Home খেলাধুলো সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে প্রয়াত দুই তারকা ‘দাদা-ভাই’

সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে প্রয়াত দুই তারকা ‘দাদা-ভাই’

সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে প্রয়াত দুই তারকা ‘দাদা-ভাই’

দিলীপ কুমার  চলে গিয়েছেন এক সপ্তাহও হয়নি। এর মধ্যেই খবর ৬৬ বছরেই ইনিংস শেষ ভারতের প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার যশপাল শর্মার । কিংবদন্তি অভিনেতা এবং তারকা ক্রিকেটারের মধ্যে ‘দাদা-ভাই’-এর সম্পর্ক ছিল। ক্রিকেট সম্পর্কে যাঁরা খবরাখবর রাখেন, তাঁরা জানেন যশপাল শর্মার জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পিছনে দিলীপ কুমারের অবদান ঠিক কতটা ছিল। কপিলের দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিজেই একথা জানিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে।

যশপাল শর্মাকে ‘যশ’ নামে ডাকতেন সতীর্থরা। তাঁর উচ্চারণ বুঝতে সমস্যা হত অনেকের। এ নিয়ে রসিকতাও করতেন অনেকে। এহেন যশপাল শর্মা ‘ভাই’ বলতেন দিলীপ কুমারকে। একবার এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণ করে যশপাল শর্মা বলেছিলেন, “ইউসুফ ভাই, আমার জীবন বদলে দিয়েছিলেন।”

সেই সাক্ষাৎকারে যশপাল জানিয়েছিলেন, ১৯৭৪-৭৫ মরশুমের রঞ্জি ট্রফিতে পাঞ্জাব বনাম উত্তর প্রদেশের ম্যাচ চলাকালীন দিল্লির মোহননগর গ্রাউন্ডে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। সেই ম্যাচে যশপাল শর্মার ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বলিউডের বিখ্যাত নায়ক। পাঞ্জাবের হয়ে দুই ইনিংসেই শতরান হাঁকিয়েছিলেন যশপাল। দ্বিতীয় ইনিংস চলাকালীন দিলীপ কুমার এসেছিলেন মাঠে। প্রথমটায় যশপাল চিনতেই পারেননি তাঁকে। ভেবেছিলেন কোনও রাজনৈতিক নেতা বোধহয় খেলা দেখতে এসেছেন।

পরে দিলীপ কুমারই ডেকে পাঠান তরুণ যশপালকে। তাঁর খেলা যে ভাল লেগেছে, তা খুল্লমখুল্লা জানিয়ে দিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। যশপালকে বলেই দিয়েছিলেন, “তোমার কথা আমি একজনকে বলবো।” পরের দিনই পত্রপত্রিকায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে যশপাল শর্মার ছবি বেরিয়েছিল। যা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন যশপাল। সেই ঘটনার কয়েকদিন পরে ‘যশ’ জানতে পারেন ঠিক জায়গায় দিলীপ কুমার তাঁর নাম পেশ করেছেন। সেই সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটের ডাকসাইটে কর্তা রাজ সিং দুঙ্গারপুর। কিংবদন্তি অভিনেতা যশপালের প্রসঙ্গ দুঙ্গারপুরের কাছে উত্থাপ্পন করে বলেছিলেন, “এই ছেলেটা দেশের হয়ে খেলার যোগ্য।”

যশপালের জন্য জাতীয় দলের  দরজা খুলে যায় দ্রুতই। তাঁর সাহসী ব্যাট কথা বলতে শুরু করে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হয়ে ওঠেন। দল যখনই বিপদে পড়ত যশপাল শর্মার ব্যাট গর্জে উঠত। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে একসময় ভারতীয় ব্যাটিং ধুঁকছিল। ৭৬ রানে তিন উইকেট যখন, তখন ক্রিজে নামেন যশপাল। কিছুক্ষণ বাদেই পাঁচ উইকেট চলে যায় ১৪১ রানে। যশপাল খেলেছিলেন ১২০ বলে ৮৯ রানের মূল্যবান ইনিংস। ওই ইনিংসের জন্যই ভারত ৩৪ রানে হারিয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের। সেবারের বিশ্বকাপেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী ৪০ এবং সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ৬১ রান এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে টাটকা।

দিলীপ কুমার চলে যাওয়ার পরে চোখের জল মুছতে মুছতে যশপাল বলেছিলেন, “আমার পছন্দের অভিনেতা একজনই। তিনি দিলীপ কুমার।” যশপালের প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ ক্রিকেটমহল।