Home ব্লগবাজি পথ —– ১২ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —– ১২ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —– ১২    ~   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ----- ১২
-----------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



     আমাদের বাড়িতে নিয়ম ছিল দুপুরে কিছুতেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
ঘুমাতে হবে। মা সব কাজ মিটিয়ে এসে শুতো। আমি মায়ের কাছে এসে শুতাম। মায়ের
কাছেই কেন শুতে চাইতাম তার অবশ্যই একটা কারণ আছে। মা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে
পড়তো। তাই মায়ের কাছ থেকে খুব সহজেই রেহাই পাওয়া যেত। কিন্তু অসুবিধাও একটা
আছে। মায়ের ঘুম খুব হালকা। একটু আওয়াজেই উঠে পড়ে। এমন কতদিন হয়েছে বিছানা
থেকে অনেকটা উঠে পড়েছি, মা কিছুর আওয়াজেই হোক আর যে কোনো কারণেই হোক চোখ খুলে
ফেলেছে। আমি সাথে সাথে বিছানায় শুয়ে পড়ে ঘুমের অভিনয় করেছি। এইভাবে শুয়ে
থাকার যন্ত্রণা যে কি মারাত্মক সে একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন।
     অনেক বড়বেলা পর্যন্ত শুনেছি, দুপুরবেলা ছেলেধরা বের হয়। গ্রীষ্মের
দুপুরে তো সেইসব ছেলেধরাদের দারুণ রমরমা। রাতের চেয়ে দুপুরেই পথ চলতে বেশি গা
ছমছম করত। অদ্ভুত একটা ভয় কাজ করত। সেই ভয় যে মারাত্মক কিছু তা কিন্তু নয়।
আসলে দুপুরকে আমার কেমন যেন গম্ভীর গম্ভীর লাগতো। কিছুতেই যেন তার চোখে চোখ
রেখে কথা বলা যেত না।
     আমি যখন মায়ের পাশে ঘুমিয়ে তখন আমার ছোট ছোট বন্ধুরা জানলা দিয়ে মুখ
বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে। এদের বাড়িতে অতটা শাসন ছিল না। তাই ওরা যখন খুশি
বেরিয়ে পড়তে পারতো।
     আমি ইশারায় ওদের থামতে বলছি। কারণ এইসময় মা জেগে গেলে আর কিছু করার
নেই। মা আমাকে জড়িয়ে শুতো। ঘুমানোর মাঝে ছেলে পালিয়ে যাবার ভয় হয়তো তাকেও
সাবধান করেছিল।
     মায়ের হাতের বাঁধন খোলা খুব কঠিন ছিল। কত সময় যে লাগত তার হিসেব নেই। যখন
সত্যিই সফল হলাম বাইরে এসে দেখি কেউ নেই। আমার জন্য অপেক্ষা করে করে বন্ধুরা
চলে গেছে। সেদিন আর খেলতে যেতাম না। বাগানের মালির কাছে পালাতাম। দেখতাম মালি
তখন আমে জাঁক দিচ্ছে। আমি মালিকে সাহায্য করতাম। বাগানের ভেতর বড় একটা পুকুর
ছিল। আর তার চারপাশে আম, তাল আর নারকেল গাছের সারি। এক একদিন মাছও ধরতাম।
     অনেক চেষ্টার পর যেদিন  দুপুরে বাইরে বেরোতে পারতাম সেদিন মনে হতো আমি
অনেক বড় হয়ে গেছি। কারণ ওইসময় যা-ই করি না কেন কারও মতামত নিতে হতো না।
নিজের চোখে এইভাবে নিজেকে বড় দেখার সুযোগ পেয়ে এত সাহস বেড়ে যেত যে কোনো
কোনো দিন কারও সাইকেলের পিছনে চেপে অন্য গ্রামে চলে যেতাম। সেদিনের সেই বড়
হওয়ার আনন্দ আজও আমাকে ছুঁয়ে যায়।

                                                 হরিৎ :01/06/2017

                            ************************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here