Home ব্লগবাজি মুষলধারা ~ সোমাদ্রি সাহা

মুষলধারা ~ সোমাদ্রি সাহা

মুষলধারা    ~     সোমাদ্রি সাহা

 

মুষলধারা

 সোমাদ্রি সাহা

~~~~~~~~~~~

(১)

তোমায় যখন জিজ্ঞাসা করি তুমি বলে দাও জানো না। তোমার হাতেও লেখা নেই। তোমার মননের শব্দরা ডানা মেলতে রাজি নয়। এভাবেই ঋতুযাপনের কলবর মুখরিত যানে ভেসে চলে। সেই ঋতুযানে আমি আজ চলেছি অবিরত কাল। আমার মনের গভীরে ল্যাং খাওয়া দুঃখ, পরিবার পরিজনের মৃত্যুর দুঃখ, কিছু না হতে পারার দুঃখরা গ্লিসারিন বৃষ্টি হয়ে প্রকৃতিকে ভাসিয়ে দেয়। তবু নিরাপত্তাহীন মাথার উপরের আকাশ আমায় ভাবায়। এই আকাশের থেকে নেমে আসা শাওয়ার আমায় হেব্বি বাচ্চা করে দেয়। আমি ভিজি। বৃষ্টিতে। আমি এগিয়ে চলি এগিয়ে চলার আনন্দে। সংকীর্ণ সমাজ এই স্নিগ্ধ শীতলতা সত্যই জানে না। আসলে গরমের দিনে বৃষ্টির হ্যালুসিনেশন হয়। ডাব কেনার পয়সা নেই অথচ মরীচিকায় বর্ষা ডাকার ইচ্ছেটা প্রবল। আমার এই ইচ্ছারা বাঙালি মননে, কবি সাহিত্যিকের কবিতায় স্পষ্ট। আসলে গরমের এই ঘামেই তো বর্ষার জন্য সব লেখা জমা দিতে হয়। সম্পাদকের এই ইচ্ছারাই বোধহয় হ্যালুসিনেশন তৈরি করে। ভ্রম বারিষনামার দিনে বেশ লাগে সন্ধ্যা। আজ কী কালবৈশাখী আসবে…কে জানে।

***

ওই আসে ওই অতি-ভৈরব হরষে

জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ-রভসে

ঘনগৌরব নবযৌবনা বরষা শ্যামগম্ভীর সরসা। – রবি ঠাকুরের ঋণ নিয়ে এই বর্ষাজাগরণে কথারা আসে। প্রথম যখন ঋতুস্রাব হয় কিশোরী চমকে ওঠে, ভয় পায়। কান্না আসে প্রাণে। আজও খরা মুখরিত পাগল দিনে, কেউ কেউ যখন ভাবে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে ঠিক তখনই শহরের শরীরময় বৃষ্টি আসে। নিয়নের আলোতে জ্বলে ওঠে উদার প্রাণের অনন্ত সৌরভ। শ্যামলে নিবিড় ছায়ায় দুর্লভ সব চুমুরা জমে ওঠে। হৃদয় হরণের ধারাবর্ষণ শিহরিত নখ থেকে চুল। আমরা তো প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করেই চলেছি প্রকৃতিকে। প্রকৃতি এসবে তত কান দেয় না। একটা ভূমিকম্পে আমরা সকলেই কয়লায় পরিণত হব। সে আবার তার মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে মেকওভার করে নেবে। আবার সাহিত্য অনুরাগী লিখবে অন্য কোনও বাংলা ভাষায় –  ‘নানা শস্যবিচিত্রা পৃথিবীর উপরে উজ্জ্বল আলোকের তুলিকা পড়ে নাই বলিয়া বৈচিত্র্য ফুটিয়া উঠে নাই। ধানের কোমল মসৃণ সবুজ পাটের গাঢ় বর্ণ এবং ইক্ষুর হরিদ্রাভা একটি বিশ্বব্যাপী কালিমায় মিশিয়া আছে। বাতাস নাই। আসন্ন বৃষ্টির আশঙ্কায় পঙ্কিল পথে লোক বাহির হয় নাই। এই আলোহীন, বৈচিত্র্যহীন, মেঘমেদুর দিনে মত্ত দাদুরী ডাহুকীর ডাকের যেন তুলনাই হয় না।’

এই যে বর্ষাযাপনে গাছগুলো সেজে উঠছে, আফ্রিকা আমাজন থেকে সুন্দরবন সব স্থানেই পটভূমি ফিলিং তৈরি করে দেয় বর্ষানামার মেঘ। মেঘের সেই রূপটা সত্য সেক্সি। আমার লেখায় নানাবিধ ইংরেজি শব্দে বিব্রত হবেন না। এগুলো আমার বাংলা স্মৃতির শ্যাওলাকে জাগিয়ে দিচ্ছে। তাই হয়তো অনলাইন যুগের বর্ষায় মনসুন মাস্তির গন্ধ পাচ্ছি। বর্ণাঢ্য প্রিয় ঋতুর এই মাটির গন্ধ আলাদা নস্টাল ফিলিং আছে। সেই ঝড় হলে আমবাগানে ছুঁট….ধুপধাপ। সে সব আমবাগান আজ প্রোমোটার রাজ। বৃদ্ধ মা-বাবা আজ শ্রমবদ্ধ জেরেন্টোলজির খপ্পরে। ব্যবসার নতুন মুখ এই বৃদ্ধ বৃদ্ধার সেবা। গাছেরাও তো এই পথ ধরেই বয়স্ক হয়ে ওঠে। প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো সড়কের গাছ, রবি ঠাকুরের খোয়াইয়ের ছোট নদীর পাশের গাছ…আজও সেখানে হাট বস শুক্রবারে। ডুয়ার্সের ঐ বন জেগে ওঠে। ঐ সময় যাবেন না ঘুরতে ডুয়ার্স। জঙ্গলে সাফারি করতে দেবে না…এটাই নিয়ম। টিপস নিজের পকেটে নিয়েই ফিরবেন। তাই বর্ষায় মূর্তি নদীর কথা না ভেবে শহরের পাশে গঙ্গাকে নিয়ে একটু ভাবুন। তিস্তার ভাগটা কোনও দিন মিটবে না। সিকিম সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে। উত্তরের বাংলাদেশ বঞ্চিতই থাকবে। যেমন কলকাতার মানুষ বেরেলি মাছ টু বড় সাইজের ইলিশকে মিস করে।

অফুরন্ত ফসলের জমিতে হাইব্রিড ধান ও মিডিল ম্যানের কোপ। তাই আমন, বোরো ধানের দাম আকাশ ছুঁয়ে নেবেই। ধুর বাদ দিন আজ এই মন্ত্রীর চোর সাজা, ওসব বড় দেশে হয়, এখানে রোগী এমনি মারা যায়। সোর্স না থাকলে বস হাসপাতাল, সরকারী বা বেসরকারী, পুরো চুবিয়ে তুলে দেবে। তবু আমার মতো দরিদ্রের সরকারি ভরসা। আসলে এই বর্ষা বর্ষা মরসুমের স্বপ্নে বলতে চাইছি, — মেরুদন্ড আমার সোজা, নই চোখ বোজা। তাই বৃষ্টিকে সোজা আমার বেডরুমের বারান্দায় ল্যান্ড করাব না। একটু অফুরন্ত মেঘের ক্রেডিটকে ছড়িয়ে দেব আনন্দমুখর নিয়নে। ঐ যে মেয়েটি ধর্ষণের পরে কাঁদতে পারেনি আদালতে তাকে বলব, আয় ভেজ এই বৃষ্টিতে। যে মেয়েটা আজ বাবু পায়নি রং মেখেও, তাকে বলব মনখারাপের সঙ্গি হল বৃষ্টি। অপমান করছি না নারী। আমি বৃষ্টিকে বলছি পাশে দাঁড়াতে। নারী জাতিকে ভয় করে আমিও অনেক কাজ করি। চুপিচুপি তাই ভিজে নিলাম এই বর্ষায়। কান্নাগুলো ঢাকুক। জানলায় বৃষ্টিতে কান্না ধরা পরে যায়। জয়ের আশীষ নিয়ে তাই রাস্তার কাহিনিদের বলি এসো বৃক্ষরোপণ করি।

