Home ব্লগবাজি এক পশলা বৃষ্টিঃ বৈশাখী চ্যাটার্জী

এক পশলা বৃষ্টিঃ বৈশাখী চ্যাটার্জী

এক পশলা বৃষ্টিঃ      বৈশাখী চ্যাটার্জী
এক পশলা বৃষ্টি #—
শেষ বিকেলের গোধূলির আলোয় মরাম রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে বৃতি আর অনিমেষ –দুজনেই বড় চুপচাপ ,বৃতির চোখ দুটো ছলছল করছে ,আবছা আলোয় অনিমেষ সেটা দেখতে পাচ্ছিল কিনা জানি না…।আজ দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক ওদের ,সেটার ইতি টানা হয়ে গেলো ,বাড়ি থেকে বৃতির বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে..অনিমেষ এখনও বেকার এই অবস্থায় সে বৃতি কে বিয়ে করতে রাজি নয় ,তাই আজ শেষ একটা বোঝা পড়া হয়ে গেলো –,প্রেম আর বিচ্ছেদের এই মাঝের কাহিনীটা যাদের জানা তারা হয়ত বুঝবে –একটা সরু সুতো তবুও কিছুতেই সেটা ছেঁড়া যায় না -,একটা অভিযোগ একটা অভিমান নির্বাক হয়ে অস্ফুটে চিরতরে সেই সৃষ্টি কর্তার দুয়ারে গুমরে মরে…..।
 …………..আজ বিকেলের গোধূলির আলোয় সানাইয়ের সুরে বৃতির বিয়ের লগ্ন এসে উপস্তিত ,লাল বেনারসীতে চন্দনের সাজে কি অপরূপা লাগছিলো বৃতিকে ।সিঁদুর দান মালা বদল আর এরই মধ্যে দিয়ে স্বাগত রায়ের স্ত্রী বৃতি রায়ের এক নতুন জীবনে প্রবেশ —।
              স্বাগত খুব বড় ব্যবসায়ী -ভীষণ ব্যাস্ত মানুষ ,খুব অল্প বয়সেই ব্যবসাটাকে নিজের চেষ্টায় দাঁড় করিয়েছে ।
               নতুন দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করে দাম্পত্যের ঢেউ খেলানো সুখে মত্ত হয়ে ওঠে বৃতি ,–সবারই যেমন হয় ,আবার
আর পাঁচটা মেয়ের মতন সাংসারিক বিভিন্ন বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে বৃতির জীবন —,নুন তেলে রান্নার অনেক হিসেবে থাকত গঞ্জনা ,শিক্ষাদীক্ষায়–কালচারএ উঠে আসত বাপের বাড়ির খোঁটা –,ভাল লাগা মন্দ লাগায় কত বাধা নিষেধ ,তবুও জীবন নিজের নিয়মে এগোতে থাকে ,নিজের একান্ত একটা আমি সেটাকে কবেই যেন হারিয়ে ফেলে বৃতি ।
                ভীষণ ব্যাস্ত স্বাগত রায়ের দুটি সন্তানের মা হয় বৃতি –দুটো ছেলে মেয়েকে বড় করতে করতে জীবন অনেকটা এগিয়ে চলে ,এদিকে স্বাগতর ব্যাবসার প্রসার আরও বাড়ে –বৈভবে ,প্রাচুর্যে একটা সফল মানুষ স্বাগত রায় নিজের স্ত্রী সন্তানের প্রতি আরও উদাসীন হয়ে চলে ।
         ছেলে মেয়েরা এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে –স্বাগতও ব্যাবসার কাজে প্রায়ই বাইরে থাকে –একাকীত্ব গ্রাস করে বৃতি কে ,সংসারে সে অনেক দিয়েছে, এবার মাঝে মাঝে নিজের জন্য বড় বাঁচতে ইচ্ছে করে তার,iনিজের একটা জগৎ পেতে বড় ইচ্ছে করে ,চার দেওয়ালের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ,একটা খোলা আকাশের জন্য ছটফট করে বৃতি…।
             অনেকদিন পর স্বাগত বাড়িতে ফিরছে -তিমিরও আসছে ওর সঙ্গে দুপুরে খাবে ,বৃতি রান্নাবান্নায় ব্যাস্ত হয়ে ওঠে ,তিমির স্বাগতর পুরনো  বন্ধু ,দেখাশোনার সময় ওরা দুজনেই দেখতে গিয়েছিলো বৃতি কে…,তিমিরের সঙ্গে মাঝে মাঝে whats appএও কথা হয় বৃতির ,প্রায় দশ বছর পর ট্রান্সফার হয়ে কলকাতায় ফিরল তিমির ,…দীর্ঘদিন পর একটা সুন্দর দুপুর ,বৃতির মনটা আনন্দে ভরে ওঠে…..স্বাগতকেও আজ অনেক দিন পর কাছে পায় সে খুব কাছে ।
              এরপর থেকে প্রায় রোজই কথা হতে থাকে তিমিরের সাথে ,কখন ফোনে ,কখন বাড়িতে এসে এক কাপ চা ,সম্পর্কটা কেমন যেন এগিয়ে চলে ,কেমন একটা ভাললাগা তৈরি হয় অকারণেই আর তার রেষ কিছুতেই কাটে না ,বড্ড একা নিঃসঙ্গ বৃতির জীবনটা কি যেন ছন্দে ভরে ওঠে ,বৃতির মনের অনেক খানি জুড়ে তিমির জায়গা করে নেয় —।
              গাঁটছড়া বিহীন এই সম্পর্ক সমাজের চোখে অবৈধ যদিও সেখানে শরীরী কোন লেনদেন ছিলো না ,ছিলো শুধু মনের আদান প্রদান তবুও ভীষণ অসহায় লাগা মুহুর্তগুলোয় তিমিরকে বড্ড কাছে পেতে মন যেত বৃতির –একটু ছোঁয়া একটু স্পর্শ ,বড্ড অবুঝ হত মন আর এভাবেই একদিন ভেসে যায় বৃতি ,
যেনো একটা মুহুর্তের ভুল….পাতা ঝরার দিনে পর্ণমচী যেমন দাঁড়িয়ে থাকে তেমনই ভীষণ অসহায় ভাবে
দাঁড়িয়ে থাকে বৃতি ,…..
                 গোটা ঘটনার আভাস পায় স্বাগত ,তিমির বদলি নিয়ে অনেক দুরে চলে….,যায় ঝড়ো হাওয়ায় ঝাপটা মারে জানলা গুলো….এক পশলা বৃষ্টিতে কেমন যেন ভিজে যায় বৃতির গোটা শরীর ।।
                          বৈশাখী চ্যাটার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here