Home ঘুরে আসি “মৌশুনী”~ ঘরের কাছেই ‘আউট অফ ট্র্যাক’ ভ্রমণ…..

“মৌশুনী”~ ঘরের কাছেই ‘আউট অফ ট্র্যাক’ ভ্রমণ…..

“মৌশুনী”~ ঘরের কাছেই ‘আউট অফ ট্র্যাক’ ভ্রমণ…..

ওয়েব ডেস্কঃ  দিনের পর দিন একই কাজ করলে স্বভাবতই মনের ভিতর ‘ডিপ্রেসন’ তৈরি হয়। মন ব্যাকুল হয়ে ছুটে চলে সুদূরে। তাই এবার ঠিক করলাম ‘আউট অফ ট্র্যাক’ স্থান, যেখান থেকে উইকএন্ড ট্যুর করেই ফিরে আসা যাবে। কলকাতা থেকে মাত্র ১৬০ কিমি দূরত্বে নামখানা ব্লকের  অখ্যাত দ্বীপের নাম ‘মৌশুনী আইল্যান্ড’। ঠিকই শুনছেন ‘মৌশুনী’ নট ‘মৌসুমী’। ভ্রমণপিপাসু বন্ধুরা হয়তো এখনও বিস্তারিত স্থানটি সম্পর্কে তেমন জানেন না।

Image result for mousuni island

এখানে যেতে হলে আপনাকে শিয়ালদহ থেকে নামখানার ট্রেন ধরতে হবে। লোক্যাল ট্রেন। অফিস টাইমে বিপরীত দিকের যাওয়াটা মন্দ হবে না। সাথে একটু মুড়ি মাখা খেয়ে নিতেই পারেন। কিনতে পারেন ট্রেনে ওঠা হরেক জিনিস। আবার আপনারা চাইলে ধর্মতলার থেকে প্রাইভেট বাসে নামখানার উদ্দেশ্যে যেতেই পারেন। বাসে সকালে সাতটা নাগাদ উঠলে আমতলা, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ পেরিয়ে নামখানা দুপুর বারোটার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন।

Image result for mousuni island

 

ট্রেনের স্টেশন বা বাসস্টপ থেকে টোটোতে চেপে নদীঘাট। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী পেরিয়ে, আবার মোটর ভ্যানে চেপে যাত্রা শুরু দশ মাইলের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে অপর একটি ভ্যানে করে পাড়ি দিতে হবে নদীঘাটের দিকে, ঘাটটির স্থানীয় নাম ‘পাতিবুনিয়ার ঘাট’। পাতিবুনিয়া যাওয়ার পথেই আপনার স্কাইস্ক্রাপারগুলো বদলে যাবে। আপনি যে সেলফি স্ট্যাটাসে বিশ্বাসী তাও বদলে গিয়ে গায়ের মানুষ হতে ইচ্ছে করবেই। কারণ প্রকৃতি এখানে কথা বলে। এক আলাদা ল্যান্ডস্কেপ। গ্রামের সরু ইটের রাস্তা, তার পাশেই সরকারি সংরক্ষিত এলাকা ও তার পাশে খাল সেখানেই সারি সারি ট্রলার দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার অন্যদিকে তাকালে দেখতে পাবেন জেলে ও মাঝিদের গোবরমাটি নিকানো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছোট ছোট ঘর। বাড়ির এদিকে সেদিকে গরু-মুরগি চড়ছে। রাস্তার ধারে চোখে পড়বেই মাছ ধরার জাল শুকোচ্ছে, কেউ কেউ ট্রলার মেরামতির কাজ করছে, আবার কোনও এক দাওয়ায় বসে মহিলারা জাল বুনছে। এই সরল-সাধারণ মানুষগুলোর জীবনযাপনগুলো দিল মানিক বাড়ুয্যের “পদ্মা নদীর মাঝি” ব্যাকড্রপ মনে করিয়ে দেয়। যদিও তেমন পছন্দ করি না তবু ‘শুঁটকি’ মাছের গন্ধ ভেসে আসে। নদীবাঁধে ভ্যান উঠতেই চোখের সামনে চেনাই নদী। বর্ষার মরশুমের জল থৈ থৈ। দিগন্তরেখার ওপারেই ভিউফাইন্ডারে দেখতে পারছি মৌশুনী আইল্যান্ড।

