প্রায় ষাট মিলিয়ন বছর আগে অ্যানট্রিম আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের মধ্যভাগে অবস্থিত ছিল। স্কটল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জ, আইসল্যান্ড এবং গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তরল লাভার পাতলা পাতগুলো এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই তরল লাভা ঘন হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং এই সংকোচনগত ভগ্নাংশগুলো তৈরি হয়। লাভা শীতল হওয়ার মাত্রা একই রকম থাকায় সরলভাবে সংকোচনগত ফাটল সৃষ্টি হয় এবং শীতল হওয়ার মাত্রা যথারীতি চলতে থাকলে অনেক ষড়ভুজাকৃতি স্তম্ভ তৈরি হবে। যেহেতু লাভা শীতল হয়ে গভীরতর দিকে বিস্তৃত হয়। অতএব এই ষড়ভুজাকৃতির ফাটলগুলোও নিচের দিকে বিস্তৃত হয় এবং এভাবেই বিরাট আকারের স্তম্ভের সৃষ্টি হয়।
3. থর’স ওয়েল, ওরিগন, যুক্তরাষ্ট্র:
কঠিন আবহাওয়ায় থর’স ওয়েলকে স্পাউটিং হর্ন বলা হয়ে থাকে। বিশাল গর্তের ভিতরে প্রচন্ড শক্তিতে জল প্রবেশ করে। কেপ পারপেটুয়া স্কেনিক এরিয়া থেকে দেখতে অনেকটা ক্যাপ্টেন কুক ট্রেল মনে হয়। তাই আপনাকে দূর থেকেই দেখতে হবে এই স্থানটি। ভয়ানক স্থানটির থেকে জোয়ারের সময় বা শীতের ঝড়ের সময় দূরে থাকাই ভাল।
4. পামুক্কালে, তুরস্ক:
পামুক্কালের বিস্তীর্ণ ভূমি ট্র্যাভারটাইন দ্বারা নির্মিত। ট্র্যাভারটাইন এক ধরনের পাললিক শিলা যা উষ্ণ জলধারার জল জমা হয়ে তৈরি করে। পামুক্কালেতে ১৭টি উষ্ণ জলধারা রয়েছে যেগুলোতে তাপমাত্রা ৩৫°সে. থেকে ১০০°সে. পর্যন্ত এখানে থাকে। এসব জলধারা থেকে আগত জল ট্র্যাভারটাইন ভূমির ৩২০ মিটার অবধি প্রবাহিত হয় এবং ৬০ থেকে ৭০ মিটার প্রস্থ ও ২৪০ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এলাকায় ক্যালসিয়াম কার্বনেটের স্তর জমা করে। যখন সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট ধারণ করে ভূপৃষ্ঠে পৌছায়, তখন কার্বন ডাই অক্সাইড তার থেকে নির্গত হয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমা পড়ে থাকে। এই জমা হওয়ার প্রক্রিয়া ততক্ষণই প্রবাহিত হতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত জলেতে বিদ্যমান কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে সঠিক সাম্যাবস্থায় পৌঁছায়। এই জমা হওয়া ক্যালসিয়াম কার্বনেট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে ট্র্যাভারটাইনে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া আবহাওয়ার অবস্থা, পরিবেষ্টনকারী তাপমাত্রা, জলধারার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া প্রকৃতির এই স্থান অনন্য এক প্রাকৃতিক কীর্তি। ট্রাভেরটাইন এক ধরনের চুনাপাথর যা ক্যালসিয়াম জমা হয়ে তৈরি হয়। এখানে দুটি উষ্ণ প্রসবন রয়েছে, যার দুটিতে ভিন্ন ধাতব ধর্ম রয়েছে। স্থানটিতে হাল্কা লাল রঙ্গের উপত্যকা তৈরি হয়েছে এবং উপরের দিকে লৌহ আকরিক লক্ষ্য করা যায়।
জেমস ক্যামেরুনের এভাটার সিনেমাটা নিশ্চয়ই দেখেছেন? এই পাহাড়গুলো সেই মুভিতেই দেখা গেছে। যদিও প্রথমে সবাই ভেবেছিলো সেগুলো ভিজ্যুয়াল এফেক্ট দিয়ে তৈরি করা কিন্তু সত্যি এই পাহাড়গুলোর খোঁজ পাওয়া যায় চিনে। এগুলো এতো খাড়া আর এতো সরু যে, এখানে মানুষের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব নয়। হাজার হাজার বছর ধরে এই পাহাড়গুলো এভাবেই প্রকৃতির বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
8. সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ, ইয়েমেন:
ইয়েমেনের ড্রাগন ব্লাড ট্রি এক বিস্ময়কর গাছ। উদ্ভিদবিজ্ঞানে তার পরিচয় ড্র্যাকেইনা সিনাবারি। ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া এই গাছ বিশ্বের আর কোথাও জন্মায় না। বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান গাছগুলি আসলে প্রাগৈতিহাসিক অরণ্যের অবশিষ্টাংশ। প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে মূল আরব ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ। এই কারণে চারটি দ্বীপে বিবর্তনের প্রভাব পড়েনি। প্রকৃতির খেয়ালে তাই এখানে পরিবর্তনের ছাপ পড়েনি। তার জেরেই এখনও টিকে রয়েছে অতি প্রাচীন হরেক রকম প্রজাতির গাছ।
ফিলিপাইনের বোহো দ্বীপে অবস্থিত এই পাহাড়গুলোর নাম চকলেট হিলস। সারা বছর পাহাড়গুলো সবুজ বর্ণের থাকলেও গ্রীষ্মসহ যে কোন শুষ্ক মৌসুমে-এর লতাপাতাগুলো ব্রাউন বা বাদামী রঙ ধারণ করে, ফলে দূর থেকে দেখলে মনে হয় আপনি কিটক্যাট চকলেটের জগতে চলে এসেছেন। যাবেন নাকি…
10. হ্যান্ড অব দ্য ডেসার্ট, চিলি:
চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এই মরুভূমির এক খাঁ খাঁ প্রান্তরে হঠাৎই চোখে পড়তে পারে এক দানবীয় হাত। মরুর বালি ফুঁড়ে উঠে আসা হাতটি যেন থামতে বলছে কাউকে। আচমকা দেখলে মনে হতেই পারে, কোনো ফিউচারিস্টিক সিনেমার সেট-এ প্রবেশ করতে হয়েছে। কিন্তু এই হাতটি একান্তভাবেই সত্য। ‘মানও দেল দেসিয়ার্তো’ বা ‘হ্যান্ড অব দ্য ডেসার্ট’ আসলে ৩৬ ফুট উঁচু একটি ভাস্কর্য। চিলির প্রখ্যাত ভাস্কর মারিও ইররাজাবাল ১৯৯২ সালে এটিকে তৈরি করেন। দেখতে যত বিদঘুটেই হোক না কেন, কাউকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য বা চমক তৈরির অভিপ্রায় ইররাজাবালের ছিল না। তিনি এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন একেবারেই এক দার্শনিক ভাবনা থেকে।