ওয়েব ডেস্কঃ সারা পৃথিবীতে নারী জাতির ওপর বহু প্রাচীনকাল থেকেই চরম অবমাননা হয়ে এসেছে। নারীদের সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষরা নিজেদের পায়ের তলায় রেখে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছে। কিন্তু তবুও বর্তমান সমাজ এবং বর্তমান পৃথিবীতে নারীর অস্তিত্ব আজ নারী নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছে। পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুধুমাত্র নয় বরং এমন প্রচুর কাজ রয়েছে যা শুধুমাত্র এবং কেবলমাত্র নারীদের দ্বারাই হয়ে থাকে। মহিলা প্রধান এই সমস্ত কাজ গুলিতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ধরণেরই কিছু বিভিন্ন কাজের ব্যাপারে যা শুধুমাত্র আজকের পৃথিবীতে নারীদের দ্বারাই সম্ভব।
মাতৃত্ব — সারোগেসি ও এগ ডোনার হিসাবে…
পৃথিবীতে মা হতে চায় না এরকম নারীর সংখ্যা দুর্লভ। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে শরীরে এবং মনে পরিবর্তনের সাথে সাথেই প্রতিটি নারীই চায় মা ডাক শুনতে। কিন্তু তবুও বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা এবং ভাগ্যের পরিহাসে বহু নারী সন্তানধারণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় সারা জীবনের জন্য। এই ক্ষেত্রে বর্তমান বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উন্নতি কোন একজন নারীকে আজকের পৃথিবীতে মা হবার জন্য যথেষ্ট উৎসাহী করে। সারোগেসি বা এগ ডোনার হিসাবে মহিলাদের মূল্য তাই আজ অপরিসীম। নিজের সন্তান ধারণ না করেও অপর পুরুষের এবং অপর কোন মহিলার ডিম্বাণুর সাহায্যে কোন তৃতীয় মহিলার গর্ভে সন্তানের জন্ম দেবার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকেই সারোগেসি বলা হয়। অর্থাৎ এখানে গর্ভ ধারণ সম্পূর্ণভাবে সেই মহিলার শরীরের ওপর নির্ভর করে, যার শরীরকে ব্যবহার করে কোন দম্পতি সুস্থ সন্তান কামনা করেন। সন্তানের গর্ভধারণে এই তৃতীয় মায়ের ভূমিকা দশ মাস থাকলেও সন্তান তাঁর হয় না। নির্দিষ্ট সময় পরে সেই সন্তানের উত্তরাধিকার বর্তায় স্পার্ম ডোনার প্রকৃত বাবা এবং ডিম্বাণু দানকারী প্রকৃত মায়ের ওপর। শুধুমাত্র তাই নয় যে সকল মহিলার গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু ঠিকঠাক তৈরি হয় না সেই সকল মহিলার জন্য ডিম্বাণু দানকারী মহিলা পাওয়া সম্ভব এবং সেই মহিলার ডিম্বাণু শরীরে সংস্থাপনের মাধ্যমে আজকাল যে-কোনো নারী মাতৃত্বের স্বাদ পেতে সক্ষম।
নার্সিং…
নার্সিং এমন একটি পেশা যেটি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বাস্থ্য, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।এই পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক অথবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সহকারে যত্নের মাধ্যমে তার ভগ্ন স্বাস্থ্যের সুচিকিৎসা করা হয়, স্বাস্থ্যের পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার উন্নতি করা হয়। এই পেশাটি শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারাই সম্ভব। চিকিৎসক পুরুষ হলেও নার্স অতি অবশ্যই একজন মহিলা হতে হয়। শুধু যে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ববান বলে, তাই নয় বরং মহিলাদের সহজাত’ মা’ সুলভ নমনীয়তা ও যত্ন করার সহজাত দক্ষতার জন্যই মহিলাদের এই কাজে নিয়োগ করা হয়।
মন্টেসরী স্কুল টিচার…
একজন শিশু যখন সদ্য সদ্য বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের জগতের সাথে পরিচিত হতে চায় তখনই শিশুটিকে জীবনে প্রথমবার যে জায়গায় যেতে হয় সেটি হলো শিশুদের জন্য নির্ধারিত মন্টেসরি স্কুল যেখানে শিশুটিকে দুনিয়ার সাথে পরিচয় করাবার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যে শিশুটি সদ্য স্কুলের গণ্ডীতে পা দেয় সেখানে কোন পুরুষের সংস্পর্শে সে সহজ পারে না, কিন্তু কোন মহিলার সংস্পর্শে সে তার নিজের মায়ের যত্ন খুঁজে পায়। ঠিক এই কারনেই মহিলাদের নমনীয়তা, কমনীয়তা এবং সন্তানের প্রতি যত্ন ও দায়িত্ব নেবার বিশেষ ক্ষমতায় পারদর্শীতার জন্যই যেকোনো মন্টেসরি স্কুলে শুধুমাত্র মহিলাদের জায়গা হয়। এক্ষেত্রে কোনো পুরুষকেই আজ অবধি মন্টেসরি টিচার্স ট্রেনিং করতে বা মন্টেসরি স্কুল এ টিচার হিসাবে দেখা যায়নি।
