Home খেলাধুলো বাংলার এই গ্রামের নাম জুড়ে রয়েছে পোলো খেলার সঙ্গে, সারা বিশ্বে পরিচিতি ছিল এই গ্রামের

বাংলার এই গ্রামের নাম জুড়ে রয়েছে পোলো খেলার সঙ্গে, সারা বিশ্বে পরিচিতি ছিল এই গ্রামের

বাংলার এই গ্রামের নাম জুড়ে রয়েছে পোলো খেলার সঙ্গে, সারা বিশ্বে পরিচিতি ছিল এই গ্রামের

[ad_1]

হাওড়া: রাজ রাজাদের খেলা হিসেবে পরিচিত পোলো। এই খেলার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম। বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে এই খেলার চল রয়েছে।

জানা যায় প্রায় একশোটি দেশ বর্তমানে পোলো খেলার সঙ্গে যুক্ত। ভারতবর্ষে ক্রিকেট ফুটবলের মতো চল নেই পোলো খেলার। তবে ভারতবর্ষের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ইতিহাস জুড়ে রয়েছে এই খেলায়।

এই খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত হাওড়া জেলার পাঁচলা দেউলপুর গ্রাম ছিল বিশ্বমানের পোলো বল তৈরীর একমাত্র স্থান। সেই সময়ে গ্রামের বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এই গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে পোলো বলের ব্যবসা করেছেন অনেকে। জানা যায়, সাহেব অর্থাৎ ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতবর্ষে পোলো খেলার চল শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আবার ব্রিটিশদের হাত ধরেই গ্রামীন এলাকায় তৈরি বাঁশ গোড়ার পোলো বল ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে।

সেই সময় দেউলপুর গ্রামের বহু মানুষ বল তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। তখন দেউলপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রচুর বাঁশ বন ছিল। সেই সমস্ত বাগান ঘুরে বাঁশ গাছের গোড়া তুলে জীবিকা নির্বাহ করতেন কিছু মানুষ। আবার কিছু মানুষ সেই গোড়া কাটিং বা ছোলাই করতেন। এভাবেই একাধিক ধাপে বল তৈরি হত গ্রামে। তখন বলের চাহিদা ছিল ব্যাপক। গ্রামের পুরুষ মহিলা উভয় এই কাজে যুক্ত ছিলেন।

বাঁশ গাছের পুরানো শুকনো গোড়া তোলার পরই বল তৈরি করা যেত। তবে কাঁচা গোড়া কাজের উপযোগী করতে সময় লাগত। তাই শুকনো গোড়ার চাহিদা বেশি ছিল। তার ফলে বাঁশের গোড়ার খোঁজে গ্রামের পুরুষেরা কুড়াল কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন।

আশেপাশের গ্রাম ৬-৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পায়ে হেঁটেই চলে যেতেন গোড়ার খোঁজে। ৫-৭ ঘন্টা ঘুরে বড় জোর ৩০-৪০ টি গোড়া মিলত। সেগুলি নিয়ে এসে বল তৈরি করা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতেন। কিছু মানুষ ছিলেন যারা ওই গোড়া ভিজিয়ে রাখার পর মাপ অনুসারে ছোলাই করতেন। তারপর বিভিন্ন আকার থেকে গোলাকার তৈরি করা।

পাশাপাশি মহিলারা অমসৃণ বল মসৃণ করার জন্য কাজ করতেন। চাহিদা অনুযায়ী, সেই সময়ে গ্রামে একাধিক কোম্পানিও গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ কোম্পানি কলকাতার বাজার ধরত। তবে দু একখানা কোম্পানি সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করত পোলো বল। স্থানীয়দের কথায় জানা যায়, এমনই একটি সেই সময়ের জনপ্রিয় কোম্পানি হল ‘ কোলে অ্যান্ড দাস কোম্পানি ‘। কয়েক দশক আগে থেকে পোলো বলের চাহিদা কম হতে শুরু করে। প্রায় দু – তিন দশক আগেই সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় বাঁশ গোড়ার বল তৈরি।

দেউলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ দাস। কোলে এন্ড দাস কোম্পানির পরিবারের সদস্য। তিনি বলেন, দাদুর অধীনে গ্রামের বহু মানুষ বল তৈরির কাজ করতেন। তখন পোলো বল তৈরির গ্রাম জুড়ে রমরমা ছিল। বর্তমানে গ্রামে একটি মাত্র পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। যদিও বাঁশের গোড়ার তৈরি বলে একেবারেই বন্ধ। বর্তমানে পোলো খেলার স্টিক তৈরি হয়। বল তৈরি হয় কাঠের।

সেই সময় দেউলপুর ও তার পার্শবর্তী গ্রামে গেলেই কানে বাজতো বাঁশের গোড়া তোলার ঠকঠক শব্দ। দেখা মিলত গ্রাম জুড়ে মেয়ে পুরুষ মিলে ব্যস্ত বল তৈরিতে। গ্রাম জুড়ে আনাচে কানাচে বল ছোলাই ও বল মর্শিন করতে ঘষার শব্দ পাওয়া যেত। সেটাই ছিল দেউলপুর গ্রামের সোনালী সময়।

আরও পড়ুন- ইস্টবেঙ্গলের টানা দ্বিতীয় জয় কলকাতা লিগে, বিশ্ব মানের গোল তুহিনের

মহাদেব দাস, সনৎকুমার বাগ যারা দক্ষ বল তৈরির কারিগর এবং বল তৈরির গোড়া তুলে নিয়ে আসতেন। তাদের কারও বয়স ৮০ বছর পার, কারও ৭০ পেরিয়েছে। পুরনো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে রয়েছেন সে সময়ের ব্যস্ত মানুষগুলি। গ্রামের জীবন্ত ইতিহাস হয়ে গ্রাম অলংকৃত করে রয়েছে তাঁরা।

এই সমস্ত মানুষগুলোর হাতের তৈরি বল ছড়িয়ে পড়ত বিশ্বময়। পোলো বল তৈরিতে গ্রামের বিশ্বজোড়া নাম। তাই এই গ্রামে অনেক বাড়িতে গেলেই দেখা মিলবে দু-এক খানা পোলো বল। গ্রামের এক সময়ের শিল্প ইতিহাস মানুষ সযত্নে রেখেছে আজও।

আরও পড়ুন- মেসির জন্য বদলে যাচ্ছে আমেরিকার মাঠের ঘাস! অ্যাস্ট্রোটার্ফ দেখে মাথা গরম লিওর

শুধু মানুষের বাড়িতে নয়, গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন পাঠাগারে রাখা হয়েছে পোলাে বল। পাশাপাশি পাঠাগারে রয়েছে বাঁশের গোড়া থেকে পূর্ণ বল তৈরির মোট ৭ টি পর্যায়। বিশ্ব জোড়া খ্যাতি দেউলপুরের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অতি আকর্ষণ। সেই সময়ের দক্ষ কারিগরদের কাছেই গ্রামের ইতিকথা শুনতে বসে পরেন নবীনরা।

রাকেশ মাইতি

Tags: Sports

[ad_2]

খবরটি “খবর ২৪ ঘন্টা” অ্যাপে পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here