যখন বীজ পাই, যখন দেখি সেই বীজ থেকে গাছ জন্ম নেয়, আমি জেগে উঠি। ঐ অনলাইন সিন অথচ উত্তর দেয় না। সেই সম্পর্ক জেগে উঠলে যেমন হয়, আমার বর্ষা দিনের কথায় বীজের থেকে ভ্রূণ সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমি জেগে উঠি। আমাদের জেগে উঠতে হয়। এটাই নিয়ম। আমি ভালবাসার দিনে জন্ম দিই বৃষ্টি দিনের বীজ। নেবে তো….জানি এসব অপদার্থ কথা। এসব কথা তোমাদের কর্পোরেট সংসারে বেমানান। আমি তবু জেগে থাকি। আমি তবু বীজের জেগে ওঠা সবুজে বাঁচতে শিখি। বিশ্বাস করুন আমার আগের বছরে ফেলা পুঁইশাকের বীজে এবার দেখলাম তেড়ে মেরে গাছটা বাড়ছে। জানি না এই সবুজ আসলে বৃষ্টিকে চাইছে, নাকি পিঁপড়ের দল বৃষ্টিকে নিয়ে আসছে। অলৌকিক এক শক্তি আছে পিঁপড়ে গোষ্ঠীর। আমি ছোটবেলা থেকে এই পিঁপড়ের উপর গোয়েন্দাগিরি করেই তো মামাবাবু লিখতে শিখলাম। আমাকে সিড বা সিবিআইতে নিলে আমি সারাদিন কোন মেঘের থেকে কতটা বৃষ্টি হবে তার খোঁজ করতাম। আমার বাড়িতে উপরের তলায় মালিক থাকতেন। সেই মালিক দাদু এক সময় আবহা দপ্তরে চাকরি করতেন। আমাকে বলতেন ‘বাবাই, আজ বৃষ্টি হবে না। এখনও দেরী বৃষ্টি আসতে।’ আবার কখনও ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার আগে বলতেন ‘বৃষ্টি হবে ম্যাচ খেলিস না আজ।’ অবাক লাগে, যে আবহা দপ্তরকে আমরা তাচ্ছিল্য করি, যেদিন বলে বৃষ্টি হবে সেদিনই হয় না, উল্টো কেস ঘটে, সেই দপ্তরে চাকরি করা এক বয়স্ক মানুষ শুধু মেঘ দেখে আমায় বলে দিতেন বৃষ্টির উপন্যাস কথা। বিশ্বাস করুন আমাকে অনেক মেঘ দেখতে শিখিয়েছিল। তাই তো আমি নারীদের চোখের জল পড়তে পারি। লিখতেও চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও নারীর আমার মতো সেকেলে মানষিকতার প্রাণীকে পছন্দ হল না। এটাই কপাল। তবু আমি বেঁচে আছি। তবু আমি বেঁচে থাকব। বৃষ্টি আর মেঘকে দেখব চিরকাল। খোঁজ করব, মাঠে কতটা জল দিতে হবে। কতটা চাষ হবে। আসলে প্লাস্টিকের কবি হয়ে উঠছি, টুকে মেরে দিচ্ছি সবটুকু। কবিতার কিছু না জেনে বাহবা পেয়ে যাচ্ছি। তাই গ্লিসারিন বৃষ্টির বদলে মায়াবী হয়ে উঠতে চাই। আমি জেগে উঠতে চাই জাগরণের যুগে। বৃষ্টি তো ওয়েক আপ কল দিয়ে যায়। বাঘ আসছে, হরিণ এবার ছুঁট লাগাও। এবার তোমার বাঁচার পালা। কবি এবার তুমি সমাজের জন্য লিখতে শুরু করো। অরণ্য, আলো, নারী, বৃষ্টি এসব করে হবে না। সত্যিই বলছি সমাজের অজস্র মানুষ কাঁদছে। কী করে গরীবকে বাঁচিয়ে শিক্ষার আলো দিতে পারব যাতে তারা অরণ্যের ডাকে নারীকে সম্মান করতে শিখবে। তবেই তো বৃষ্টি আমাদের কলুষিত বীর্য সমাজের অবমাননাকর দিককে দূর করবে। এখন শুধু এই ভাবনার জন্য বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকা। বৈশাখ জৈষ্ঠের শেষে সে আসবে। সে আসবে কালবৈশাখী হয়ে। সে আসবে অষ্টমীর বৃষ্টি হয়ে। সে আসবে সরস্বতী পুজোর আগে ভিজিয়ে দিতে। বারিষনামার এই পদাবলীতে আমি যে বর্ষারই চর্যাপদ লিখে যেতে যাই অবিরাম কাল ধরে। নারী তুমি আমায় উদিত সূর্য দেখাও, আমি লোভ লালসার ঋতুস্রাবে জর্জরিত। আমি তো নারীকে পণ্য মনে করছি। নগ্নতা দেখছি। এর থেকে মুক্তি দাও। নারী আমি তোমার স্বপ্ন সফল করতে চাই। আমায় ভিজিয়ে দাও। নারী তুমি কী আমার মাতৃভূমি! তুমি কী আমার জন্মদাত্রী! তাহলে কেন পশু করে তুলছ। কেন মানবিক ধর্ম না দিয়ে আমায় মৌলবাদের ধ্বজা ধরতে বলছ। কেন আমায় আফগানিস্থানের বুকে রূঢ় করছ! আমায় নৈহাটি, ধুলাগড়ে নিয়ে চলেছ। আমি তো সর্বজনীন এক সত্তা। আমি তো বৃষ্টির কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চাই। আমি তো আসলে ভালবাসার মেঘ। আমি তো আসলে বৃহস্পতির উপগ্রহে বৃষ্টির মেঘ। এসেছি। তোমাদের মননে, বাংলা ভাষার রবি ঠাকুরের হাত ধরে শিখতে চাই…ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা…ছোট গল্পের সেই বর্ষামঙ্গলে আমায় ঠাই দিও। দেবে তো নারী….আমি যে বড্ড একা, অপদার্থ এক মেঘ…

বর্ষণের কত রেওয়াজ, কত উদযাপন, সেই ইভেন্টগুলো সাজিয়ে নিলেই প্রতিটা গ্রুপ জমিয়ে বর্ষাতেও পিকনিক করতেই পারে। বিরিয়ানি মিট হতে পারে আর খিঁচুড়ি মিট করলেই দোষ…আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে…যে আমেজ তৈরি করে দিয়েছে, সেই নয়নাভিরাম শ্যামল শোভায় বিদ্যুতের ছটা নিয়ে বজ্রমানিক গাঁথা হয় বরণমাল্য নিয়ে সমস্ত বাঙালির রাইডার হয়ে বৃষ্টি এলো বলে। মায়াময় ঋতুকে তাই আমি বলি কালে মেঘা…পানি তো বরষাও…আপনারা কী বলেন। আমি তো মেঘমল্লার রাগ জানি না। তাই শব্দমল্লারে মুষুলধারা নামাবই। বড্ড গরম। হাতে পয়সা নেই যে এসি কিনব। ঐ দেখুন আমার পুচকু গাছটা বলে উঠল টবের থেকে “একদম নয়।” ঠিকই তো গাছ লাগাতে পারি না, অথচ গাছের জঙ্গল কেটে প্রপার্টি ট্যাক্স দিয়ে ফ্ল্যাট বানিয়ে দিব্য আছি। এটা কী উচিত। আজ মুষুলধারাকে জিজ্ঞেস করব। ঐ দেখুন মেঘ যে আমায় রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কথা শোনাচ্ছে…আমি চললাম আজ পরে একদিন বলব মুষুলধারায় ভিজে আমার তার কী হয়েছিল…সে এক শিহরণের কাহিনি।

 

(২) ঋতুবারিষ

