ওয়েব ডেস্কঃ অবাক হবেন না। ভবিষ্যতের ভ্রমণের কষ্ট মানুষের আরও কমতে চলেছে। সেই দিকেই পৃথিবীর পর্যটন মানচিত্র পৌঁছাবে। এখন শুধু অপেক্ষা। আর কিছুদিন…মানে ভাবুন আপনি ঘুমাচ্ছেন আর তারপর উঠেই দেখলেন আমেরিকা, আবার আমেরিকায় ঘুমিয়ে উঠে দেখলেন আফ্রিকা আমাজোন। কি ভাবছেন স্বপ্ন হলেও সত্যিই…হ্যাঁ এমনই ঘটতে চলেছে।
একে তো উচ্চগতি আর তার সাথে যদি রেল ব্যবস্থার সঙ্গে বিলাসি হোটেলের রুম একসাথে মিলে যায় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো আরও দ্রুত ও অনেক বেশি আরামদায়ক হবে। খুব সহজেই ভ্রমণ করা যেতে পারে বলে মনে হয়। তাই ভ্রমণের নতুন এক দিগন্ত খুলতে চলেছে। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গড়া তোলা হবে নতুন ধরনের হোটেলের নকশা।
আসলে প্রস্তাবিত এই ‘হাইড্রোলুপ হোটেল’ কক্ষগুলোকে অনেকটা হোটেল শিপিং কন্টেইনার মতো জিনিস ব্যবহার করা হবে। তারপরে ডজন ডজন মার্কিন শহরের মধ্যে অতিথিদের বহন করবে সেই লুপ হোটেল। নতুন এ অত্যাধুনিক ব্যবস্থাকে সেদেশে বলা হচ্ছে ‘হাইড্রোলপ ট্রানজিট সিস্টেম’।
‘ভ্রাম্যমাণ হাইপারলুপ হোটেল’ ধারণাটি দিয়েছেন লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচারের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ব্র্যান্ডান সিবেবার্ট। সম্প্রতি আতিথেয়তার নতুন ধারার একটি প্রতিযোগিতায় স্বপ্নের এই প্রজেক্ট উপস্থাপন করে ‘ব়্যাডিকাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ী হন তিনি।
হাইপারলুপ এমন একটি পরিবহন ব্যবস্থা, যা যাত্রীবাহী যানগুলো কম চাপ সম্পন্ন টিউবের মাধ্যমে ত্বরিত হয়ে তাদের গন্তব্যের দিকে যায়। বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে এ ব্যবস্থা এখনও বিকাশের পর্যায়েই রয়েছে। সিবেবার্ট তার পরিকল্পনাকে পরিবহন ব্যবস্থার পরবর্তী বড় নতুনত্ব বলেই মনে করছেন সকলে। মানুষের ভ্রমণের জগতে অনেকটা দূর স্থানে যাওয়ার জন্য এই সাচ্ছন্দ্যবোধ সত্যই বিশেষভাবে দরকার। এই নকশাটিও একটি হাইপারলুপ পরিবহন নেটওয়ার্কের ওপরই নির্ভরশীল, তবে নতুন পদ্ধতির কনটেইনার ব্যবস্থায় ক্রিয়াশীল।
সিবেবার্ট প্রথমে হাইপারলুপ পরিবহন ব্যবস্থাই নির্মাণ শুরু করেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ডেভলুপ নামে পরিচিত নেভাদা মরুভূমিতে ‘ফিউচার অব সুপারফাস্ট হাইপারলুপ ওয়ান ট্রানজিট সিস্টেম’ নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষায় নিয়োজিত হন।
লাইভ সায়েন্স পত্রিকাকে বলেন সিবেবার্ট অনেকটা এমনই বলেন – ‘আমি এ প্রযুক্তির সামগ্রিক ও শাখা ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আতিথেয়তায় রূপান্তরিত করার উপায় অন্বেষণ করতে চেয়েছিলাম। অতিথিরা যেন নেটওয়ার্কের মধ্যেকার যেকোনো হোটেলে ভ্রমণ, এমনকি একদিনে একাধিক গন্তব্যস্থল পরিদর্শন করতে পারেন।’
তিনি জানান, হোটেলগুলোর জন্য নির্মাণ খরচ ভিন্ন ভিন্ন হবে। তবে তিনি আনুমানিক ৮ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ব্যয় হবে বলে অনুমান করছেন। সিবেবার্ট জানান, হাইপারলুপ হোটেলের সফলতা এলে একটি ট্রিপে ভ্রমণসহ ও এক রাতের থাকা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ডলার খরচ হবে।
নকশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি গন্তব্যস্থলকে হাইপারলুপ নেটওয়ার্কে অন্তর্ভূক্তির প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছেন সিবেবার্ট। সেগুলো হচ্ছে- অস্টিন, টেক্সাস, বস্টন, শিকাগো, ডেনভার, লাস ভেগাস, লস অ্যাঞ্জেলেস, ন্যাশভিল, টেনেসি, নিউইয়র্ক; পোর্টল্যান্ড, ওরিগন, সানফ্রান্সিসকো, সান্তা ফে, নিউ মেক্সিকো, সিয়াটেল এবং ওয়াশিংটন ডিসি। তবে এ নেটওয়ার্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো গন্তব্যস্থলের সঙ্গে ইউরোপের লিংক শহরগুলো বা এশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত করা যেতে পারে বলেও ধারণা দেন তিনি।
এ বছরের ব়্যাডিকাল ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় নগদ পুরস্কার ছাড়াও বৃত্তির সুযোগ পেয়েছেন সিবেবার্ট। তার হাইপারলুপ হোটেলের ধারণাটি আগামী অক্টোবরের একটি অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে, যা তিনটি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার পেশাদার বিজয়ী নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের এখন নতুন প্রযুক্তির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে আর কিছু দিন। তারপরই ভ্রমণের স্বপ্নরা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। যদিও একটু দামী ট্যুরের খরচ, তবুও তো আরামদায়ক। তাই বাস্তবায়িত ভ্রমণের সত্যে একবার ঘুরে আসাই যায়।
দেখুন ভিডিও……