Web Desk: হোলি শুধুমাত্র রঙের উৎসবই নয়, এই উৎসবের মাধ্যমে সকল পুরাতনের বা অশুভ শক্তির বিনাশের মাধ্যমে নুতনের আগমনকে সুনিশ্চিত তথা শুভশক্তির আবাহন করা হয়। এখানে রইল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উদযাপিত বিভিন্ন ধরণের হোলির বর্ণনা যা ভারতের বৈচিত্র বর্ণনা করে।
১.উত্তরপ্রদেশের বরসানা গ্রামের লাঠমার হোলি…
পুরানো ধারণা অনুযায়ী হোলির শুরু হয়েছিল ভারতের এই বরসানা প্রদেশে যেখানে বৃন্দাবন, মথুরা, নন্দগাঁও ও বরসানা একসাথে ছিল।কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এখানকার ‘লাঠি’। শুধুমাত্র রঙ নয়, লাঠিমারার প্রথা দিয়ে এই উৎসব সারা দেশে বিখ্যাত। প্রথা বা রেওয়াজ মত এখানে মহিলারা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং পুরুষদের লাঠি দিয়ে মারে। কিন্তু এটা একটা সুন্দর, মজাদার ও চিত্তাকর্ষক প্রথা, যেখানে পুরুষরা মার খাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসে।
২.উত্তরাখন্ড, কুমায়ুন প্রদেশের খাদি হোলি…
খাদি হোলি প্রধানত উত্তরাখন্ডের কুমায়ুন প্রদেশে শহরাঞ্চলে খেলা হয়। এই উৎসবে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাদেশিক ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে, খারী গান করে এবং গ্রুপে সবাই মিলিত ভাবে নাচ করে। তারা দলবদ্ধ ভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং পথচলতি লোকজনকে শুভেচ্ছা জানায়। এই জায়গায় হোলি মানে হল গীতসংবলিত জমায়েত এবং বিভিন্ন ধরণের গান সেখানে গাওয়া হয়। বৈঠিকা হোলি,খাদি হোলি, মহিলা হোলি প্রভৃতি এখানে যথেষ্ট প্রচলিত।
৩.পাঞ্জাবের হোলা মহল্লা…
হোলা মহল্লা যুদ্ধবাজদের হোলি হিসাবে পাঞ্জাবে পরিচিত। এই উৎসবর্টি নিহাঙ্গ শিখদের মধ্যে দেখা যায়। এরা মার্শাল আর্ট প্রদর্শন করে,হৃদয়
থেকে গান করে এবং সাধারনতঃ হোলির একদিন আগে উদযাপিত হয়।
৪.পশ্চিমবঙ্গের বসন্ত উৎসব বা দোল যাত্রা…
বসন্তঋতুকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বসন্ত উৎসব পালিত হয়। দোলের আগের দিনে হোলিকা দহন হয়, যাকে বলা হয় ‘চাঁচর’ যার অন্য ব্যাখ্যা আছে। বছরের বা ঋতুচক্রের শেষ উৎসব এই দোল। চৈত্রের মোহনায় বৈশাখের আগমনের অপেক্ষা। এই সময় গাছের শুকনো পাতা, ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে যা পুরাতন সকল রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান করে। বাংলায় দোলের আগের দিন ‘চাঁচর’কে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়। শান্তিনিকেতন, মায়াপুরে বসন্ত উৎসব ভীষণ ভাবে পালিত হয়।
৫.গোয়ার শিগমো…
গোয়ার এই হিন্দু উৎসব ব্যাপকভাবে পালিত হয়।অন্যতম প্রধান এই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক নৃত্য রাস্তায় পরিবেশিত হয় সাদারণতঃ চাষীদের দ্বারা। এমনকি বিদেশী টুরিস্টরাও প্রচুর উৎসাহ নিয়ে এই আনন্দ উপভোগ করে।
৬.মনিপুরের ইয়াওসাঙ…
হোলি বা ইয়াওসাঙ মনিপুরে ছয়দিন ব্যপী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং পূর্ণিমার দিনে শুরু হয় ও ও বিভিন্ন ধরনের হিন্দু ঐতিহ্য মিলন বর্ণনা করে। এখানকার আদি নৃত্য ‘থাবাল চোঙবা’এখানে পরিবেশিত হয়। এর সাথেই মনিপুরীরা রঙ খেলাতেও মেতে ওঠে।
৭.কেরালার মঞ্জল কুলি…
উত্তর ভারতের মতো দক্ষিণ ভারতের holi এতটা বিখ্যাত নয় কিন্তু তবুও বেশ কিছু জায়গায় সাধারণত নিজস্ব নাম এবং ঐতিহ্য নিয়ে হোলি উদযাপিত হয় দক্ষিণ ভারতেও। কেরালায় হোলিকে বলা হয় ‘মঞ্জল কুলি’ এবং এটি গোসরিপুরম থিরুমালার কোঙ্কণী মন্দিরে উদযাপিত হয়।
৮. বিহারের ফাগুয়া…
বিহারে হোলি অত্যন্ত বিখ্যাত। স্থানীয় ভোজপুরী তে হোলিকে ফাগুয়া বলা হয়। হোলি খেলার পূর্বে হোলিকাদহন বিহারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের অঙ্গ। হোলিকাদহনের পর রং নিয়ে, গান গেয়ে এবং আবিরের সাথে দোল উৎসব উদযাপিত হয়। দোল উৎসবের মধ্যে বিহারে ভাঙ খাওয়া অত্যন্ত প্রচলিত এবং আনন্দপূর্ণ বিষয়।
৯.আসামের ফাগওয়াহ…
আসামে হোলির নাম হল ফাগওয়া। এটি পশ্চিমবঙ্গের দোলযাত্রার মতই। এখানেও দুইদিন ব্যপী দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন হোলিকা দহন এবং দ্বিতীয় দিন রঙ নিয়ে খেলায় সবাই মেতে ওঠে।
১০. মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের রঙ পঞ্চমী…
মহারাষ্ট্রে হোলি অত্যন্ত মজাদার ভাবে উদযাপন করা হয়। হোলিকা দহনের পঞ্চম দিনে এখানে হোলি খেলা হয় যা রঙ পঞ্চমী নামে বিখ্যাত।