Home ব্লগবাজি পথ — ২০ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২০ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ২০ ~  হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ------ ২০
------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



     বেনেপুকুরের গায়েই দু দুটো শশ্মান। তার গা দিয়ে চলে গেছে ঝিমকি নদী। বাস
রাস্তা। মাঝে মাঝেই তার ওপর দিয়ে ছুটে যায় বাস, লরী, ট্যাক্সি, রিক্সা। আমার
চোখের ওপরেই এসবকিছু। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এসব দেখি।
     এক একদিন বেনেপুকুরে পড়তে এসে দেখি, শশ্মানে লোকে লোকারণ্য। মড়া
পুড়ছে। তাদের বাড়ির লোকজন কেউ কেউ আমার চেনা। বাগানে না ঢুকে কিছুক্ষণ তাদের
সঙ্গে দাঁড়াই। কথা বলি।
     আর একদিনের কথা। আমি পড়ছি। হঠাৎ মনে হল কে যেন কাঁদতে কাঁদতে আমার দিকে
এগিয়ে আসছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি অরূপ। এরকম পরিস্থিতির জন্য আমি তৈরি
ছিলাম না। কি হয়েছে অরূপের? আমাকে এসে জড়িয়ে ধরল। সে কী কান্না!
     অরূপের বাবা মারা গেছে। কাল রাতে। হঠাৎই। এখন শশ্মানে দাহ করতে এসেছে।
কিন্তু ও কি করে জানলো আমি এইসময় এখানে থাকি? এইরকম অবস্থায় ওর আমার কথা মনে
পড়লো!
     সেদিনের মতো পড়া শেষ। আমি মালির ঘরে বই রেখে অরূপের সাথে শশ্মানে এসে
দাঁড়াই। ওর বাবাকে চিতায় তোলার পর আমরা আর ওখানে দাঁড়ালাম না। অরূপকে নিয়ে
সোজা বেনেপুকুরের বাগানের ভেতর। জলের দিকে মুখ করে আমরা বসলাম। ওকে অনেক
বোঝালাম। আমি চাইছিলাম ওকে এই আলোচনা থেকে দূরে নিয়ে যেতে। একা একাই অনেক কথা
বলে যাচ্ছিলাম। ও এক একটার উত্তর দিচ্ছিল। বাকি সময় চুপ করে বসেছিল।
     ------- " কি করে জানলি আমাকে এখানে পাওয়া যাবে?
     -------- " আমি তোকে দেখেছি এখানে আসতে।"
     আমার এখানে পড়তে আসার কারণগুলো ওকে জানাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুতেই ওকে
শান্ত করতে পারছিলাম না। ওকে ওইভাবে কাঁদতে দেখে মালি ছুটে এল। আমি মালিকে
বুঝিয়ে সব বললাম। এবার অরূপ আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তখনও
আমার বাবা জীবিত। সত্যি বলতে কি, আমি কিছুতেই ওর দুঃখকে ছুঁতে পারছিলাম না।
হরিৎ~ 13/06/2017
******************************************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here