ওয়েব ডেস্কঃ ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’…..
কাজী নজরুল ইসলামের এই খুশির গান নিয়ে এলো ২০১৭ সালে ঈদ। যদিও মধ্য প্রাচ্যে রবিবার পালিত হয়েছে ঈদ তবু নিয়ম অনুসারে রবিবার রাতের চাঁদের অবস্থান অনুসারে সোমবার ভারত ও বাংলাদেশ খুশির ঈদ পালিত হচ্ছে আজ। আসলে ঈদ-উল-ফিতর, আরবি অর্থে রোজা ভাঙার দিবস। সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখ ঈদ-উল-ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে পঞ্জিকা অনুসারে এই বছর রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা অর্থাৎ পুরস্কার রজনী এবং চলতি ভাষায় “চাঁদ রাত” বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়, এই কথা থেকেই চাঁদ রাত কথাটির উদ্ভব। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা করা ইসলামী বিধান। আধুনিক কালে অনেক দেশে গাণিতিক হিসাবে ঈদের দিন নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশে ঈদের দিন নির্ধারিত হয় দেশের কোথাও না-কোথাও চাঁদ দর্শনের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে। রমজানের একমাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিন রোজা রাখা যাবে না, বলা হয় এই দিনটি রোজা রাখা মানে হারাম।
সাধারণত ঈদের দিন ভোরে মুসলমানরা আল্লাহর ইবাদত করে থাকে। ইসলামিক বিধান অনুসারে দুই রাকাত ঈদের নামাজ ছয় তাকবিরের সাথে ময়দান বা বড় মসজিদে পড়তে হয়। ফযরের নামাজের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ঈদ-উল ফিতরের নামাজের সময় হয়। এই নামাজ আদায় করা মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য ওয়াজিব। ইমাম কর্তৃক শুক্রবারে জুম্মার নামাজের পূর্বে খুৎবা (ইসলামিক বক্তব্য) প্রদানের বিধান থাকলেও ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে তা নামাজের পরে প্রদান করার নিয়ম ইসলামে রয়েছে। ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী ঈদ-উল ফিতরের নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত, তা শ্রবণ করা নামাজীর জন্য ওয়াজিব। সাধারণত ঈদের নামাজের পরে মুসলমানরা সমবেতভাবে মুনাজাত করে থাকে এবং একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে ঈদের সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকে। ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো, “ঈদ মুবারাক”।
মুসলমান সম্প্রদায়ের বিধান অনুযায়ী ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার আগে একটি খেজুর কিংবা খোরমা অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হওয়া সওয়াবের (পূণ্যের) কাজ। ঈদ-উল ফিতরের ব্যাপারে ইসলামী নির্দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে গোসল করা, মিসওয়াক করা, আতর-সুরমা লাগানো, এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে গমন এবং নামাজ-শেষে ভিন্ন পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন। এছাড়া সর্বাগ্রে অযু-গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধানও রয়েছে। ইসলামে নতুন পোশাক পরিধান করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিভিন্ন দেশে তা বহুল প্রচলিত একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের রমযান মাসের রোযার ভুলত্রুটির দূর করার জন্যে ঈদের দিন অভাবী বা দুঃস্থদের কাছে অর্থ প্রদান করা হয়, যে কাজটিকে ফিৎরা বলা হয়ে থাকে। এটি প্রদান করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার বিধান রয়েছে। তবে ভুলক্রমে নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিৎরা আদায় করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। ফিৎরার ন্যূনতম পরিমাণ ইসলামী বিধান অনুযায়ী নির্দ্দিষ্ট। সাধারণত ফিৎরা নির্র্দিষ্ট পরিমাণ আটা বা অন্য শস্যের (যেমন- যব, কিসমিস) মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। সচরাচর আড়াই সের আটার স্থানীয় মূল্যের ভিত্তিতে ন্যূনতম ফিৎরার পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। স্বীয় গোলাম-এর ওপর মালিক কর্তৃক ফিৎরা আদায়যোগ্য হলেও বাসার চাকর/চাকরানি অর্থাৎ কাজের লোকের ওপর ফিৎরা আদায়যোগ্য নয়; বরং তাকে ফিৎরা দেওয়া যেতে পারে। ইসলামে নিয়ম অনুযায়ী, যাকাত পাওয়ার যোগ্যরাই ফিৎরা লাভের যোগ্য।
ঈদের দিনে সকালে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা হল নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া। ঈদের নামাজ শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য। নামাজের পর সবাই একসাথে মিলিত হন এবং কুশল বিনিময় করেন। এসময় বাংলাদেশে ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে এবং সালামি গ্রহণ করে। ঈদের দিনে সালামি গ্রহণ করা প্রায় সব দেশেই রীতি আছে। তবে এর ধর্মীয় কোন বাধ্যবাধকতা বা রীতি নেই।
ঈদের দিনে সেমাই সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। এবং বিশেষ আরও অনেক ধরনের খাবার ধনী গরিব সকলের ঘরে তৈরী করা হয়। এ উৎসবের আরও একটি রীতি হল আশেপাশের সব বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এবং প্রত্যেক বাড়িতেই হালকা কিছু খাওয়া। এটাই রীতি।
মুসলমান সম্প্রদায়ে ঈদ-উল ফিতরই হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব। ঈদ উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা কেনাকাটা চলে। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোশাক কেনা হয়। পত্র-পত্রিকাগুলো ঈদ উপলক্ষে ঈদ সংখ্যা নামে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমত বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। উদযাপিত এই খুশির দিনে খবর ২৪ ঘন্টার তরফ থেকে জানাই ঈদ মুবারক। ভারতবর্ষের মতো সর্ব ধর্মে মিলিত দেশে আসুন সকলে মিলে মেতে উঠি আজ উৎসবে।