আজ আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস

আজ আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস

ওয়েব ডেস্কঃ   আজ ২৬ জুন চারিদিকে মাদক বিরোধী দিবসের প্রচার হচ্ছে। এমনকী ফেসবুকেও দেখলাম ইভেন্ট তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। শোভাযাত্রা,  লিফলেট,  হ্যান্ডবিল,  পোস্টার,  ক্রোড়পত্র এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে এসব কর্মসূচি হয়ে থাকে। জাতিসংঘের মাদকবিরোধী অফিস (ইউএনওডিসি) এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে, ‘মাদকের নেশা নয়, স্বাস্থ্যই হোক জীবনের নতুন প্রত্যাশা।’ মাদকসেবন, পরিবহণ, পাচার ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে দিবসটি পালন করা হয়।

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রচুর, সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, মাদকসেবীর সংখ্যা বিশ্বে বেড়ে চলেছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধ। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের মুনাফায় সৃষ্টি হচ্ছে মাফিয়াদের। মাদক সমস্যা এখন তাই কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সুফল না এলে বিশ্ব জুড়ে মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

উল্লেখ্য ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৪২/১১২ প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২৬ জুনকে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। জাতিসংঘ অনুসারে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের মাদক ব্যবসা হয়, পুরোটাই অবৈধ উপায়ে। এছাড়া মাদক সেবীর সংখ্যা বিশ্বে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। তার মধ্যে নিয়মিত মাদকসেবীর সংখ্যা কয়েক কোটি।

সুশীল সমাজের মতে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে যেসব সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে দরকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি। মাদকসেবন থেকে সন্তানকে দূরে রাখার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। যে পরিবার যতটা শৃঙ্খলিত, সে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা খুবই কম। এ ছাড়া মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য ধর্মীয় অনুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তথ্য দিতে পারলে এবং তাদেরকে বেড়ে ওঠার পরিপূর্ণ সুযোগ দিলে, শিশুরা মাদকের দিকে ঝুঁকবে না। আমাদের দেশে পথশিশু ও বস্তিবাসীদের মধ্যে মাদক গ্রহণ ও ব্যবসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মূলত মাদক ব্যবসা টিকে আছে এ শ্রেণির মানুষের জন্যই। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো সরকারের দায়িত্ব। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকগ্রহণ খানিটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ভ্রান্ত ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে তারা এমন অভ্যাসে স্থায়ী হচ্ছে, তা দূর করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখা দরকার। মাদকসেবীরা শুধু নিজের শরীরের ক্ষতি করে তাই নয়, তারা সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের মধ্যে অধিকাংশ মাদকসেবী। কিন্তু এই মাদকসেবীদের ঘৃণা করলেই যে সব সমস্যার সমাধান, তা নয়। ফ্লাইওভারের নিচে বসবাস করা আর্থসামাজিক ভাবে পিছিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা একান্তই ভাবতে হবে। মাদকসেবীদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করে তাদেরকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে অন্য মাদকসেবীরও তাদের দেখে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারে। অবশ্য যেসব কথা বলা হলো, ভারতবর্ষে তেমন কিছু কার্যক্রম সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চালু রয়েছে। কিন্তু মাদকের মূল হোতা যারা, তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাদক উৎপাদন, সরবরাহ, পরিবহণ ও ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে নির্মূল করতে না পারলে, প্রকৃতপক্ষে মাদক সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে, যেন নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর আগামী নিশ্চিত করতেই হবে। শুধু মাদকের উপর অতিরিক্ত শুল্ক নয়, সমাজের মানসিক চিন্তা কমাতে হবে। মানুষকে আর্থিক ও শিক্ষায় বলিয়ান করতে হবে। তবেই মানুষ দেখবে সুদিন। ক্যান্সারের ভয় দেখিয়ে, টিভি – সিনেমায় ক্ষান্ত থাকলে হবে না। মানুষকে সত্য পথের পথিক করে তুলতে ফোকাস করতে হবে সামাজিক চাহিদায়। সরকারই পারে এই মাদক কারবারীদের থেকে বাঁচাতে। প্লিজ সকলে এগিয়ে আসুন, সুস্থ সমাজকে ভালবাসুন।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here