Home ব্লগবাজি পথ — ৩৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩৬ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩৬   ~   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ----- ৩৬
-----------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



     আশ্বিনের অনেক আগেই আমার নাকে পুজোর গন্ধ চলে আসতো। তখন দিন সংখ্যায়
পুজোর কোথায় কি! সমান তালে চলেছে শ্রাবণের বারিধারা। বৃষ্টি থামলে যখন রোদ
উঠত তখন আকাশ জুড়ে দেখতাম নীলের বন্যা। কোথাও কোথাও ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘ।
সেদিকে চোখ মেললেই মনে যেন কিসের একটা উন্মাদনা আঁচ করতে পারতাম। কেউ যেন
আমাকে কোথাও থেকে ডাকছে।
     স্কুল গেলে দেখতাম বারোয়ারিতলায় খড় দিয়ে দুর্গার কাঠামো বাঁধা হচ্ছে।
তখন তো বারোয়ারীতলা ফাঁকা। ওই জায়গাটা সুরেশ পাল নামের এক কুমারটুলির শিল্পী
ভাড়া নিয়ে ঠাকুর তৈরি করতো। আমি একটু আগে স্কুল বেরিয়ে ওইখানে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে কাঠামোর গায়ে খড় বাঁধা দেখতাম। খুব আগ্রহ ছিল দেখার। মনে হতো আমিও
একদিন ঠাকুর তৈরি করবো।
     আস্তে আস্তে দেখতাম খড়ের গায়ে মাটি লাগানো হচ্ছে। এক মেটের পর তা রোদে
শুকিয়ে গেলে তার ওপর দোমেটে করা হতো। দেখতাম মূর্তিগুলো শিল্পীদের হাতের গুণে
প্রাণ পাচ্ছে। মূর্তিগুলোর গায়ে পাতলা কাপড় গঙ্গামাটি মাখিয়ে লাগিয়ে দেওয়া
হতো শরীরে কমনীয়তা আনার জন্য। নারী পুরুষের শরীরগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে
চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে।
     এবার মূর্তির গায়ে সাদা রঙ লাগানোর পালা। মূর্তির গায়ে রঙের স্পর্শ
লাগতেই আমি যেন আশ্বিনের হাত ধরে ফেলতাম। ততদিনে নদীর ধারের কাশফুলগুলো চোখের
সামনে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। আমরা দলবেঁধে নদীর ধারে কাশের বনে যেতাম
লুকোচুরি খেলতে। তখন আমাদের সে কি আনন্দ।
     মূর্তির গায়ে রঙের ছোঁয়া লাগতেই চারপাশ ত্রিপল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হতো।
যাতে বাইরের কেউ ভেতরে ঢুকতে না পারে। শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে হাত বাড়ালেই
ঠাকুরের দেহ। কেউ নোংরা হাত ঠাকুরের গায়ে বুলিয়ে দিতে পারে। তাই চারপাশের
আচ্ছাদনটা বেশ শক্তপোক্ত ছিল।
     ডাক্তারদাদুদের বাড়ির সামনের শিউলি গাছটায় প্রচুর শিউলি ফুল হতো। খুব
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে এসে দেখতাম গাছের নিচে শিউলি ফুলে সাদা হয়ে আছে।
জৈষ্ঠ্যের ভোরে আম কুড়ানোর মতো এখানেও শিউলি ফুল কুড়ানোর কী ভীষণ নেশা।
     কাশ, শিউলি আর সুরেশ পালের দুর্গামূর্তি দেখতে দেখতে আমার মনে তখন ভরা
আশ্বিন। তখনও পুজো আসতে দিন পনেরো দেরি থাকতো। বন্ধুবান্ধবরা তখন কার ক'টা
জামা প্যান্ট হল তাই গুনতে ব্যস্ত। আর আমার পুজোয় ঘর ভরা থাকতো কাশফুল,
শিউলিফুল, শিল্পীর হাতের তৈরি মূর্তিতে।







                             ****************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here