[ad_1]
চলতি সপ্তাহের শুরুতেও শোনা গিয়েছিল তাঁর গগনভেদী নির্ঘোষ। আদালত থেকে বেরনোর সময় হাত নেড়ে বলেছিলেন ‘১৩ তারিখ দেখা হবে’। কিন্তু সেই ১৩ নভেম্বর আসচে আসতে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে তাঁর চেহারা। রবিবার যে বালুকে দেখা গেল তা প্রায় বিধ্বস্ত। কণ্ঠ ক্ষীণ। মুখে মৃত্যুভয়। কিন্তু কী এমন হল এই এক সপ্তাহে যাতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রীকে ডরাচ্ছে শমন? ঘনিষ্ঠরা বলছেন, যে ভাবে আস্থাভাজনরা একে একে তাঁর পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তাতেই ভেঙে পড়েছেন মন্ত্রী।
গ্রেফতারির পর থেকেই নিজেকে বারবার নির্দোষ বলে দাবি করেছেন বালু। গত রবিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের পথে জানিয়েছিলেন তিনি ‘মুক্ত’। ইডি ভুল করেছে সেটা তারা বুঝতে পেরেছে। এর পরই জল্পনা ছড়াতে থাকে, সোমবার আদালতে পেশের সময় কী বলবেন তিনি? কী এমন যুক্ত আছে তাঁর কাছে যা দিয়ে ইডি হেফাজত থেকে সরাসরি মুক্ত হতে পারেন তিনি? কিন্তু সোমবার আদালতে পেশের পর দেখা যায় মুখ খোলা তো দূরে থাক জামিনের আবেদনই করেননি তাঁর আইনজীবীরা। ফলে তাঁকে ফের ৭ দিনের জন্য ইডি হেফাজতে পাঠায় আদালত। তবে আদালত থেকে বেরনোর সময় হাত নেড়ে তিনি বলেন, ‘১৩ তারিখ দেখা হবে।’
তার পর দিন যত কেটেছে ততই বেড়েছে বালুর উদ্বেগ। গত শুক্রবার মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরনোর সময় তিনি বলেন, ‘আমার শরীরটা খুব খারাপ। আমার বাঁ হাত এবং পা, দু’টিতেই প্রায় পক্ষাঘাতের মতো হয়ে গিয়েছে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা করিয়ে ফিরে আসব। ’ এর পর রবিবার কার্যত মৃত্যুভয়ের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শরীর অত্যন্ত খারাপ, মৃত্যুশয্যায় প্রায়। লেফট সাইডটা প্রায় প্যারালিসিস হয়ে গেছে।’ এর পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন ক্রমশ ভেঙে পড়ছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ বালু?
ঘনিষ্ঠরা বলছেন, গত ১ সপ্তাহে মন্ত্রীর আস্থাভাজন একাধিক ব্যক্তি ইডির সামনে মুখ খুলেছেন। আর প্রত্যেকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মন্ত্রীকে। তাঁর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাস স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্ত্রীর নির্দেশে। পরিচারক রামস্বরূপ শর্মা জানিয়েছেন, তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়েছিলেন বালু মল্লিকের ছেলেরা। বিহারের বাসিন্দা রামস্বরূপকে কৃষি দফতরে চাকরি করে দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এছাড়া বাকিবুরসহ প্রত্যেকেই প্রায় জানিয়েছেন, যা হয়েছে মন্ত্রীর নির্দেশে। কার্যত স্ত্রী ও কন্যা ছাড়া কেউ এই মুহূর্তে নেই মন্ত্রীর পাশে। আর রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের অনেক নেতারই বালুর পাশে দাঁড়ানোয় আপত্তি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তাঁকে যে ইডি জালে ঘিরে ফেলেছেন তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন বালু। আর জামিন যে প্রায় অসম্ভব তাও বুঝে গিয়েছেন আইনের এই ছাত্র। তাতেই তাঁর নানা রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।