পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উৎসব ২০১৭ঃ এক অভিনব অভিজ্ঞতা

পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উৎসব ২০১৭ঃ এক অভিনব অভিজ্ঞতা

ওয়েব ডেস্কঃ  অভিনব এক পর্যটন উৎসব ২০১৭ আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর এবং ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল। তিন দিন ব্যাপী ২৩ জুন থেকে ২৫ জুন ২০১৭ এই মেলা গঙ্গার কাছাকাছি ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছে। কালই মেলার শেষ দিন। রবিবারের দুপুরে ঘুরে আসতেই পারেন গঙ্গার ধার থেকে। মাঝে একটু ঢু মেরে নিতে পারেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। বাঙালি ঘুরতে ভালবাসে। আর সেই পায়ের তলায় সর্ষের খোঁজ দিতেই সুন্দর সুবিন্যস্ত স্টলগুলি আপনাকে অবাক করে দেবে। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে সুন্দর গেট। তারপর নানা খাবার দোকানের ভান্ডার সাজিয়ে বসেছে লোকজন। সেই খাবার লোকজন সামলে এগিয়ে গেলেই দেখবেন আরও খাবারের স্টল। তারপর আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করে ঢুকতে হবে মূল হলে।সেই হলের মধ্যেই সারা বিশ্বে বেড়াতে যাওয়ার খোঁজ। এ এক নতুন চাবিকাঠি। পরিব্রাজক হিসেবে এখন আর আপনাকে ফা হিয়েন বা হিউ ইয়েন সাঙ হতে হবে না, সমস্ত পর্যটনের অতিথি আপ্যায়ন ধারনাই এখন বদলে গেছে। সেই ধারনা স্পষ্ট করতে আপনাকে এখানে আসতেই হবে। কারণ এখানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র ভ্রমণের অজানা তথ্য। কীভাবে যাবেন, কী খাবেন, কখন খাবেন, কবে যেতে পারেন, কতজন যেতে পারেন এই সব হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হাসি মুখে হাজির স্টলের এক্সিকিউটিভরা।

যদি আপনি আলিপুরদুয়ারে যেতে চান, মানে এই বর্ষাকালে সাধারণত বন্ধ থাকে জঙ্গলের ভিতরের সাফারি, তবুও যদি যেতে চান তাহলে আপনাকে যোগাযোগ করতেই হবে ব্লুহোমস্টে সংস্থার সাথে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত বারোটি হোমস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কথা বলে জানতে পারলাম এই দুর্গাপুজোর ভিতরে ওখানে প্রায় চল্লিশটি হোম স্টে-র ব্যবস্থা ওনারা করে ফেলবেন। তবে প্রতিদিন খরচ ঘর ভাড়া বাবদ প্রায় হাজার টাকা ও খাওয়ার জন্য সাড়ে চারশো টাকা।আলিপুরদুয়ারের যে অঞ্চলে হোম স্টেগুলি রয়েছে সেখানে জনবসতির লোকালয় থেকে দূরত্ব অনেকখানি। তাই তো আপনি যদি নেট দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু আরাম করতে চান সবুজের কোলে ঘুরে আসতেই পারেন আলিপুরদুয়ার। নীল সবুজের একাত্ম প্রকৃতির আতিথ্য…তার সাথে আরও জানলাম এই বর্ষাতে নাকি জন্তু জানোয়ারদের জঙ্গলের সীমারেখা আরও বেড়ে যায়। সে তার নিজের ইচ্ছে মতো কোনও কোর এরিয়া থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় চলে আসতেই পারে। আর যদি আসে তাহলে সেই দৃশ্য এই বর্ষায় আপনিও দেখতে পাবেন। গন্ডার বা হাতি তার সন্তানদের নিয়ে এক বুক জলে নেমে বসে রয়েছে। এটাই তো পর্যটনের মজা। টোটোপাড়ার বস্তি তাই আলিপুরদুয়ারে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে। অপু হাজারীর বাড়িটা চিলাপাতা জঙ্গলের লাগোয়া।সন্ধ্যের পর নীচে নামা বারণ। কে জানে এই রোমহর্ষক এই অনুভূতি আপনারও হতে পারে। বিমল গাবুরের বাড়ির একটি শুঁড়িপথ চলে গেছে হলং নদীতে। গোধূলি বেলায় এখানে হরিণ আসে। মনকেমনিয়া পাখিরা সারাদিন ভেসে চলে নিজেই আনন্দে। তা ভাবছেন সন্ধ্যেটা কী করবেন ঘরে আড্ডা তাস এইসব। একদম নয়। জানিয়ে রাখি গণেশ সুবার নিজের নাচের দল রয়েছে। ছন্দ মন্দ নয়। তালে তালে আপনি নাচতে কুমারগ্রাম, আঠাশবস্তি, মেন্ডাবাড়ি, দক্ষিণসাতালি আর কোদালবস্তি –র হোমস্টে গুলিতেই হারিয়ে যাবেন। সারা বছর এই দেশের মাটি অপেক্ষা করছে আপনার জন্যই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই স্থানটিতে পর্যটনের জন্য তৈরি করেন ২০১৪ সালে। ভার্জিন এই স্থানটির আরও খোঁজ নিতে কালই চলে যান মেলায়। আলিপুরদুয়ারের ব্লু হেম স্টে-র থেকে বিশদে জেনে নিন।আপনি হয়তো অনেক স্থানেই ঘুরেছেন। আবার যেতে চান। আগের বারে সিমলাটা কেমন যেন মজা হয়নি। জানতে হলে আপনি কালই ঘুরে আসুন এই মেলা থেকে। পরিযায়ী স্পেশালের স্টল বা যাচ্ছি-র স্টল আপনাকে সহায়তার জন্যই দাঁড়িয়ে। আর ভ্রমণের গিয়ে ঠকে গিয়ে থাকেন তার জন্য অপেক্ষা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার উপভোক্তা বিষয়ক ও ন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন অধিকার-এর স্টল। তাই তো স্টলটিতে টু লাইনার –

