পথ ----- ১৫ ---------------- হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ রাত্রিবেলা ঘুম ভেঙে গেল। খুব মিষ্টি একটা আওয়াজ ভেসে আসছে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এতটুকু বিরক্ত লাগছে না। বরং চোখ বুজে কান খুলে রাখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথা থেকে এই আওয়াজটা আসছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ কান পেতে রেখে অবশেষে বুঝতে পারলাম আওয়াজটা আসছে আমার মাথার দিকের জানলা দিয়ে। জানলাটা খুলতেই আওয়াজটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। একটা হারমোনিয়াম বাজছে। কণ্ঠস্বর নেই। শুধু হারমোনিয়াম। কিন্তু এত রাতে কে বাজাচ্ছে? আমাদের শোবার ঘরটার ঠিক পিছনেই সুবল কাকার ঘর। সে খেয়াল গায় আমি জানি। কিন্তু এ তো শুধু বাজনা। বিছানা থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে শুনলাম আওয়াজটা সুবল কাকার ঘর থেকেই আসছে। সুবল কাকা দিনেরবেলা গান গাইত আর রাতে হারমোনিয়াম বাজাত। এটা পরে জানতে পারি। হয়তো ও যখন রাতে বাজাত আমি তখন ঘুমাতাম। তাই জানতে পারি নি। মনে আছে এক রাতের কথা। আমার তিনটে বেড়াল ছিল। রাতে দুটো দুই পাশে আর একটা বুকের ওপর শুয়ে থাকত। পিকু নামের যে বেড়ালটা আমার বুকের ওপর থাকত সেদিন ও মারা যায়। সে রাতে আমি ঘুমাতে পারি নি। তার ওপর শেষ রাতে সুবল কাকার বাজনা। খুব কেঁদেছিলাম। একটা বেড়াল মারা গেছে বলে এত কান্না? বিষয়টা তা নয়। বিষয়টা হল একটা বন্ধুর চলে যাওয়া। সেদিন বুঝেছিলাম সঙ্গীত আমাদের কতখানি সহায় হতে পারে। হারমোনিয়ামের বাজনা সেদিন আমার দুঃখ-রাতের এক বড় অবলম্বন হয়ে উঠেছিল।
হরিৎ:04/06/2017 *******************