~~~~~~~

একটি অধ্যায় শেষ হল। উপন্যাস লেখার। অনেকক্ষণ ধরে মা মুখ করে যাচ্ছে। বাজার যেতে হবে। অনেক দিন হয়। রাতের অন্ধকার। ঋতুমতী লেখারা ভোরে উঠে না লিখলেই নয়। না লিখলে মনে হয় সারাটা দিন কেমন যেন অচেনা। অজানা। মায়ের অনেক কিছু লাগে সংসারে। যেমনটা হয়। স্বাভাবিক। আমি তো সব এনে দিতে পারি না। অভাব তো থাকবেই। আর এই অভাবকে সামলে রেখে শুধু মা। নারী পারে না এমন কিছুই হয় না। মা পারে। কিন্তু আমার সেই ঋতু কী পারবে!

ঋতুর সাথে কথা হয়। নানা ভাবনা। আমি চুপ করে তার সাথে পথ চলার অভিধান বুঝে নিতে শুরু করি। যদিও পূর্ণ অপূর্ণের একটি বিশেষ বিষয় থেকে যায়। আসলে তার নাম ঋতু নয়। তবু আমি তার নাম ঋতু দিয়েছি। কারণ তার মুড প্রচন্ড স্যুইং করে। ছটা ঋতুর মতো বদলে যায়। তবু সে তো সংসার যাপনের কারিগর হবে। হয়তো ঋতুপর্ণের মতো নির্দেশনায় আমার সংসার ভরে উঠবে। নির্দিষ্ট অনির্দিষ্ট এক চেতনায় সংসার এগিয়ে চলবে। সংসারের মতো। আমার ঋতু হয়তো হয়ে উঠবে ইন্ডাষ্ট্রির একমাত্র নায়িকা ঋতুপর্ণা। আমার অবিবেচক বিমূর্ত ভাবনার মাঝে মা দিয়ে গেল ফর্দ। বাজার করতে হবে কিছু। ড্রয়ারে তেমন টাকা নেই। ফর্দ রেখে দিলাম গুছিয়ে। বললাম একটু সময় চাই। ঋজু ইচ্ছে নিয়ে এগিয়ে চললাম। জানি না সব ইচ্ছারা ঋজুরেখ হয়ে উঠতে পারবে কিনা। ঋণ তো পৃথিবীর কাছে। ঋণ তো বিশ্বের কাছে। প্রতিদিন বসুন্ধরা ঋণী করছে। আমি তো প্রকৃতির থেকেই ধার করছি সমস্তটুকু। ঋত(পরব্রহ্ম)-কে জানার জন্যই তো প্রতিদিন সাহিত্যের কাছে আসি। জানি ফুটপাতে লোক অনেক। সামনে বাজার। অনেকটাই ভিড় ঠেলে পেটের জন্য ঋদ্ধ ব্যাগ নিয়ে ফিরলাম। নতুন করে কবিতা পেলাম, মনে হয় এমন করেই ঋতুকালে নারীরা ঐশ্বরী হয়ে ওঠে। ঋষভ মুনির মতোই কিছু বাক লিখতে বসলাম। মা আবার বলছিল খেয়ে নিতে জল খাবার আমার কলমে তো তখন ঋত-বাক ভর করেছে…

আমার ঋষিকল্প উপন্যাসের পরের অধ্যায় লিখলাম-

ঋত্বিক ঘটক বা হালের হৃতিক শব্দটি অভিনেতা হওয়ার দরুণ পরিচিত। আসলে আমরা এক কথায় প্রকাশে শিখেছিলাম ঋতুতে ঋতুতে যিনি যোগ্য করেন। সেই ঋত্বিক চেতনা তো মানুষের মনেও রয়েছে। জীবনের প্রতি পদক্ষেপ আলাদা এক ঋতু। তপ্ত বৈশাখের মধ্যে সন্তান জন্মায়। বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে কৈশোরে পৌঁছায়। শরতে প্রেম জোয়ারে সংসার যাপনের ক্যানভাস পূর্ণতা পায়। হেমন্তে এসে মনে হয় পেলাম অনেক, পেলামও না অনেক। হয়তো সন্তান ভালো হল অথবা ফিরে এলো পুরোনো প্রেম বা পরকিয়া বা নিছকই একাকিত্ব। যদিও একাকিত্বের হেমন্ত নারীদের বেশি, কারণ সেই সময় চল্লিশা হলে আর সন্তান বা স্বামী নজর দেয় না। শীত….রুগ্নতা আনে শরীরে। মনে। মননে। কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। আর বসন্ত তো নাতি নাতনিকে নিয়ে বাকি কটা দিন ব্যাট করে যাওয়া। পোস্ত আসছে। বললাম না বেলাশেষের পরও পোস্তোর মতো নাতির দরকার। ঋতুতে ঋতুতে যে বারিষনামার অভিযান তাই তো মনে করায় নতুন এক চেতনাশীল শব্দের কথা। ঋতুবারিষ।