গাড়ির মডেলিং…
আজ অবধি এখনো কোন পুরুষকে “প্রথমবার” গাড়ির লঞ্চিং প্রোগ্রামে মডেল হিসেবে দেখা যায়নি। পৃথিবীতে বহু নামিদামি গাড়ি কোম্পানীগুলির তাদের নতুন নতুন গাড়ি বাজারে আনবার সময় সেই গুলিকে দুনিয়ার সামনে প্রথমবার উপস্থাপনের জন্য মডেলের প্রয়োজন হয় কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ অবধি কোন পুরুষ মডেলকে কোন গাড়ির মডেল হিসেবে অন্তত দেখা যায়নি। বিভিন্ন গাড়ীর বিজ্ঞাপনে পুরুষদের দেখা গেলেও “প্রথমবার” দুনিয়ার সামনে পেশ করার সময় কেন কোন পুরুষকে আজ অবধি মডেল করা হয় নি, এটি সত্যি আশ্চর্যের বিষয় হলেও সম্পূর্ণ সত্যি।
মারমেড বা জলপরী…
এই পেশাটি শুধুমাত্র মহিলা অধ্যুষিত বলা যেতে পারে। সিরেনা নামক এক সিঙ্গাপুরের মহিলা প্রথম মারমেইড বা জলপরী হিসাবে পারফর্ম করেছিল। প্রতি ঘন্টায় 500 ডলারের বিনিময় যেকেউ সিরেনার মারমেড সার্ভিসকে ভাড়া করতে পারেন যার মধ্যে গান গাওয়া, গল্প শোনানো এবং জলে বিভিন্ন রকম খেলা দেখানো অন্তর্ভুক্ত। সিরেনা বর্তমানে একটি মারমেড স্কুল খুলেছেন যেখানে প্রচুর মহিলা নিজেদের স্বপ্ন সত্যি করতে পারে।
অর্গাসমিক মেডিটেশনের প্রতিষ্ঠাতা (Orgasmic Meditation)…
অনেকেই জীবনে প্রথমবার হয়তো অর্গাসমিক মেডিটেশনের নাম এখানে শুনবেন। (Orgasmic Meditation) বা সংক্ষেপে (OM) হল ব্রিটিশ কোম্পানি যার উদ্যোক্তা হলেন নিকোল ডেডোন নামের এক মহিলা। এটি কোন শিশুসুলভ ব্যাপার নয়,বরং এর নামের সাথেই সম্পৃক্ত। মহিলাদের যৌনতা বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে এই প্রতিষ্ঠানটি এই বিষয় সম্বন্ধীয় বিভিন্ন গবেষণা করে এবং মহিলাদের সাহায্য করে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার লোক এই সংস্থার সাথে জড়িত এবং লন্ডন ও সান ফ্রানসিসকোর মত জায়গাতেও এই মহিলাচালিত উদ্যোগটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুরের পুল আন্টি…
এটি সম্ভবত সবথেকে আশ্চর্যজনক যে সিঙ্গাপুরের এই পুলটিতে আজ অবধি কোন পুরুষকে অর্থাৎ Singapore Pools Uncle (SPU) কে দেখা যায়নি। অদ্ভুতভাবে এই পুলটিতে শুধুমাত্র মহিলারাই কাজ করে থাকেন, তাই এই কর্মক্ষেত্রটিও নারী অধ্যুষিত ও পুরুষ বিবর্জিত বলা যেতেই পারে।
মহিলা পার্লার…
এখনো পর্যন্ত কোন মহিলা পার্লারে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। অন্তত আমাদের ভারতবর্ষে তো বটেই। আজ অবধি কোন মহিলা পার্লারে কোন পুরুষকে কোন নারীর প্রসাধন বা রূপচর্চা করতে সাহায্য করতেও দেখা যায়নি। যদিও পুরুষ বিউটিশিয়ানের সংখ্যা কম নয় এবং ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্বত্রই পুরুষদের আধিপত্য বিস্তার রয়েছে, কিন্তু তবুও শুধুমাত্র মহিলা পার্লারের অন্দরমহলে এখনো পর্যন্ত গোপনীয়তা এবং মহিলাদের যত্ন আত্তির জন্য পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। সেখানে শুধুমাত্র মহিলাদের আধিপত্য ও আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
সর্বশেষে বলা যায় পুরুষতান্ত্রিক পৃথিবীতে যেখানে সমস্ত কাজকর্ম এখনো পর্যন্ত পুরুষশাসিত সমাজের অঙ্গুলীহেলনেই হয়ে থাকে, সেখানে মহিলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা কায়েম করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হলেও অসম্ভব ছিল না এবং সে কারণেই আজকের পৃথিবীতে মহিলাদের অস্তিত্ব, তাদের নিজেদের অবমাননার প্রতি সঠিক উত্তর নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে। সংসারের গৃহকর্ত্রী থেকে শুরু করে শিশুর পরিচর্যা, অফিসের যেকোনো ধরনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, পাইলট, অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক অথবা যেকোনো ধরনের মজুরিভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রেও মহিলারা আজকের পৃথিবীতে নিজেদেরকে অত্যন্ত দক্ষ প্রমাণিত করেছে। পুরুষতান্ত্রিক শাসন এবং যাবতীয় অবমাননার প্রতিবাদ করে নারীত্বের ধ্বজা আজকের পৃথিবীতে কায়েম হয়েছে।