পথ ------ ১৯ ------------------ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বাড়ির মাঝখান দিয়ে ছিল রাস্তা। দিনরাত বাড়ির ভেতর দিয়ে অবিরাম লোক যেত। রাতটুকু ছাড়া অন্য কোনো সময় পড়ার কোনো সুযোগ আমার হতো না। এদিকে পড়ার চাপ পড়লে দিনেরবেলা পড়তেই হত। কিন্তু কি করে পড়ব? হঠাৎ একদিন মনে উদয় হল বেনেপুকুর। বাগানের মাঝখানটায় ছিল পুকুরটা। চারপাশ নারকেল আর তালগাছ দিয়ে সাজানো। বাগানে ঢুকতেই সামনে একটা আমগাছ ছিল। তার নিচে অনেকখানি জায়গা। আমার মনে হল, আমি তো এখানে এসেও পড়তে পারি। যা কথা তাই কাজ । কিছু দরকারি বই আর একটা থলে নিয়ে রওনা দিলাম। বাড়ি থেকে বেনেপুকুর হেঁটে দশ মিনিট। থলেটাকে ভালো করে পেতে পড়া শুরু করলাম। আমাকে গাছের নিচে এইভাবে বসে থাকতে দেখে মালি ছুটে এল। ও ভেবেছে আমি আম পাড়তে এসেছি। কিন্তু কাছে এসে যখন দেখলো আমি পড়ছি তখন ও খুব অবাক হয়েছিল। কারণ আগে আমার মতো এইভাবে কেউ এখানে পড়তে আসে নি। একদিন বাগানের মালিক এসে হাজির। তখন আমের সময়। বাগানে অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারত না। সেদিন আমি আবার গাছের ডালে বসে পড়ছি। মালিক গাছের নিচে এসে রীতিমতো রাগান্বিত হয়ে আমাকে নেমে আসতে বলছে। আমি যত বলছি এখানে রোজ পড়তে আসি তিনি কিছুতেই শুনবেন না। গাছের ওপর থেকে কথা বলছি বলে আওয়াজটা ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমার গলা শুনে মালি ছুটে এসেছে ------ " বাবু, ওকে কিছু বলবেন না। ও রোজ এখানে পড়তে আসে আর আমগাছ পাহারা দেয়। " " আমি কোনোদিন দেখা তো দুরের কথা, শুনিও নি কেউ গাছে বসে পড়ে ! তোমার বাড়ি নেই ভাই?" " আছে দাদু। কিন্তু সবসময় এতো লোকজন যে পড়তে পারি না। তাই বই নিয়ে এখানে চলে আসি। " পরে মানুষটার এত কাছে চলে আসি যে বাড়ি থেকে আম কেটে নিয়ে আমাকে খাওয়াতেন।
হরিৎ:11/06/2017
******************