***

তিনমাস কেটে গেছে। ঋতুকল্প গল্পটি প্রকাশকের টেবিলে বন্দি। ঋষভ পাহাড়ের ছবি দেখছিলাম। মনে আসছিল কুয়াশা ঘেরা কৌশানির কথা। দূরের পাহাড়ে সেই শায়িত বুদ্ধ। অপূর্ব এক শোভা। আমার ঘরে থাকা রবি ঠাকুরের বাল্মীকী প্রতিভার ছবিটিতে চোখ যেতেই বুঝলাম আচার্য তো এনি। ঋষিমন নিয়ে ঋতুবারিষ সফরের কালবৈশাখী ঝড় গহীন শব্দে রচনা করেছে অনন্ত মাদকতা। শিহরিত এক সত্যের ঋদ্ধি। মুষুলধারার সামিয়ানায় ঐতিহ্যশালী এক মনন কথা। যা তার কলমেই বারিষনামার সঠিক উদারতাকে প্রকাশ করে এক সত্য সঠিক পরিশীলিত পথে। আসলে জীবন মানে তো কেবলই উল্লাস বা ভোগবিলাস নয়, জীবনের আলাদা মানে রয়েছে। সেই মানে অনুসন্ধানের জন্যই তো মানবতার পূজারী হয়ে ওঠা। এগিয়ে চলা। বিশ্বাস করি এই সব ধর্মবিলাসী রাজনীতির ঊর্দ্ধে এক শান্তির সাজঘর রয়েছে। সেই সাজঘরে রূপকথারা থাকে। থাকে আমার পরম মানুষ। আমার মন। সেই মন একদিন ঋতু বেশে আসবে। স্থায়ী হবে। রবি ঠাকুরের মতো কাদম্বরী বৌঠান পেলেও হতো। কিন্তু আমি তো একক সন্তান। নিউক্লিয়ার যুগে ঋদ্ধ সংসারের একান্নবর্তী ক্যানভাস না ভাবাই ভাল কথা। আজ তো প্রেম প্রেম ভাব। ঠান্ডা মৌতাত। একটু উদাসী মনের কলমসুনামী উঠবে ঠোঁটের নরমে। মিশে যাবে অনেকটা আত্মীয়তা। মিশে যাবে অনেকটা পুরাণ কথা। তবে আমি অর্জুনের মতো বেশ বদল করি না। আমি কর্ণ। আমি তো পালন করি একক প্রেম। ঋতুবারিষে…

মা জানে এ ছেলের আর কিছুই হবে না। সারাদিন কী সব ভেবেই চলে। ঋষ্টি (গ্রহদোষ) সমাধান নেই। ঋতুও বলে মায়ের মতো “তোমার মুখে বেঁচে থাকার কথা শুনতে চাই তো। মৃত্যু বিলাশ নয়। তুমি আমার ঋভু। তোমাকে দেখেই আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি।” আমি অচল পয়সা সমাজে। চুপ করে উপনিষদ পড়ি। মুক্ত লেখনির ভুল সময়ে জন্মেছি…  আসলে মানুষ তো একটা নির্দিষ্ট মাইন্ডসেট নিয়ে বেঁচে থাকে, তার পরে আর কিছু যোগ করতে চায় না। তবে আমি চাই। আমি চাই অজস্র পালক ভাষা বাংলায় বিরাজ করুক। নতুন করে ভাসুক মানুষ ভাসার আনন্দে। এ এক অভূতপূর্ব সময়। এখনই তো বাংলা ভাষার সুবর্ণ যুগ। এই ভাবনার কথায় এখনই ঋতুমতী হোক ভাষা বাংলা। (নিন্দুকরা একটু নারী প্রসঙ্গ টানছি, খারাপ ভাববেন না নারীগণ। আসলে ভাষাকে নিজের মা মনে করি…ভাষা কোনও রাম রাবণের যুদ্ধ নয়, নয় কোনও এনজিও, যে তাকে সেবাদান করে বাঁচতে হবে। ভাষার নিজস্ব স্থিতিশীলতা রয়েছে। যেমন বসুন্ধরার নিজস্ব রীতি রয়েছে। আমরা সকলে নিমিত্ত। প্রকৃতি তার মতো করে ঋতুভাবনায় মাতবে। ঋতুবারিষের অস্তিত্ব অসীম। আলোক উজ্জ্বল এক সম্ভাবনা। পাগলামো করেই চলবে তার সমস্তটুকু….সভ্যতার সমস্তটুকু পেরিয়ে। সামনে বিপদ। অনেক মানুষের মৃত্যু আসছে। আসছে ভয়াবহ যুদ্ধ। তবু বেঁচে থাকার মুষুলধারা ঋতুবারিষ আমার মনকে প্লাবিত করুক। কবিতারা সব নয় যখন ভাষা তার নিজের অস্তিত্বকে বুঝতে শেখে। জানি এই রচনা সকলের জন্য নয়। তবে কেউ কেউ ভাষা স্রোতে এই ভাবনাদের আত্মীয় ভাববে।)

তিনমাস কেটে গেছে। এখন যখন সেই ড্রয়ারে রাখা ফর্দ দেখলাম, বুঝলাম অনেকটা মেঘ কেটেছে। অনেক চাহিদাই পূরণ হয়েছে। আসলে সময় সবটুকুই পূরণ করে। আমরা শুধু পরিকল্পনা করতে পারি। আসল কাজটি সময় করে নিজের মতো করে। হয়তো কালই মিশাইলে ধ্বংস হবে অনেক সভ্যতা। আমরা কী কিছু করতে পারব। কারণ সেই সময় জন্ম নেবে অনেক চারা গাছ। রোপিত হবে জীবন। তার নিজের সংকল্পে। ঋতুবারিষ হবে তার সাক্ষী। মুষুলধারার বারিষনামায় মনকেমনিয়া এক সন্ধ্যায় গেয়ে উঠবে সন্ধ্যার পাখি, ঘরে ফেরার গান।

 