Image result for mousuni island

 

যেহেতু আপনি দুপুর বারোটায় পৌঁছে যাবেন এবং নৌকোর ঘাটে পৌছতে অনন্ত একটা বেজে যাবে তখন কিন্তু ফেরী পাবেন না। দুপুর সাড়ে বারোটার পরে আবার পৌনে তিনটেতে ফেরী সার্ভিস শুরু হবে। তবে এখানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন ছাউনিবিহীন বোট। টাকা পয়সায় রাজি করিয়ে নিয়ে উঠে পরুন বোটে। নদীর মাঝ দরিয়া বেয়ে চলবে আপনার মন। অনাবিল ভয়মিশ্রিত আনন্দ। আসলে মানুষের প্রাণ তো শঙ্খচিলের মতোই, ঢুববেন না। আকাশের দিকে কালো মেঘের মাঝে দেখতেই পারেন শঙ্খচিল। চেনাই নদীর জল কেমন যেন রূপোর মতো চকচক করবে। সামনে ছবি তোলার জন্য ছোট ডিঙি নৌকো আর জেলে ভাইদের দেখতে পাবেন। একটা দুটো ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে এগিয়ে যাবে।

 

সব ঠিক থাকলে পঞ্চাশ মিনিটে পৌছে যাবেন আপনার ডেস্টিনেশন মৌশুনী দ্বীপে। বর্ষা এই সময় ভয়ঙ্কর সুন্দর জল যেমন দেখবেন তেমনই দ্বীপ এখন সবুজ। চোখ যতদূর যাবে সবুজ। মাঝে দুটো মেঠো বাড়ি দেখতেই পারেন। হোটেলের তেমন সমাগম নেই। ভার্জিন প্লেস। তবু আলপনা দেওয়া ইঁটের দেওয়াল ও খড়ের ছাউনিতে ঘর এখানে পাবে। সামনের জমিতে লাগানো ফুলগাছ। সুপারি গাছ, বাঁশের মাচা, বসার স্থান। মোটামুটি পিকনিক স্পট। এদিক ওদিকে পুকুর দেখতে পাবেন। আয়লাতে সবই বিধস্থ হয়েছিল। মনকেমনিয়া এক গ্রাম্যতা এখানে আপনার জন্য সত্যই অপেক্ষা করছে। না থাকল মোবাইল টাওয়ার নেট, আপনি আসলে তো একটু শান্তি চাইছেন।

Image result for mousuni islandদুপুরের লেট স্নানের পরে  ভাতের পাতে আলুভাজা, ডাল, লাউ চিংড়ির তরকারি, মাছ ও চাটনি পেলে তো এককথায় অনবদ্য। রসনাতৃপ্তির হয়ে গেলে একটু রেস্ট নিয়ে নেবেন। তারপর সুন্দর দ্বীপ ঘুরে দেখতেই পারেন। বিকেলের দিকে তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলেই উত্তরের বালিয়াড়ি সৈকত।

 

রাস্তার কিছু স্থান ভাঙা হলেও পুরো রাস্তাটাই ঢালাই রয়েছে। গ্রামের পথ ধরে হেঁটে বা ভ্যানে করে রাস্তার দু-ধারে ধানক্ষেত, আলু, লঙ্কার, শাক, সবজি দেখতে দেখতে নিজেই হারিয়ে যাবেন। মাচায় কুমড়ো বা মাটিতে টমেটো দেখে কয়েকটা ছবি অবশ্যই তুলবেন। ভ্যান চালক বলে দেবেন ডান দিকে ঝাউবনের মধ্য দিয়ে খানিক হেঁটে গেলেই বালিয়াড়ি।
যতদূর চোখ যাবে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। গোধুলির স্নিগ্ধ আলোর সাথে অস্তগামী সূর্যের মিশেলে বিশালাকার সৈকতের নীরবতা এক অদ্ভুত রহস্যময়তার মাঝে আপনি হারিয়ে যেতে বাধ্য। এ এক অনন্ত সুখের পরিমন্ডল।

