Home ব্লগবাজি পথ — ৩৫ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩৫ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩৫ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —– ৩৫
—————–
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসবকে আমার কখনও মানুষে মানুষে মিলনের ক্ষেত্র বলে মনে হয় না। শুধু আজ
বলে নয়, কোনো কালেই মনে হতো না। সেই জায়গায় মেলাকে আমার অনেক বেশি প্রাণের
জায়গা বলে মনে হয়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটা কথা বারবার আমার মনে উঁকি
দিয়ে যায় —— ” আমি যখন অগণন সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারব, কেউ
আমাকে আলাদা করে চিনে নিতে পারবে না —- সেটা আমার কাছে বড় শান্তির জায়গা। ”
মেলা ছাড়া এই সুযোগ কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ কবি পরোক্ষে মেলাকেই
বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
উৎসব মানেই তার একটা নিজস্ব পোশাক থাকবে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা উৎসবের
পোশাক কিনতে অক্ষম। গ্রামের এমন অসংখ্য মানুষকে আমি চিনি যারা এই আওতায় পড়ে।
কারণ ছোটবেলা থেকে এদের মধ্যেই তো বেড়ে উঠেছি। তাই এদের না পাওয়াগুলো আমার
বড় চেনা।
উৎসবের পোশাক না থাকলে সে উৎসবের বাইরে। উৎসবে পোশাক পরা মানুষদের
অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁরা সাধারণ পোশাকধারীদের অন্তর থেকে গ্রহণ করেন না।
এ আমার জীবন দিয়ে দেখা। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ভীষণই পিছিয়ে পরা পরিবারের সন্তান আমি। তাই
দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে আমার পোশাক বলতে অতি সাধারন মানের জামা প্যান্ট।
সেটাই আমার কাছে বিরাট কিছু। কোনো কোনো বছর তাও হতো না। এই পোশাক পরে যখন
আমাদের বারোয়ারীতলায় যেতাম তখন দেখতাম আমাদের স্কুলের অবস্থাপন্ন বাড়ির
ছেলেরা আমার সঙ্গে সেইভাবে প্রাণখুলে মিশছে না। এই আচরণ আমাকে অন্তর থেকে
ভীষণভাবে আহত করেছিল। আমি এই অপমান কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।
ওই বারোয়ারীতলায় দাঁড়িয়ে সেদিন দেখেছিলাম এমন কত মানুষ যাদের অবস্থান
উৎসবের রঙ থেকে অনেক দূরে। আমার তবুও তো হতো কিন্তু তাদের খালি গা। শহর,
মফস্বলের মানুষেরা হয়ত এই ব্যাপারটা এত স্পষ্ট করে বুঝতে পারবেন না। কিন্তু
গ্রাম আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে —- উৎসব মিলনের নয়, উৎসব গরিব
বড়লোকের পার্থক্যটা আরও বড় করে দেখিয়ে দেয়।

*******************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here