(ব্যাকড্রপে অচেনা এক নারী মূর্তি বলে ওঠে)

~ চোখ বন্ধ করে কী করছিস…

– দেখছি বসুন্ধরার ঋতুবারিষ।

 

 

(৩) কালো মেঘ আর বৃষ্টিযান

~~~~~~~

আগে সব কিছু ভাল ছিল। আজকের সবটাই খারাপ। এই প্রাচীন স্রোত শুনতে হয় আদি নদীমাতৃকতার উৎস থেকে। গুছিয়ে নিতে হবে। এই ভাবনাটাই সমস্ত মুষুলধারার বৃষ্টিকে এতো কাল ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে। অনেকটা সময় নোঙর করে থাকে নির্দিষ্ট একটা ক্যানভাসে। যেমন মোনালিসার ক্যানভাস এখনও অমরত্বের সমান। তবু তার চেয়ে সুন্দর মানবী কী ইতিহাস দেখেনি। বর্ষাযাপনের মতো তাও দেখেছে মানুষ। সেই পথ ধরেই বহমান কাল ধরে মানুষ চরিত্র খুঁজেছে। যাঁরা সামাজিক সমস্ত কিছু তুলে ধরতে পারেন মঞ্চে। সেই মঞ্চ তো এখনও তৈরি হয়নি বলেই একটু পুরোনো দিনের জীবিত মানুষের বক্তব্য। ঐ আগে সব ভাল ছিল। আট্টাত্তরের বন্যার মতো বন্যা আর দেখিনি…রেডিও বেজে ওঠে। আসলে নস্টালজিয়া। সবই ভালই ছিল, আজও সবই ভাল আছে। এই ভালটুকু খুঁজে নিতে হবে। নিজের মনুষ্যত্বকে শ্রদ্ধা করুন। শ্রাদ্ধ করবেন না। নিজেকে শ্রদ্ধা করলেই অন্যের শ্রদ্ধারা আসবে। এই সামান্য সত্য তো চাকা আবিস্কার পর থেকেই সত্য। আসুন একটু মেঘের কাছে যাই। মেঘই বলে দেবে বৃষ্টি কী নতুন কিছু দিতে পারে, নাকি কিছুই দেওয়ার ক্ষমতা নেই তার। চক্রাকারে আদি কাল থেকেই চরম রাস্তায় জ্ঞান আবর্তমান। তাই বৃষ্টি তার একাগ্র চিত্ত নিয়ে এগিয়ে যাবেই। সে ঠিক সময় নদ- নদী, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর ভাসিয়ে দেবে। আমি আপনি কিছুই করতে পারব না। আসলে সবটুকু অপেক্ষা করে সময়ের উপর। আমরা আজ যা ভেবে নতুন করে উপন্যাস লিখতে বসি, তা অনেক কাল আগেই লিখে গেছে সময়। হয়তো অন্য ভাষায়, হয়তো এই চেতনায় সেখানে ছিল। তাই ভাষার গল্পে নতুন করে আর কিছুই হবে না। তবে নতুনত্ব কোথায়।

আগেও বৃষ্টি হতো। এখনও হয়। আগেও নাটক হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তবে…. আসলে যুগের সাথে আমরা স্মার্ট হয়েছি। তাই বৃষ্টি একই থাকলেও আমাদের সহ্যশক্তি কমেছে। আগে কত সময় লোর্ডশেডিং হত। কারেন্ট এলে সকলে চেঁচিয়ে উঠতাম। এখন তো কারেন্ট তেমন যায় না শহরে। আমি শহরতলির কথা তেমন বলছি না। সেখানে এখনও কারেন্টের জন্য কষ্ট পেতে হয়। তাই তাদের এসি মেশিনের চাহিদাও কম। তেমনই নাটকের আগের থেকে এখনকার যুগে বিশ্বায়ন অনেকটাই বেশি। মানুষ এখন নাটক রেকর্ড করে টিভিতে প্রচার করছে। বিজ্ঞাপণের সাথে মানুষের চাহিদা বোকাবাক্স মিটিয়ে দিচ্ছে। তা ঠিক তবে এখনকার নাটকে অনেক বেশি পেশাদারিত্ব এসেছে। একটু হলেও টিভি সোপ সিরিয়ালের মতো পেশাদারিত্ব এসেছে। মজার বিষয়। সেটাই নাটককে অনেক বেশি জনপ্রিয় করছে। কারণ একটু অন্যরকম কিছু না হলে পাবলিক খাবে না। টেকনলিজির উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিরও উন্নতি হয়েছে। আনপ্রেডিকটেবল। কখন যে ভাসাবে, কখন যে কাঁদাবে তা আগে থেকে বলা যায় না। অভূতপূর্ব এক জীবন সংগ্রাম। বৃষ্টির মতোই আমাদের জীবন কেঁদে চলে, হেসে চলে। জলের নাম জীবন। এই তো মুশকিল জল বললাম। পানি, ওয়াটার বললাম না। আসলে সবই তো মিথ। জলও মিথ। জীবনও মিথ। আমি আছি, আমি নেই। আপনি আছেন, আপনি নেই। পাঠক বই কিনছে, বই কিনবে না পাঠক। ছন্দ পতন। হ্যাঁ। পিডিএফ, ইপাব যুগে ছন্দপতনের ডেটা ব্যাংক তৈরি হবেই। সেটা বুঝতেই হবে। চিরকাল মার্কসবাদীয় ভাবনা থাকবে না। পন্থা থাকবে কিন্তু মতবাদ বদলাবে। টেস্ট, ওয়ান ডে ষাট ওভার, তারপর পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে…হালফিলে টি-টয়েন্টি। বৃষ্টির একালেও তেমন ধারা পরিবর্তন হয়েছে।

এই জাতীয় ধারা পরিবর্তনের পথ ধরেই বৃষ্টির ভাবনারা পাল্টেছে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির চলটা বেড়েছে। এটা অনেকটা টি-টয়েন্টি। আগে এটা ছিল কম, আগে ভিভ রিচার্ডসের মতো মানুষ ছিল হাত ঘুরিয়ে খেলার। এখন তো সব কোচিং সেন্টারে তা হচ্ছে। মুষুলধারে ব্যাটিং। কালবৈশাখী আগে মার্চ মাস থেকেই দেখা যেত। এখন দেখা যাচ্ছে এপ্রিলের শেষে। ভূমিকম্পের প্রকোপ আগে কলকাতা কম দেখেছে। এখন ফি বছর। অ্যাডভান্স হচ্ছে। আপগ্রেড। সব কিছুই স্রোত। বহমানতা। প্রবাহমান সময়। চলন্ত এক দিশা। দিশাময় দৃষ্টান্ত। কোর পৃথিবীর প্রকৃতি তা বুঝেছে। তাই নিম্নচাপের ধরন বদলালেও তা ফিরেছে আরও ভয়াবহ হয়ে। বৃষ্টির মতো শহুরে মানুষ রোজ কাঁদছে। আমরা সেই কান্নাদের বুঝতে পারি না।

এই সময় ছেলে মেয়েরা কতটা একা তা অভিভাবক বোঝে না। একটা অনুষ্ঠান চলছে। বাবা স্টেজে। পুত্র দর্শকের আসনে। তবু সে বসে না। সে দাঁড়িয়ে থাকে। পাশে। দূরে। কাছাকাছি বাকিদের সাথে মিশছে না। কারণ তার মানবিক গঠন সেই প্রকার। বাবা কিন্তু তা বোঝে না। সে মিশুকে। সে স্টেজে। ছেলে নিচে দাঁড়িয়ে চুপ করে ভিডিও করেই চলেছে। (যদিও সেই ভিডিও আর দেখা হয়নি, ছেলে দিতে পারেনি হয়তো, একটু লাজুক)। ছেলেটি বাবার মতো নয়। লাজুক। কিন্তু প্রশ্ন কেন। কারণ ছেলে এই যুগের মতো। নেট স্যাভি। সে অন্য ঘরানায় মানুষ। সে বাবার মতো প্রাণোজ্জ্বল নয়। সে তার নিজের জীবনের বেঁচে থাকা, মারা যাওয়ার আলাদা সীমারেখা করে নিয়েছে। এখানেই প্রজন্মের কালো মেঘ। এখানেই যুগের সাথে বদলে যাওয়া সময়। দুই প্রজন্ম পাশাপাশি হাসে, কাঁদে, ছবি তোলে। তবু বাবা বোঝে না ছেলের মনের মধ্যে কী চলছে। বাবা যা বলে তা চলতে থাকে। বলে ইটস ওকে বাবা। তুমি তো বলনি আগে। আচ্ছা। কিন্তু এই সন্তানরা কতকাল বাধ্য থাকবে। বিস্ফোরণ তো হবেই। তখন বাবা বলবে এই যুগের সব বাজে। আগে ভাল ছিল। আসলে সব যুগেই বৃষ্টিরা বৃষ্টির মতোই থাকে। রূপ পাল্টায় সময়ের সাথে। বৃষ্টির কথারা পাল্টায়। যেমন রবি ঠাকুরের গানটি…এমনও দিনে তারে বলা যায়….