সম্বোধন
নীল অভিজিৎ
সনটা ১৯৮৫, তখন সদ্য পুনেতে চকুরিরত। চাকরি প্রসঙ্গে বিশেষ কিছু অভিজ্ঞতা ছিল না । সবিস্তারে ভালো করে তখন কিছুই জানতাম না । অফিসের পাসেই চারতলা ব্যাচেলার হোস্টেলে একটি ঘরে দুজনে ভাগাভাগি করে থাকবার একটা জায়গা পাই । মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে চাকরী জীবনে প্রবেশ সুতরাং, কেমন হবে নিজস্ব কাজকর্ম ? কেন্দ্রীয় সরকার, রক্ষা এবং অনুসন্ধান বিভাগে, কি ধরনের কাজ হয় ? ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে মনে মনে বিস্তর চিন্তা ভাবনা। চাকরির প্রথম সপ্তাহে যা কিছু জেনেছিলাম সবই তখন ভাসাভাসা । সিনিয়রদের সন্মান করতাম আর তার পরিবর্তে পেতাম ওদের থেকে প্রচুর সহায়তা । আমার মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ দেখে, বিভাগ অধিকারী পি উ দেশপাণ্ডের সুনজরে সহজেই পড়েছিলাম। সকালে দেখা হলেই ‘Good Morning’ বলে সম্বধোন করাটা যে চাকরি জীবনের একটা বিশেষ চল, শুরুতেই তা শিখে ফেললাম। অবিবাহিত যুবক, অফিস ছুটির পর বাড়ি ফেরার বিশেষ কোন আগ্রহ পেতাম’না, প্রতিদিন তাই সন্ধ্যার পরে এক-দেড় ঘণ্টা করে অফিসে বসে কাজ করতাম বা শিখতাম। বেশ মনে আছে, ফাঁকা অফিসে মাঝে মধ্যে দেশপাণ্ডে সাহেব আমাকে চা খাওয়ার জন্যে ওনার ঘরে ডেকে নিতেন । সকাল সকাল ওনাকে দেখলেই আমি ‘Good Morning’ বলতাম, তার প্রত্যুত্তরে, ‘Good Morning – অভিজিৎ’ সম্বধোনটা ওনার কাছ থেকে ফিরে পেতাম এবং তাতে অফুরন্ত কর্ম উদ্দামতা মনে জেগে উঠত। এই ভাবেই প্রায় বছর ঘুরে গেছে, আর আমিও অফিস কাজকর্মের সাথে বেশ সাব্যস্ত হয়ে উঠেছি, ক্রমে ক্রমে দেশপাণ্ডে সাহেবের বেশ সান্নিধ্যে চলে এসেছিলাম। হটাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম, প্রাতঃকালীন সম্ভাষণে দেশপাণ্ডে সাহেব Good Morning এর প্রত্যুত্তরে, শুধু আমাকেই Good Morning বলে সাড়া দেন, আর বাকী সিনিওরদের ‘Same to you’ বলেন !
কৌতূহল বসত তাই একদিন ওনাকে জিজ্ঞাসা করে বসলাম, স্যার, এটা কেমন কথা, আমার ক্ষেত্রে ‘Good Morning’, আর বাকী সিনিওরদের ক্ষেত্রে ‘Same to you’ বলেন কেন ?
একটু হেসে উনি বলেন, “কার মনে কি লুকিয়ে আছে মুখের মিষ্টি কথায় সেটা ধরা বড় কঠিন, কেউ হেসে ভালো সম্ভাষণ করলেও, মনে মনে অকথ্য গালিও দেয় । সেজন্যেই কেউ ‘Good Morning’ বললে, তার প্রত্যুত্তরে ‘Same to you’ বলে সম্বোধন করি” । শুনে আমি, হা হা হা… করে হেসে ওঠাতে, দেশপাণ্ডে সাহেব মৃদু হেসে বলেন, এখন কমপক্ষে দু’বছর প্রত্যুত্তরে তুমি ‘Good Morning’ শুনবে, তারপর ‘Same to you’ শুনবে ।
ওনার কথাটি শুনে তখন উপলব্ধি করতে পারলাম, জীবনে experience এর সাথে confidence level যতই বাড়ে, ততই গালাগালি ও পীড়ন বাড়তে থাকে, আর এর মাঝেই নিজস্ব স্থানটাকে নিশ্চিত করে নাওয়ার নাম, চাকরি । সত্যি কথা বলতে আগাম জেনে মনেতে বেশ আনন্দ হয়েছিল, দু’বছর বাদেই চাকরি জীবনে আমি প্রথম ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন পাব, এবং কারোর মুখের বিপরীত ভাষা, সেদিন থেকে পড়তে শিখেছিলাম ।
নীল অভিজিৎ: 21/06/2017