সাদা টপ আর ফেডেট নীল জিন্স প্যান্ট পড়া ছিমছাম
একটা মেয়ে চুপ করে সোফায় বসে আছে । উর্মিলা কাছে আসতেই উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার
করে বলল, আমি সিংগিং টিচার জুলী ডিসুজার মেয়ে, হাতের একটা মোটা খাম উর্মিলার
দিকে বাড়িয়ে দিল, মাম্মা এটা আপনাকে দিতে বলেছে, প্রথম সাক্ষাতের ধরনটা যে
এরকম হবে উর্মিলা ভাবতে পারেনি । অনেকটা ইতস্তত হয়ে বন্ধ করা খামটা নিয়ে,
মেয়েটিকে উর্মিলা জিজ্ঞাসা করল কি নাম তোমার ? বেশ উজ্জ্বল চাহুনিতে মেয়েটা
বলে ওঠে, রুবি, রুবি ডিসুজা । উর্মিলার মনে সহসাই প্রশ্ন উঁকি দেয় জিজ্ঞাসা
করে বসে, কি কর ? স্বচ্ছন্দে মেয়েটা বলতে থাকে ম্যাডাম আমি আই-আই-টি খড়গপুর
থেকে এবার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস আউট হলাম বর্তমানে ইন্ডিয়ান অয়েল
কর্পোরেশন জব পেয়েছি, আগামী পয়লা সেপ্টেম্বরে মুম্বাই চলে যাচ্ছি । আপনার কাছে
আমারা হাইলি অবিলাইজড্, মাম্মা বারবার সে কথা বলত । আপনি হেল্প না করলে, আমার
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না । কিছুক্ষণ আগে শ্যাম্পেনের সামান্য
নেশায় মাথাটা একটু ঝিম ধরে ছিল উর্মিলার, মেয়েটির মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে
বেশ ভালোই লাগছিল, খানিকটা সচেতন হয়ে উত্তর দিল, তোমাকে ছোটবেলায় দেখেছিলাম,
ভেরি গুড, ইউ আর এ ব্রিলিন্ট স্টুডেন্ট সেটা আমি তোমার মা’র মুখে শুনেছিলাম,
আজ আলাপ করে ভালো লাগলো, কিন্তু তোমার মা কেমন আছেন ? এই কথা শোনার পর আকস্মিক
মেয়েটা চুপসে গেল, ছলছলে চোখে বলে উঠল মা’র প্রেসার হাই ছিল কিন্তু কিছুই বলত
না, ওষুধও খেত’না, মাঝে বুকে ব্যথা করেছিল, একদিন ডাক্তারের কাছে জোর করে
নিয়ে যাই, ই.সি.জি রিপোর্ট ভালো ছিল না, আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলার পর,
জানতে পারলাম হার্টে কিছু ব্লকেজ আছে, বাই পাস সার্জারি করেতে হবে, শুনেই
মাম্মা ভীষণ ঘাবড়ে গেল, বলতে লাগল অনেক টাকা লাগবে, উই আর পুওর পিউপিল, না না
এটা কি করে সম্ভব ? আপনার কথা আমাকে প্রায় বলত, সি ইজ ভেরি কাইন্ড হার্টেড, সি
হেল্প মি লট, আমার আই.আই.টি এডমিশনের সময় আপনি এক লক্ষ টাকা ধার দিয়ে ছিলেন,
সেকথা উনি আমাকে প্রায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতেন, চাকরী পাওয়ার পরে আমি যেন
আপনার ঋণের টাকা শোধ করে দিই, কিছুদিন আগে গোয়ার জয়েন্ট পেটারন্যাল প্রপার্টি
বিক্রি করে আমার মামা দুই-লক্ষ টাকা মাকে পাঠিয়ে ছিল, মাম্মাকে আমি বলেছিলাম
আগে অপারেশন করিয়ে নিতে কিন্তু উনি আপানার ঋণের কথা বলতেন, কারোর কাছ থেকে
হেল্প নিলে তাকে অবশ্যই রিটার্ন করা উচিৎ, বলত আমার কিছু হয়নি, আই এম অলরাইট,
আপনার সাথে দেখা করতে চাইত, আমাকে সাথে করে ওই প্যাকেটটা নিয়ে মাম্মা একদিন
আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল । মেইন গেটে সিকিউরিটি বলল আপনি নেই, আমরা ফিরে
গেলাম আপনার সাথে মাম্মার আর দেখা হোল না । সেদিন রাতে মাম্মার বুকে ব্যথা করে
আমি ট্যাক্সি করে হাসপাতালে আসার সময় মাম্মা মারা যায়, সি লেফ্ট আস্ ।

এই কথা গুলো শোনার পর উর্মিলা স্তব্ধ হয়ে গেল নিজের আধুনিক ভাবধারার সামাজিক
স্টাটাস, ধন দৌলত সব কিছুই যেন ওই বন্ধ করা খামটা কাছে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ।
নিজের বাবা মা’র মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ঠিক যেন এরকমই স্তব্ধ হয়ে গেছিল । হটাৎ নিজেকে
আজ নিঃস্ব বলে মনে হোল । বেঁচে থাকতে গেলে মানুষকে কখনও অনেক রকম দায়বদ্ধতা
স্বীকার করে নিতে হয় । কিন্তু, আত্ম-মর্যদা এমন একটা জিনিষ, যাকে নিজের
বিবেকের কাছে কখনও ছোট করা যায় না, বা তার সাথে কখনও আপোষ করা যায় না । জুলি
ডিসুজা সিনিয়ার ভেটারেন বার-সিংগার কাম উর্মিলার মিউজিক টিচার যেন, সে কথাই
আজ স্মরণ করিয়ে দিল । মেয়েটা চলে যাওয়ার পর নিশ্চুপ উর্মিলার চোখ দিয়ে
অজান্তে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে হাতের মুঠোয় রাখা টাকা ভর্তি খামটার উপর গিয়ে পড়ল।

— সমাপ্ত —

12/07/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here