এটা বয়সের সাথে মানে পাল্টায়। তেমনই বৃষ্টি একই থাকে, আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টায়। যে আজ ছেলে, সে কাল বাবা হলে একই কথা বলবে। আমাদের যুগে ওয়াই ফাই ছিল। জিও কানেকশনে খেলা দেখতাম। সে আলাদা নস্টালজিয়া। এখন তো মাথায় সার্জারি করে চিপ বসানো। সেই নেট ফাস্ট স্লো সেটা বুঝবি কী করে…মোবাইলের সেই বাটখারা যুগ…নস্টাল বটে। তবে তখন কালো মেঘের বৃষ্টির গল্পরা বৃষ্টি ভিজিয়ে আসত। এখন বৃষ্টির ভেজা চুলে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা ….ক্যাটাসটফ্রি নিয়ে নাটক তেমনই সমাপতন হয়। বস যাই বলুন বৃষ্টি রয়েছে বৃষ্টির মতোই। আমরা আরও একটু দূষণ বাড়িয়েছি। এটাই ডিফারেন্স। তাই তো বন্ধ হয়ে যাওয়া বাইক একটু কম দামে কেনার হিরিক এই তৃতীয় বিশ্বেই সম্ভব।

বৃষ্টি এখনও বর্ণহীন এক সুখ যাপন

তোমার মতোই বড্ড কাছের আপন

নব প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা তেমন খেলাধূলো কম করে। তাই মানসিক এক বিভেদ। তাই বেঁচে থাকার মাঝে এক না। না সত্য নিয়ে বেঁচে। সবই হচ্ছে, সবই পাচ্ছে। আবার কিছু পাচ্ছে না। আসলে সুখ বলতে যা বোঝায় তা মিসিং। এখনকার দিনে বৃষ্টিতেও তা বলতে গেলে মিসিং। আগে বৃষ্টি হলে আমরা ভিজতাম। এখনকার ছেলে মেয়েরা তখন ফেবু তে ফিলিং হ্যাপি লিখতে ব্যস্ত। আরে আগে তো ভিজতে শেষ। তবে তো রোদ্দুরে শুকিয়ে মানুষ হবি। সেই খেলা এখন কেউ খেলে না। আমরাও বৃষ্টি উন্মাদের মতো ভিজে খেলেছি। পুরো সাদা হয়ে যাওয়া মাঠে কাদা। ধুপধাপ। এখন সকলে চেলসি, বার্সিলোনা বা মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল করে। তবে কতজন মাঠে নেমে খেলে। তবু এখন সব আপগ্রেড। হয়তো কিছু আফ্রিকা বা ব্রাজিলিয় ভাড়া করে এগিয়ে চলবে ভারতীয় ফুটবল। সকলে বাইচুং, সুনীল ছেত্রী হয় না। কঠোর পরিশ্রমের সেই বারিষনামা মিসিং। তাই বলে নিন্দুক বলবে এখন কিছু হচ্ছে না, সেটা শুনছি না। এখন তো ওয়াই ফাই ফ্রি জোন হয়েছে। সেই কানেকশন নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৃষ্টিতে ভিজে নিন মশাই। এরপর হয়তো সেই পার্কের উদ্ভোধনও দেখব। আশায় রইলাম এই সাদা নীলের দিনে। আমি ছোটবেলা থেকেই এই দুটি রং ভালবাসি। কী করে জানব তা মিলে যাবে। বৃষ্টির প্রথম ফোটারা সত্যই অনন্য। লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বস রবিবার দুপুরে খেয়ে ঘুম দিলে তো গাছ বাঁচানো যাবে না। তাই নেমে পরতে হবে রাস্তায়। গাছ বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে। গাছ থাকলে আমাদের বৃষ্টি অনুপাত ঠিক থাকবে। বৃষ্টি তার নিজের সবুজ অনুপাত জোগাড় করে নেবে। প্রকৃতি আমাদের থেকে অনেক ভাল অঙ্ক জানে। আমরা বিজ্ঞানি হয়ে যা বলব, সে তার অনেক আগে সেই গাছের ক্লোরোফিল মেপে নিয়েছে। ঠিক সময় এই মানুষ নামক প্রাণীকেই সরিয়ে দেবে। প্রজেস্ট্রেরন, ইস্ট্রোজেনের টগবগে রক্ত, বুদ্ধীজীবী হতে পারো….কখনই খ্যাতিমান হয়ে প্রকৃতি হতে পারবে না। আমরা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনাই জানাতে পারি। কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করতে পারব না। প্লাবনের বৃষ্টিরা প্লাবন নিয়ে আসবে। বানভাসি হবে শহর সভ্যতা। কিন্তু তা তৈরির পিছনে কেবলমাত্র প্রকৃতি রয়েছে। আমরা তা তৈরি করতে পারব না।

গুছিয়ে নিতে জানি না আমরা মৃত ছাই

ভুল লিখে যাই, কারণ ভাষাকেই ভাবাই…

আমাদের বৃষ্টি অনুপাত ঠিক রাখতে যে পারব না, তা বুঝেছিলাম, যবে থেকে ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি শুরু হল, কিন্তু পুকুর ভরাট, বৃক্ষচ্ছেদন আর রেন ওয়াটার পাইপের উপর কোনও নিয়ম হল না। এখনও এই সরকার এ নিয়ে মাথায় ঘামায়নি। কেবল পাম্পিং স্টেশন করেই চুপ। শহর এখন লন্ডনের টেমসের পাশে কতটা সুন্দর হল কে জানে। তবে বৃষ্টি আসছে। বৃষ্টি তার নিজের মতো করে হচ্ছে। বনসাই সভ্যতার প্রজন্ম এখন। তাই একটু নিজের মতো করে বর্ষা অনুভব করছে। কালবৈশাখীর সেই শিলা বৃষ্টির দিন নেই। কারণ একটাই। বাষ্পীয় জলকণা অনেক উঁচুতে উঠতেই পারছে না। এখানেই সমস্যা। জল বাষ্প কম হচ্ছে। সেই জল তবে কোথায়…শুকিয়ে যাচ্ছে কেন আগেও বলেছি, আমরা শহুরে। ডিপটিউবওয়েল থেকে জল তুলে বিনোদনে আজকে মেটাচ্ছি। দরকারে অ্যাকোয়াগার্ডে এক্সট্রা আইরন ফিল্টার লাগাচ্ছি। এটাই নিয়ম, দস্তুর। ভাল মন্দ তো নিন্দুক বলবে। আমি বলছি এই সময়ের কথা। দেখুন না বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে জানি, তবু আমি লাইক পাওয়ার লোভে বৃষ্টি নিয়ে ভাটবাজি করেই চলেছি। ভাটবাজি করেই বাঙালি গেল। এই বলে আপনি চলে যেতেই পারেন, তবু জানবেন বাঙালির একটা রবি ঠাকুর ছিল। আছে। থাকবে। তাকে বেঁচেই ভাষা বাংলা খাবে। কারণ একটাই। সে তো বহমান ভাষা। বৃষ্টির মতো রিফ্রেশিং। মেঘের মতো থান্ডারিং। খুব কিউট। আমি সোনার তরীতে ভেসেই শেষের কবিতায় পৌঁছাব। কই হে বৃষ্টি…হোল্ড ইউর টাং…লেট মি লাভ…দোহাই দোহাই…ভিজতে দে…আমার ঠোঁটে এখন শুধু বৃষ্টির বিন্দু…কোন নিন্দুকরা যেন বলে হাসমি যুগ…আমি বলি –

ভালবেসেছো বলেই রয়ে গেছে আজও অভিমান

কবিতার হাত ধরে চলাই মানবতার সুপ্ত অভিযান

ভেসে চলা রোদ্দুরে মেঘের হংসবলাকায় সুখ টান

পেরিয়ে আসা সময় মনে করায় জীবন তো বৃষ্টিযান…

 

 

(৪) বৃষ্টিবোতলের মৃত টিকটিকি