“সময়ের সাথী” আপনার সাথে

পরিষেবা পান সহজে, সাথে সাথে। 

এসব দেখে যদি আপনার মন জিরো-তে নেমে যায় অসুবিধা নেই, জিরো পয়েন্ট স্টল আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে। হদিস দেবে আসমুদ্রহিমাচলের। রয়েছে ইকো ট্যুরিজিম এর স্টল। রয়েছে হালুম করা সুন্দরবন। রয়েছে ইলিশের উৎসব। ভালো পাহাড়, অযোধ্যা পাহাড়, বাগমুন্ডির ঝর্ণা যেন ডাকছে। এসব জানতেই তো ফানজ় ট্যুরে পৌঁছাতে হবে। তবে এরা বিদেশের ট্যুর করিয়ে থাকে। নতুন সিল্ক রুটে যেতে চাইছেন বা পাসপোর্ট করাতে চাইছেন, এই মেলার স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা সেই মুশকিল আসান করে দেবে। এই জন্যই তো আপনি দর্শন ট্রাভেলের সাথে আন্দামানেই হোক বা সাথী স্পেশালের সাথে মধ্যপ্রদেশ যান। কাল আপনাকে নিজে গিয়ে একবার স্পট বুকিং করে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন বুকিং-এর উপর বিশেষ ছাড়। জিনোর্ড ইন্টারন্যাশেনালের বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটন সহায়তাকারী ভদ্রলোক আপনাকে বাংলাদেশের সুপ্রাচীন বাংলার মাটির কথা একবার বলবেইতবু বলে দিলেন পুরো ট্যুরে সবসময় এসি গাড়ি ও হোটেলে ব্যবস্থা থাকবে। যদিও খরচের লিস্টিটা একটু বড়ই মনে হলসেলিরিগাও রেট্রিট আপনাকে বলতেই পারে ‘দাদা যাবেন নাকি ট্রেকিং-এ…’ আপনি উৎসাহ পাবেন। অথবা আমাদের দীপুদা-র পুরীতে যেতে চাইলে সকলের মতো রোভারস ক্লাব অপেক্ষা করছেন। আজই ছাড়খন্ডে মাওবাদী হামলা হয়েছে, তাতে ভয় পাবেন না। এসেছে সেখানকার টুরিজম কর্পোরেশনের লোকজন। ধোনির বাড়িটা দেখতে হলে কাল একবার খোঁজ নিয়ে নিন এদের সাথে।

রামধনু ট্রাভেল আপনাকে সারা বিশ্ব ঘুরিয়ে দিতেই চাইবে। আপনি কিভাবে পাশ কাটিয়ে যাবেন সেটা আপনি জানেন। মহামায়া ট্যুর জুলুকে আপনাকে লজিং ব্যবস্থা করে দেবেই। অবাক করা স্টলে রাজস্থানের খোঁজ দেবে রাজস্থান যাত্রা কোম্পানি। তবে রাজস্থানে পৌঁছালে তবেই এদের দায়িত্ব শুরু হবে। নানা রকমের ঘর রয়েছে। রয়েছে নানা প্যাকেজ। তবে এরা যত্ন সহকারে মানুষের সাথে ব্যবহার করেন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর রাজস্থানে যাওয়ার এক অমূল্য সময়। একদিকে মরুভূমির উট অন্যদিকে লাদাখের সেই আমির খানের ব়্যাঞ্চো। ইউরেনাস ট্যুরিজম এই পাংগং লেক আপনাকে চেনাবেই। হলফ করে বললাম। ইউরেনাস ট্যুরিজম আপনাকে হরিদ্বারে তীর্থ করাতেই পারে, চৌধুরী ট্রাভেল আপনাকে বলতেই পারে কেরালার মনোরম দৃশ্যটি দেখুন, এক্সোটিক হলিডে খুব কম খরচে আপনাকে ঘুরিয়ে আনবে গুজরাট। অবাক হবেন না। সাগর সঙ্গম ট্রাভেল আপনাকে সুন্দরবনেও কলকাতার রেস্তোরার স্বাদ উপভোগ করাবে। তাই তো বলি স্টলে লেখা কেন চলুন গোয়া, বলছেন গোয়া বাবু মশাই। হোটেলের রেট বেশ বেশি হলেও একটু আরাম তো বাঙালি চায়।

ভোজন ও ভ্রমণ রসিক বাঙালিকে তাই একবার যেতেই হবে পর্যটন মেলায়। যতই হোক আমার মুখের কথা একদম বিশ্বাস করবেন না। নিজেই সারা বিশ্বে ঘোরার রাস্তাটা নিজেই চিনে নিন। সংস্থার উপদেষ্টারা তো নিজেরাই এসেছেন মেলায়। অনন্য এক অভিজ্ঞতা নিজেদের হওয়াই ভাল। আরে যেতে না পারেন, শুনেও তো শান্তি। আমার বিশ্বাস এই মেলায় একবার ঘুরে এলে আপনি ট্রলিব্যাগ রেডি করতে বসবেন। এই দেখুন আমার দাদা আজকেই আমার ফোন করছে। সে নাকি আজ রাতেই জেনারেল টিকিট কেটে সিকিমের জন্য ট্রেন ধরবে। সাথে আজ নিয়ে এসেছি মধু। খাঁটি মধু। বিক্রি হচ্ছিল। চললাম নিয়ে। বাকিটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। আমি যে এখন কী করিআমি চললাম, আপনারাও আসছেন তো

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here