[ad_1]
বাংলাদেশের ইলিশ? নাকি আগুন? কলকাতা হাওড়ার বাজার কাঁপাতে ঢুকলো পদ্মার ইলিশ। একেবারে অবিশ্বাস্য দাম। পুজোর মুখেই মাথায় বাজ। হাসিনা সরকারের জুড়ে দেওয়া শর্ত ঘেঁটে ঘ। ৩০ নয়, ইলিশ আমদানি বন্ধ হবে তার আগেই? কেন পুজোয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বাঙালির পাতে থাকাই চাপের? বাংলাদেশ কথা রাখলো, এলো টন টন ইলিশ! চক্ষু সার্থক হলেও, পদ্মার ইলিশ এপার বাংলার হেঁসেলে পৌঁছলো কী? বাংলাদেশ থেকে আমদানির প্রথম দিনে সত্যিই কী বাজারে পড়ে মার খেল পদ্মার ইলিশ? এটাও কী সম্ভব? হ্যাঁ। বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি ৮২০ টাকায় এনে কলকাতার পাইকারি বাজারে পদ্মার ইলিশ বিক্রি হলো তার দ্বিগুণ দামে।
আর সাধারণ খুচরো বাজারে? ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ খুচরো বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশের দাম হয়ে যাচ্ছে ২ হাজার-২ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে দাম বেশি, সাফ কথা বিক্রেতাদের। গতবারের তুলনায় দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে আর তাতেই পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান কার্যত বাজারে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল। মরসুমের প্রায় শেষ। বর্ষা যায় যায়। সামনেই পুজো। বাঙালি -কলকাতা পদ্মার ইলিশের স্বাদ পেতে চেয়েছে বারবার। কথা দিয়ে কথাও রেখেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সৌজন্যে রাজ্যের বাজার ভরল ঠিকই পদ্মার ইলিশে। কিন্তু মন ভরলো কি? ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রফতানি করার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সেই মতো ট্রাকে করে প্রথম দিনেই ৭০ মেট্রিকটন ইলিশ এসেছে। পাইকারি বাজারে দোকানিদের ভিড় দেখা গেলেও, চড়া দামের ধাক্কায় হাত ছোঁয়াতে পারেননি অনেকেই। প্রতি বছরই দুর্গা পুজোর আগে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসে ভারতে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের দাম যেমন বেশি, তেমনই এবার রয়েছে কিছু শর্ত। আর সেই শর্ত সামাল দিয়ে ইলিশ রপ্তানি করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়ার জোগাড়।
প্রথমত, ৭৯ জন রফতানীকারক ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি করতে পারবেন অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দ্বিতীয়ত, ফিস ইনপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন বলছে ইলিশ প্রজননের জন্য আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন বা সরবরাহ পুরোপুরিই বন্ধ থাকবে। আর এখানে শুরু যত সমস্যার। তাহলে পুরোপুরি ৩৯৫০ টন ইলিশ ও কী এসে পৌঁছবে না ভারতে? সরকারি ওই নির্দেশের কোনটা কে কিভাবে মানবে, সেটা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে নানান প্রশ্ন। রয়েছে কনফিউশন। সীমান্তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে মাছ রফতানি করতে দেবে না বাংলাদেশর কাস্টমস কতৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ইলিশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলো মনে করছে, ১১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ইলিশ পাঠাতে পারবে কলকাতায়। আর হিসেব বলছে, ওই সময় পর্যন্ত গড়ে রোজ ৭০ টন করে ইলিশ পাঠাতে পারলেও ১ হাজার ৪০০ টনের বেশি ইলিশ রফতানি সম্ভব নয়। ফলে পুজোর মুখে বাংলাদেশের ৭৯ টি রফতানী কারক প্রতিষ্ঠান সহ কলকাতায় ইলিশ আমদানিকারকরা বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
আগেও জানিয়েছিলাম সারা বছর বাংলাদেশ এক ছটাকো ইলিশ রপ্তানি করেনি ভারতে। তাই একমাস বা ৪৪ দিনের জন্য টোকেন হিসেবে কিছু ইলিশ রপ্তানি করার কথা ছিল। এমনিতেই গত ১১ বছর ধরে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ঢাকা। তারপরেও উৎসবের মৌসুমে বাংলাদেশের ইলিশ কম পরিমাণে হলেও ভারতে ঢোকে। তাতে কলকাতার মন ভরে না। দীঘা ডায়মন্ড হারবারের ইলিশ দিয়েই কাজ চালাতে হয়। সেদিক থেকে পদ্মার ইলিশ এপার বাংলার কাছে একটা বড় পাওনা। কিন্তু এবার সেই ইলিশ এর বাজার একেবারে আগুন। পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ১২টি ট্রাকে করে ৭০ মেট্রিক টন তাজা ইলিশ ঢুকেছে ভারতে। প্রথম দিনের সেই চালান হাওড়া বাজার হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। মূলত বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদী থেকে ধরা ১ কেজি ওজনের ইলিশ বেশি রয়েছে। পদ্মার ইলিশ দেখতে দোকানের সামনে ভিড় করেছেন অনেকেই, কেউ কেউ তুলেছেন সেলফিও। মধ্যবিত্তের হেঁসেলে ঢুকতে পারবে কি পদ্মার ওই চকচকে রূপলি ফসল? আমদানি কম, দাম বেশি।
গত বছরও একইভাবে রফতানীর অনুমোদন হয়েছিল ২ হাজার ৯০০ টন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের আমদানী হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন। তবুও, পুজোর আগে বাংলাদেশ এর ইলিশে বাজার ছেয়ে যাবে এটা যেন বাঙালির ইমোশন। ২০১৯ সাল থেকে দুর্গা পুজোয় বিশেষ উপহার হিসাবে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছরই নিয়ম করে পদ্মার ইলিশ রফতানি করে শর্ত সাপেক্ষে। তাতেই সই। সবদিক দেখে বুঝে দুর্গাপুজোর উপহার হিসেবে বাংলাদেশের ইলিশ আসে তো ভারতে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়