~~~~~~~

যখন একটি মেয়ে ধর্ষিত হয়, সে কিন্তু সুখ পায় না। বেদনা। কারণ তা নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ। মানসিক ভাবে পুরুষের দল নিয়ম না মেনে যা করে চলেছে। আবার অনেক নারীও বর্তমান সময়ে একই কাজ পুরুষের উপর করছে। কেবলমাত্র বীর্য সুখ নয়, চাইছে উইকএন্ডে মল, রেস্তোরা, সেলফি, সিনেমা। এক সমস্যাবহুল ভাবনা। বেঁচে থাকার অনন্য এক চেতনা। ধর্ষণের দুই ধারে পুরুষ ও নারী। মাঝে হাইওয়ে এগিয়ে চলেছে। বদ্ধ পাগল এক সভ্যতা কোন দিশায় এগিয়ে চলেছে তা নিজেই জানে না। এই ভাবনারা আমার মস্তিষ্ককে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ধর্ষিত বোতলের কান্নারা বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন এক কুয়াশা। নাটকের ড্রপসিনের আড়ালে প্রপস সাজানো চলছে। কে সাজাচ্ছে প্রপস। সেই বৃষ্টিরা। কত অভিনেতা নেত্রীরা টাকা পায় না। তবু শ্রম। নিয়মানুবর্তিতা। সেই বৃষ্টিরা সব বোতলে বন্দি হয়। একদিন সে সব মৃত আত্মারা টিকটিকির খোঁজ পাবে।

টিকটিকিটা রোজ ঘরে পোকা খায়। শাকসবজির অংশ বিশেষ খায়। খায় ফল। আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। খাদ্য শৃঙ্খলের পরিবর্তন। ছোটবেলায় এই খাদ্য উল্লাস দেখিনি টিকটিকিতে। নতুন এক ভাবনা। নতুন করে মৃত টিকটিকিদের নিয়ে চলা পিঁপড়ের দলকে মনে পড়ে। কারণ পিঁপড়ের এই গরমকাল সোনার ফসল। বৃষ্টির আগে সময়। খাদ্য ও ডিম ঘরে তোলা। আমরা যেমন সুদের জন্য টাকা তুলি ব্যাংকে। তেমনি এখন এটাই মজার সময় পিঁপড়ে শৃঙ্খলার। শৃঙ্খলা। যারা ধর্ষণ করে তাদেরও কি এই শৃঙ্খল আছে। দলবদ্ধ ধর্ষণ হলে তো নিয়ম থাকেই। একে একে আসে। সারিবদ্ধ। একে একে খাদ্য খাদক। আবার সেই নারী যখন থানা আদালতে যায়, সেখানেই ধর্ষিত হতে হয় মানসিক ভাবে।