Image result for mousuni island

নিরবচ্ছিন্ন শান্তির বুক চিরে ভেসে আসবে সিগাল ও টার্নারদের আওয়াজ। সন্ধ্যা নেমে আসবে সৈকতে। অন্ধকারের শব্দ শুনতে শুনতে ঘরে ফেরার গান গেয়ে উঠবেন। ফিরে আসবেন থাকবার স্থানে। ঘরে ফিরে চা টা মানে চিঁড়েভাজা সহযোগে জমাটি আড্ডা দিতেই পারেন বন্ধুদের সাথে। নাই বা করলেন একদিন গ্রুপ চ্যাট ফেসবুকে। এ এক আলাদা আনন্দ। রাত নটায় গরম রুটি আর দেশি মুরগির ঝোল সাথে মিষ্টি। বিশ্বাস করুন ভুলেই যাবেন কলকাতার দামী রেস্তোরার সেলফি সেশন। আপনি অনুভব করবেন কতটা মাটির কাছের মানুষ আপনি।

Image result for mousuni island

পরের দিন ভোরে…

একদিন নয় আর্লি মর্নিং উঠলেন। ভোরের পাখির কোলাহলে ঘুম ভাঙবেই। সেইদিনটি ঘুরে আসুন কাঁকড়ামারির চর – বার্ড ক্যাচারদের জন্য আদর্শ স্থান। সকাল সাতটার মধ্যে চরে পৌঁছে যাবেন। নিস্তব্ধতার আধার পেরিয়ে  পাখিদের ডানার শব্দ ও সুমিষ্ট ডাক কানে আসবে। কিছু কমন কিংফিশারকে চাতকের মতো বসে থাকতে দেখবেন। সতর্ক দৃষ্টিতে এগিয়ে চলুন জলের দিকে, কখনও ঝোপঝাড়ের দিকে ও গাছের ডালের ওপর চোখ রেখে মিলতে পারে অজানা পাখির দেখা।

 

 

টিভি চ্যানেল নয়,  সামনে এগোলেই বুঝে যাবেন গাছগুলো যেন ক্রমশ ঘন হয়ে একে অপরের সাথে একটা সীমানা তৈরি করেছে। মাথার ওপর দিয়ে টিয়া উড়ে চলে যেতই পারে এক ঝাক। হোয়াইট বিলড সি ঈগল কোনও মরা গাছের ডালে বসে থাকলে অবাক হবেন না।  অদূরেই ফিঙের শিস্। স্যান্ডপাইপারও চোখে পড়তেই পারে। পাখিদের তীব্র কলতানে এবার আপনি ঘুরে তাকালেই পেয়ে যাবেন বার্ন সোয়ালো-র দল চেঁচাচ্ছে। এরপর অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসুন হোটেলে। সব ঠিক ঠাক করে গুছিয়ে নিয়ে এবার বাড়ি ফেরার পালা। হ্যাঁ এটা ঠিক কলকাতা থেকে দূরত্ব অনেকটা। তবে একবার যদি এখানে পৌঁছে যান তাহলে ভুলেই যাবেন আপনি কলকাতায় ছিলেন। একটু যাতায়াতের কষ্টটা দূর করতে পারলেই আপনি পেয়ে যাবেন এক অচেনা অজানা সুখের দ্বীপ। দ্বীপটির নাম যে মৌসুমী থুড়ি মৌশুনী। আর যদি হাতে সময় থাকে তাহলে চলে যেতেই পারেন ‘হেনরি আইল্যান্ড’। 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here