Home আপডেট শিহরণ জাগানো ২১ ফেব্রুয়ারি

শিহরণ জাগানো ২১ ফেব্রুয়ারি

শিহরণ জাগানো ২১ ফেব্রুয়ারি

আবার একটা 21 ফেব্রুয়ারি। গায়ে শিহরণ জাগানো দিন। দিনটি বাঙালিদের কাছে এক দুঃখজনক দিন, যা আবার গৌরবেরও।ভাষা আমাদের গর্ব, আমাদের প্রান।

২১শে ফেব্রুয়ারি অমর ও চির অমলিন। ৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা মানেনি বাঙ্গালী ছাত্র জনতা।1952 সালের এই দিনটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। আর এর প্রতিবাদেই গর্জে উঠেছিলেন বাঙালি,চলেছে লড়াই। ঝরেছে রক্ত। বিক্ষোভ মিছিলে কেঁপে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশ। শেষমেশ জিত হল সত্যের। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষা পেল নতুন পরিচয়। ‘বাংলা’ ভাষার মোড়কে ঢেকে গেল গোটা বাংলাদেশ। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেসকোর ৩০তম অধিবেশন বসে। ইউনেসকোর সেই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার আগে, এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি শোনা যায়, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ দাবি তোলা হয়।

দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হওয়ার পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারি লাভ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। ইউনেসকোর ঐতিহাসিক সেই অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের মূল প্রস্তাবক ছিল বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব। আর সমর্থন করেছিল আইভরি কোস্ট, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কমোরোস, ডোমিনিকান রিপাবলিক, পাকিস্তান, ওমান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপিন, বাহামাস, বেনিন, বেলারুশ, গাম্বিয়া, ভারত, ভানুয়াতু, মাইক্রোনেসিয়া, রুশ ফেডারেশন, লিথুয়ানিয়া, মিসর, শ্রীলংকা, সিরিয়া ও হন্ডুরাস।

১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ শুধু বাংলা ভাষার বিশ্ববিজয় নয়; পৃথিবীর সব মাতৃভাষার জয়।

আক্ষেপ এটাই যে শহিদদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে নেওয়া বাংলা ভাষা-র অধিকারকে আজ কেউ কেউ পদদলিত করছে।বাংলার সংস্কৃতিকে সন্মান করে না, বাংলার বিরুদ্ধে কুত্‍সা রটায়।বাঙালি হিসাবে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরই। বাংলার সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা-কে রক্ষা করতে হবে। তাই, আজ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা আমাদের গর্ব বাংলা ভাষা-র জয়ধ্বনি দিয়ে সকলে একসাথে বলি –

ভুলিনি তোমায় শত ভাষার মাঝেও আগলে তোমায় রেখেছি,
তুমি-ই যে আমার মাতৃভাষা বাংলা, আমি তোমায় ভালোবেসেছি।