Home ব্লগবাজি অপেক্ষা ~ গোধূলী

অপেক্ষা ~ গোধূলী

অপেক্ষা ~ গোধূলী

মে‌সেঞ্জা‌রে লাস্ট সিন দে‌খে ঘু‌মি‌য়ে পড়ল পিকু। ঘু‌মো‌নোর অা‌গে তৃষার প্রোফাইল অার মে‌সেঞ্জার দেখা এখন একটা অ‌ভ্যেসে প‌রিণত হ‌য়ে‌ছে। কিছু‌দিন অা‌গেও সকাল শুরু হত তৃষার “সুপ্রভাত” দি‌য়ে, তারপর দু’জনার কা‌জের ফাঁ‌কে সারা‌দিন এ‌কে অপ‌রের সাথে কত কথা, একদম ঘু‌মো‌তে যাবার অা‌গে পর্যন্ত। এখন কথারা অার ও‌দের দু’জনার সম‌য়ের কা‌ছে ধরা দেয়না। এক অজ্ঞাত কার‌ণে তৃষা পিকুর থে‌কে অ‌নেকটাই দূ‌রে স‌রে গে‌ছে, কিন্তু পিকু এখনও অ‌পেক্ষায় এই অাজ বু‌ঝি তৃষা বল‌বে “‌কি‌রে কেমন অা‌ছিস?”

এক‌দিন পিকু এক‌টি লেখা দেখ‌তে পায় ফেসবু‌কে, দারুণ প্র‌তিবা‌দী এক‌টি ক‌বিতা-‌লে‌খিকা তৃষা রায়। ক‌বিতাটা প‌ড়ে ক‌বিতার সূত্র ধ‌রেই ক‌মেন্ট অার একটা ফ্রেন্ড রিকু‌য়েস্ট ক‌রে ফে‌লে পিকু। প্রায় একমাস পর পিকু দেখ‌তে পেল তৃষা রায় তার বন্ধুত্ব স্বীকার ক‌রে‌ছে। প্রথ‌মে “নমস্কার, কেমন অা‌ছেন?” দি‌য়ে কথা শুরু, তারপর কখন যে এ‌কে অপ‌রের কা‌ছে চ‌লে অা‌সে দু’জনার কেউ বুঝ‌তে পা‌রে না।

তৃষার মে‌সেঞ্জা‌রের বোবা সবুজ অা‌লোটা পিকুর জীব‌নের এখন সব থে‌কে বড় বন্ধু। প্রায় রোজই পু‌রো‌নো লেখাগু‌লো‌তে চোখ বোলা‌তে বোলা‌তে কোথায় যে হা‌রি‌য়ে যায়। পিকু বরাবরই একটু পাগল, ভাবুক, অানমনা, অ‌ভিমা‌নি, তৃষার ঐশ্ব‌র্যের কা‌ছে অ‌নেকটাই বেমানান। অাস‌লে এই রকম ছে‌লে‌দের প্রে‌মিক পে‌তে অ‌নেক মে‌য়েরাই ভালবা‌সে, কিন্তু জীব‌নের একটা সময় পর অার ভালবাস‌তে ই‌চ্ছে ক‌রে না। পিকু‌কে তৃষা কতটা বুঝত ‌কে জা‌নে, ত‌বে তৃষা‌কে ওর থে‌কেও বে‌শী বু‌ঝে ফে‌লে‌ছিল। অার তা‌তেই বিপ‌ত্তি। তৃষা বরাবরই নারীবা‌দী, কিন্তু নারীবাদী হওয়া মা‌নেই সব পুরুষকে একরকম চো‌খে দেখতে হ‌বে, এটা ঠিক নয় বারবার বু‌ঝি‌য়ে‌ছে পিকু। তৃষা বো‌ঝে নি। অাজ এতটা দূ‌রে গি‌য়েও পিকু অ‌পেক্ষা ক‌রে তৃষার। কিন্তু তৃষা তার অাত্মাহংকা‌রে অাজও নি‌জের মত। সংসার কর‌ছে।

অাজ পিকুর ৪৫-এর জন্ম‌দিন। জীব‌নের এত গু‌লো বসন্ত একাএকা কা‌টি‌য়ে দিল শুধু অ‌পেক্ষায়, নি‌জের কা‌জের ব্যস্ততায়। পিকুর এখন ঠিকানা শা‌ন্তি‌নি‌কেতন। ওর বরাবরই ই‌চ্ছে ছিল শেষ জীবনটা এখা‌নেই কাটা‌বে। লাল মা‌টির সোঁদা গন্ধ ও‌কে মাতাল ক‌রে রা‌খে। নি‌জের ম‌নের মত ক‌রে সা‌জি‌য়ে গু‌ছি‌য়ে সুন্দর একটা বা‌ড়ি ক‌রে‌ছে পিকু। স‌ন্ধ্যে হ‌লে ক্ষ্যাপারা অা‌সে, গান বাজনা, লেখা‌লে‌খি ক‌রে দি‌ব্যি কে‌টে যা‌চ্ছে ওর। ত‌বে অাজ পা‌য়েস রান্না ক‌রে মাথায় অাশীর্বাদ করার মত কেউ নেই, একদম একা পিকু। জীব‌নে যতবার কা‌রো হাত ধ‌রে অাঁক‌ড়ে বাঁচ‌তে গে‌ছে, সবাই সেই হাত ছে‌ড়ে ও‌কে একা রে‌খে গে‌ছে। এই একাকীত্বই পিকুর জীব‌নে বাঁচার রসদ।

এখনও সবুজ অা‌লোটা জ্ব‌লে তৃষার, পিকুরটাও। কিন্তু কোন এক‌দিন পিকু হা‌রি‌য়ে যা‌বে চিরত‌রে, তখনও হয়ত সবুজ অা‌লো, ফেসবুক প্রোফাইল থাক‌বে কিন্তু তৃষা য‌দি ভুল ক‌রেও জান‌তে চায়, “‌কি‌রে কেমন অা‌ছিস?” উত্তরটা অার দেওয়া হ‌বে না। জীব‌নের সারাংশটা ফেসবু‌কেই জীবিত থাক‌বে, য‌দি কোন অঘটন না ঘ‌টে।।
©‌গোধূলী~
২৮/০৭/১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here