Home আপডেট মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কী সিদ্ধান্ত বাবুলের – বিদায় বিজেপি না আলবিদা রাজনীতি ?

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কী সিদ্ধান্ত বাবুলের – বিদায় বিজেপি না আলবিদা রাজনীতি ?

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কী সিদ্ধান্ত  বাবুলের –  বিদায় বিজেপি না আলবিদা রাজনীতি ?

 ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে  নরেন্দ্র মোদি  আসানসোল  থেকে  বাবুল সুপ্রিয়কে জিতিয়ে,  বিজেপির সাংসদ বানিয়ে , তাঁকে দিল্লি পাঠিয়ে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। ২০১৯ সালেও বাবুল জিতেছেন আসানসোল থেকে। শুধু তিনি নয়, বাংলা থেকে বিজেপির ১৮জন সাংসদ জিতেছিলেন। প্রায় সকলেই ধরে নিয়েছিলেন বাংলা থেকে এবার অন্তত ৪-৫জন মন্ত্রী হবেন। ক্যাবিনেটেই হয়তো ২জন থাকবেন। তার মধ্যে একজন নিশ্চয়ই বাবুল। কিন্তু সে হিসাব মেলেনি। মোদি বাবুলকে যেমন প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী করেননি তেমনি বাংলা থেকেও মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়াননি। তবে এবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার জেরে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বাংলা থেকে ৪জন সাংসদকে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করেছেন মোদি। কিন্তু সেই তালেই গদি গিয়েছে কেন্দ্রের দুই প্রতিমন্ত্রীর। যার অন্যতম বাবুল। আর এর পরে পরেই বাবুলকে ঘিরে ক্রমশ জল্পনা ছড়াচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।

বাবুলের শুধু গদিই যায়নি, বঙ্গ বিজেপি থেকে তাঁকে শোকজের নোটিসও ধরানো হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবুল এতে অপমানিত বোধই করেছেন। আর তার জেরেই তিনি দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। কিন্তু কী সেই সিদ্ধান্ত? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে বাবুল ও মন্ত্রীত্ব খোয়ানো অপর সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে দলের সাংগঠনিক কাজে লাগানো হবে। কিন্তু তাতে কী বাবুলের সায় মিলবে? শোনা যাচ্ছে বাবুল এখন মূলত দুইটি পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন। এক রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া আর দুই বিজেপি ছেড়ে দেওয়া। আর এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রেই চলে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল। বাবুলকে বেশ পছন্দ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।  বাবুল নানান সময়ে তৃণমূল, তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেও মমতা নিজে যেমন সেসব নিয়ে সরব হননি তেমনি তৃণমূলেরও কাউকে দেখা যায়নি বাবুলকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করতে।

বাবুলের মন্ত্রীত্ব যেতে মমতা নিজেই প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘ওরা আবার কী দোষ করল!’ মানে বাবুল আর দেবশ্রী। দ্বিতীয়জন প্রথম থেকেই সংঘঘনিষ্ঠ। সেই সুবাদেই রায়গঞ্জ থেকে ভোটে জিতে প্রথমবার সাংসদ হয়েই মন্ত্রী হয়েছিলেন দেবশ্রী। তাই তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসবেন এটা না ভাবাই উচিত হবে। কিন্তু বাবুলের সঙ্গে সঙ্ঘের কোনও যোগ নেই। মোদিই তাঁকে রাজনীতির জগতে এনেছেন, সাংসদ করেছেন, মন্ত্রী করেছেন, এখন সেখান থেকে সরিয়েও দিয়েছেন। তাই বাবুলের বিজেপি ছাড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও সমস্যা নেই। বিশেষ করে তাঁর ইমেজ কিন্তু এখনও বিতর্কহীন। সব থেকে বড় কথা বাবুল গত কয়েকদিন ধরে তাঁর ফেসবুক পোস্টে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ তো করে চলেছেনই, সেই সঙ্গে টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁর নিজ পরিচয়ের জায়গায় রাজনীতি থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন বলেও দেখা যাচ্ছে। আর এই জায়গাতেই অনেকে মনে করছেন, টানা সাত বছর সক্রিয় রাজনীতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে থাকার পর রাজনীতি থেকে পুরোপুরিই বিদায় নিতে চলেছেন বাবুল। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা সেই সম্ভাবনা খারিজ করেছেন না। বরঞ্চ তাঁরা এটাই জানাচ্ছেন, বাবুল রাজনীতি ছাড়লে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন।

আর এই পরিবর্তনের মধ্যেই বড় খবর মিলেছে তৃণমূল সূত্রে। বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। যার পরিণতিতে বাবুলের পদ্মফুল থেকে জোড়াফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। মনে করা হচ্ছে এখনই না হলেও বাবুল চাইলে যখন খুশি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। সেই ছাড়পত্র মমতা নাকি তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি বাবুলকে নিয়ে এখন আর বিশেষ কিছু ভাবছে না। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই বাবুল বিজেপিত তথাকথিত নেতানেত্রীদের থেকে একদমই আলাদা। তিনি কখনও কাউকে গুলি করে মারার কথাও বলেননি, কারোও মুখে প্রস্রাব করে দেওয়ার কথাও বলেননি, যা আখছার বঙ্গ বিজেপি নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে। আর এই কারনেই বাবুল ক্রেজ আজও অটুট বঙ্গ রাজনীতি তথা জনমানসে। বিজেপি ছেড়ে বাবুল তৃণমূলে পা রাখলে তাই ঘাসফুলের লাভের পাল্লাই ভারী হবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মমতা বাবুলকে তাঁর দলে টেনে নিতেই পারেন। কেননা কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার সময়ে বাবুল কলকাতার মেট্রো রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে মোদির কাছে দ্রুত রূপায়নের কথা বলেছিলেন। তাঁর কেন্দ্রের সেই মন্ত্রীত্বের অভিজ্ঞতা আর জনমানসে থাকা তাঁর প্রতি ভালবাসাকে এখন নিজের দিকেই টানতে চাইছেন মমতা। বাবুল কী করবেন সেটা তাঁকেই ঠিক করতে হবে। তবে বিজেপিতে বাবুলের আর কিছু পাওয়ার নেই।