ধর্ষিত সেই মেয়ে কাঁদে না। চুপ থাকে। তার কান্না তো বোতলে বন্দি। টিকটিকিরা দেখছে তাকে। সে কাঁদলে তো আরও গাল শুনতে হবে নিজের ঘরে। তাই চুপ। সমাজ তাকে নিয়ে মোমবাতি জ্বালতেই পারে। জ্বালাতনের এক মৃত দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা মেয়েটি। এমনই হয় ধর্ষিত নারীদের। যখন একটি ছেলে প্রেম করে, তারপর ছেড়ে চলে যায়, তখন এমন হয়। মেয়েটি বড় একা। পুরুষ জাতি তার কাছে ঘৃণ্য। সেই পুরুষের ভালবাসার চুমুরা তখনও ঠোঁটে লেগে। তবু সে নারী মনে মনে ধর্ষিতা। সব সময় একা করে দেয়। একা বাঁচা যে কষ্টের। একা থাকার যে কোনও মূল অধিকার নেই সমাজে। একা বেঁচে থাকলে তো আর যাই হোক ভয় গ্রাস করে। নারী তো বাঁচতে চায়। টিকটিকিরা তাকে বোতলের বাইরে আসতে দেয় না। বোতলেই কান্না হয়ে থেকে যেতে হয় আলোকবর্ষ। এভাবেই নারীরা ধর্ষিত না হয়েও প্রেম হারা হয়ে ধর্ষিত। আসলে এখন তো মানুষ টাকাকে বিয়ে করে। মনকে বিয়ে করে না। শান্তি চায় না। চায় শুধু ফোনের সেলফি স্ট্যাটাস। ক্লান্ত লাগে। এই অনন্ত শান্তি ভুলে যারা মহাভারতীয় দ্রৌপদী হয়ে ওঠে, তাদের জন্য অর্জুন নেই। তাদের প্রচন্ডরকম ভীম দরকার। আজ ভারতীয় সংবিধানে ভীষ্মকে প্রয়োজন। প্রয়োজন নৈতিক অবসন্নতা থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে তুলে আনার। নৈতিকতা নেই রাজনৈতিক দলের সেবায়। কেবল ভোট। কেবলই মসনদের ক্ষমতা। শিবাজীর মতো দুর্গ জয়ীদের দরকার। আত্মত্যাগের বৃষ্টিরা আসুক এই তপ্ত ভারতবর্ষে। দরকারে যুদ্ধ হোক। মাওবাদী স্টাইলে স্বাধীনতা আসবে না। স্বাধীনতা দরকার মননের। শিক্ষার। সেই লড়াইয়ে পথপ্রদর্শক নেই। এখন কেবলই মায়া যুদ্ধ। টাকার মায়া। টাকা বৃষ্টি চায় মানুষের দল। ফ্রিতে সব কিছু চায়। শান্তি আর সুখের জন্য চাই অধ্যাবসায়। যা দিতে পারে নারী। নারীকেও সঠিক পথটা বুঝতে হবে। শৃঙ্খলহীন নেশায় মেতে উঠলে নারী তোমাদেরও ধর্ষিত হতে হবে। ঐ যে টিকটিকিরা বসে। বোতল থেকে বেড়লে নারী হয়ে এসো। আধুনিকতার মা সারদা হয়ে এসো। নারী মানে শরীর দেখানো নয়। এটা বুঝে গেলেই দাড়িপাল্লা সমান হয়ে যেত। মৃত টিকটিকিরা জাগত না ডাইনোসার হয়ে। একদিন বুঝতে। মুষুলধারে তোমরা কাঁদবে। নারী বুঝতে তোমাকে হবেই। স্বাধীনতার সীমারেখা।

চাঁদের আলোতে দেখুন, চাঁদের কলঙ্ক আছে। আছে জোনাকির গায়ে আলো। সেই সব আলোতে গঙ্গার চারপাশ নতুন হয়ে ওঠে না কেন! আনমনা আলো কেন জ্বলে না আঁধারে। খুব কষ্ট হয়। তাই চাই বৃষ্টি। গরমের জানলার সমানে ঘুম আসে না রাতে। ঘুম দরকার। সেই ঘুম তো বৃষ্টিরা দিতে পারে। বৃষ্টির মায়াজালের বোতলে জিনি বন্দি। সে বন্দি দশার মনের মুক্তি দরকার। মুক্তো তো ঝিনুকে বন্দি। তবু জাগচ্ছে মুক্তো হয়ে। ঐ মৃত টিকটিকিরা এখন পিঁপড়ের পরিবারে আলো। কত পোকা ভাবছে আমাকে আজ রাতে আলোর সামনে খাবে না। অথচ ভাবনারা এগিয়ে চলে। ফসফরাসের ঝি ঝি শব্দে জেগে ওঠে চাঁদের মতো জোনাকি। রংমশাল জ্বেলো তুমিও। ছড়িয়ে দিও দ্যুতি। বড্ড প্রয়োজন। তোমার হাসিতে সেই মুক্তির আশা আকাঙ্খা দেখতে পাই। আমি বাঁচতে শিখি।

সবুজ এক রাতের জঙ্গলে চাই না ধর্ষিত হোক নির্ভয়ারা। চাই না বাসের মধ্যে কেউ নারীকে পণ্য ভাবুক। আমরা আবার মৃত টিকটিকির থেকে মুক্তির বৃষ্টি চাই। ঐ মেয়েটা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে এই টিকটিকি স্বভাব থেকে মুক্তির সময় এসেছে। নারীকে নারীর মতো স্বাধীনতায় বাঁচতে দিন। সেটাই দরকার। দরকার আক্রোশহীন এক সমাজের। একদিন বুঝবেন এই নারী তো জগতের পালক। আদ্যাশক্তি তো আসলে নারী। নারীর চেতনার থেকেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সৃষ্ট। যীশুর চাই মাদার মেরী। গৌতমী না হলে গৌতম বুদ্ধ হতো কী….ভাবনারা ধর্মে নয়, কর্মে থাকুক। আমার এই বেশি করে জানার ইচ্ছারা বাঁচুক তবে তা সৃষ্টিশীল হোক। একা একা একটা সভ্যতা বৃষ্টিবোতলের দৈত্য। দরকার নেই তাই মৃত টিকটিকির। দরকার কেবল ভাল বাসার….ভাল এক বাসা…ভালবাসা। না বুঝলে আজ সন্ধ্যায় একবার তারাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়ান। দেখুন আকাশ। মুক্তির স্বাদ পাবেন। বৃষ্টি তো কালবৈশাখী নয়। তবু দেখবেন চোখের কোণে বৃষ্টি বিন্দু আসবে। মন খুলে একবার হাত দুটো প্রসারিত করুন। বলুন এ আকাশ তুমি শুধু আমার দেখবেন মৃত টিকটিকি মন ভ্যানিস হয়ে যাবে। বৃষ্টি বোতল বলে উঠবে….বৃষ্টিকথা। মনকেমনিয়া এক সন্ধ্যে শুধুই আপনার…

 

 

 সোমাদ্রি সাহা   04/06/2017

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here