[ad_1]
Under Water Metro in World: মাথার উপর বইছে গঙ্গা, আর জলের নিচ দিয়ে দৌড়াচ্ছে মেট্রো। নজির গড়ল কলকাতা। গোটা ভারতে এই প্রথম চালু হলো আন্ডারওয়াটার মেট্রো। নদীর নিচে দিয়ে চলে গিয়েছে মেট্রোর রাস্তা। ভারতে এই প্রথম নয়, গোটা বিশ্বে কিন্তু বহু জায়গাতেই জলের নিচে এমন রাস্তা রয়েছে। কোন টেকনিকে নদীর নিচে কলকাতা এত বড় কাজ করে দেখালো? বাংলাদেশেও রয়েছে আন্ডারওয়াটার টানেল, যেখানে নদীর বুক চিরে চলে বড় বড় গাড়ি। জল ঢুকে যায় না? হুগলি নদীর নিচে যা হল, দেখে হাঁ গোটা দেশ।
কলকাতায় জলের নিচে জলরোধী টানেল তৈরির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ফ্লাই অ্যাশ আর মাইক্রো সিলিকা দিয়ে। পুরো প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৮৬০০ কোটি টাকা। মাটির তিরিশ মিটার নিচে খনন করে তৈরি করা হয়েছে মেট্রো স্টেশন। টানেলের ভেতরে দেয়াল তৈরি হয়েছে উচ্চমানের সিমেন্ট দিয়ে। প্রতিটি অংশের পুরুত্ব প্রায় ২৭৫ মিলিমিটার। টানেলের ভিতরেই যাতে জলে জল ঢুকতে না পারে, রয়েছে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কলকাতার এই মেট্রো হুগলি নদীর নিচ দিয়ে হাওড়া ময়দান থেকে যাবে সটলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত। মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬.৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১০.৮ কিলোমিটার মাটির তলায়। গঙ্গার উপরের জল স্তর থেকে প্রায় ৩৩ মিনিটের নীচে তৈরি হয়েছে এই মেট্রোর জোড়া সুরঙ্গ। নদীর তলদেশ থেকে আরও ১৩ মিটার গভীরে পলি মাটির ভিতর দিয়ে গিয়েছে রাস্তা। জল নয়, সুরঙ্গ গিয়েছে নদী খাতের পলি মাটির মধ্য দিয়ে। এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পথের মধ্যে রয়েছে ৫২০ মিটার দীর্ঘ গঙ্গা। এটি পেরোতে এখন সময় লাগছে মাত্র ৪৬ সেকেন্ড। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হল, যখনই মেট্রো গঙ্গার বুকে প্রবেশ করবে তখনই তা বোঝানোর জন্য একটা নীল আলোর ব্যবস্থা রয়েছে অর্থাৎ বুঝতে পারবেন, আপনি গঙ্গার নিচে রয়েছেন। নেটওয়ার্ক নিয়েও চিন্তা নেই। ফোনের নেটওয়ার্ক থাকবে। জলের নিচে দেয়ালে আঁকা হয়েছে জলজ প্রাণী আর জলজ উদ্ভিদের ছবি।
জলের নিচে এই ধরনের টানেল প্রথম তৈরি হয়েছিল ব্রিটেনে। লন্ডনে ১৯২১ সালে জলের নিচে রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশেও রয়েছে কিন্তু একটা বহু লেনের সড়ক টানেল। এটি বঙ্গবন্ধু টানেলও বলা হয়। এটাই নাকি, দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে যানবাহন চলাচলকারী প্রথম টানেল। দৈর্ঘ্য প্রায় ৯.৩৯ কিলোমিটার। বাংলাদেশে এই টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য, চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংঘাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন বা এক নগর দুই শহরের মডেলে গড়ে তোলা। আর সত্যি, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর, একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে দেশটার চট্টগ্রাম শহর। টানেলের যুগে প্রবেশ করা মাত্রই, বাংলাদেশের মানুষ দেশকে সাংঘাইয়ের স্বপ্ন। এই একটা টানেল এক ধাক্কায় বাড়িয়ে দিতে পারে দেশটার জিডিপি। ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে পুরো টানেলটাই মুড়ে ফেলা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। টানেলটি রয়েছে নদীর প্রায় ৪০ মিটার গভীরে।
বিশ্বের বহু দেশে নদীর তলদেশে রয়েছে এমন সুরঙ্গ পথ। যেমন নরওয়েতে রয়েছে বোমলাফোর্ড টানেল। ৭.৮ কিলোমিটারের এই টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। নরওয়েতে রয়েছে ইকসুন্দ নামক আর একটা টানেল। দৈর্ঘ্য প্রায় ৭.৭ কিলোমিটার। মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করেছে ইকার হাড়েইডল্যান্ডের সঙ্গে। এছাড়াও নরওয়ের নর্থকেপ টানেল মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করেছে হনিংসভ্যাগের সঙ্গে। জলের নিচে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬.৮ কিলোমিটার। অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছে ২.৮কিলোমিটারের বিখ্যাত সিডনি হারবার টানেল। এটি একটি টুইন টিউব সুড়ঙ্গপথ। যুক্তরাজ্যে রয়েছে ৩.৬২ কিলোমিটারের সেভার্ন টানেল। গ্লাউসেস্টারশায়ারের সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমেই যুক্ত হয়েছে মনমাউথশায়ার। ফ্রান্সে জলের তলায় রয়েছে ৩৭.৯ কিলোমিটারের দীর্ঘ চ্যানেল টানেল। এটি ব্রিটিশ শহর ফোকস্টোনকে যুক্ত করেছে উত্তর ফ্রান্সের পাস ডি ক্লাইসকে। আর একটা ভালো খবর দিয়ে রাখি, ইতিমধ্যেই দুবাইয়ের সঙ্গে ভারতের মুম্বাইকে সংযুক্ত করার জন্য জলের তলায় ট্রেন লাইনের কাজ চলছে। প্রায় দু হাজার কিলোমিটারের এই পথ দুবাই আর মুম্বাইকে সংযুক্ত করবে আন্ডার ওয়াটার টানেলের মাধ্যমে। ওদিকে আবার ডেনমার্ক আর জার্মানির মধ্যে জলের নিচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সুরঙ্গ। দুই দেশকে সমুদ্রের নিচ দিয়ে কানেক্ট করা যাবে। মাত্র ৭ মিনিটে পৌঁছানো যাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়