Home ব্লগবাজি এবার খুনটা হবে ~ দেবব্রত সান্যাল

এবার খুনটা হবে ~ দেবব্রত সান্যাল

এবার খুনটা হবে    ~    দেবব্রত সান্যাল

এবার খুনটা হবে

***************************

দেবব্রত সান্যাল

সকালে উঠে রাহুলের কিছুতেই মনে পড়লো না , কাল রাতে কাকে খুন করবে ঠিক করেছিলো।
খুব বিরক্তি লাগলো , এতো বুদ্ধি খাটিয়ে করা প্ল্যানটা মাথা থেকে উড়ে গেলো !
এটা অবশ্য সত্যি, শনিবার ক’রে সন্ধ্যেবেলা রমের বোতল নিয়ে বসলে কারোর না কারোর
নাম উঠে আসে। ধীরে ধীরে শয়তানির কার্বাইডে প্ল্যানে রং ধরে , কিন্তু সকালে উঠে
নেশাটা কেটে গেলে ঝুড়ির মধ্যে পরে থাকা প্ল্যানটা আর তেমন আকর্ষণীয় লাগে না।
অথবা কিছু না কিছু ঝামেলায় প্ল্যানটা বাতিল হয়ে যায়।

রাহুলের বৌ মঞ্জু খুব জামাইবাবু জামাইবাবু করে মাথা খায়। জামাইবাবু এই করে ,
জামাইবাবু সেই করে। মটকা গরম হয়ে যায়। বললে বলে , “নিজে তো অকম্মার ঢেঁকি ,
জামাইবাবুকে হিংসে করো”। রাহুলের নিজস্ব আদালতে এর একটাই শাস্তি, মৃত্যু।
প্ল্যানটা খুব সোজা ছিল। ওই জামাইবাবুর আজকাল চিনির দোষ, জামাইবাবু এলেই মঞ্জু
শসা কেটে নুন ছড়িয়ে খেতে দেয়। নুনের পাত্রের মধ্যে মারকিউরিক ক্লোরাইড রেখে
দিলে , মঞ্জুর হাতেই ওর জামাইবাবু মরবে। প্রায় তিন সপ্তাহ ভেবে , দেড় বোতল রম
পেটে চালান করে , শেষ মেশ এখনো কাজটা করা হয়নি ।

ইতিমধ্যে অফিসের বস খুরানার নামটা উঠে এলো । খচ্চরটা সব সময় পিছে লাগে ।
চরিত্র খারাপ। রাহুলের লেখালেখি অভ্যাস নিয়ে আপত্তি আছে। “বাঙালীগুলো কোনো কাজ
করে না, খালি ফেসবুকে পোয়েট্রি করে।” এই প্ল্যানটা ফাটাফাটি ছিল। রাহুল
ভাবছিলো খুব সাবধানে রটিয়ে দেবে , মিস.সেনের এইডস হয়েছে। খুরানার কানে তো
যাবেই, ভালো প্যানিক খাবে। ঠিক লাঞ্চের সময় অফিসের পাওয়ারটা কেটে দেবে।
ইলেক্ট্রিশিয়ান তখন খেতে যাবে। গরমের জন্য খুরানা রাস্তার ধারের জানলাটা খুলে
হওয়া খাবে , এগারো তলায় অফিস, তখন ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে কাজ শেষ । এইডসের
পটভূমিকায় আত্মহত্যা বলে চালানো যাবে।রাহুল এখনো ভেবে যাচ্ছে , করা হয়ে ওঠেনি।
অ্যাকসিডেন্টের একটা প্ল্যান ওদের প্রোমোটার সারাফের জন্যও করেছিল। আধ তৈরি
বাড়িতে সারাফের পায়ের কাছে ঢোঁড়া সাপ ছেড়ে দিলে নিচে পড়ে মরবে। শনিবারের
সন্ধ্যেতে রম চানাচুরের সাথে এইসব প্ল্যানগুলো রাহুলের ভালোই লাগে। কিন্তু
দিনের বেলায় অনেক খুঁত বেরিয়ে পরে। নিখুঁত খুনের প্ল্যানটা গতকাল রাতে হয়েছিল
, খুব মনে হয়েছিল এবার ঠিক খুনটা হবে । হতেই হবে, এবার না করতে পারলে সবাই আরও
পাত্তা দেবে না। আরও অপমান করবে। আর কপাল দেখো , খুশির আমেজে একটু বেশি টেনে
রাহুল নামটাই ভুলে মেরে দিয়েছে !

রবিবার দিনটা একটু শুয়ে গড়াবে তেমন কপাল রাহুলের নয়। মঞ্জুর একগাদা ফরমায়েশ
থাকে , দু দুখানা বাজারের থলে নিয়ে যেতে হয়। নিচে নামতেই রাহুলের সামনে পড়লো
পাড়ার সার্বজনীন অভিভাবক টুকাই। খুব শীঘ্রই একে মারার একটা প্ল্যান করতে হবে।
বাজার যাবার পথে অসিতের দোকান , একেও রাহুল দু চক্ষে দেখতে পারে না। দোকানেই
শোয়, আগুন লাগিয়ে দিলে সাবাড় হয়ে যাবে। পুরো প্ল্যানটা করা আছে।

মোবাইলটা বেজে উঠলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনটা ধরলো রাহুল। ফোনের ওপারের গলা
থেকে রাগ বিরক্তি একসাথে এলো।

” আমি ঋতুযান সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক বলছি। দেখুন আমরা আপনাকে কারণ দেখাতে
বাধ্য নই , কেন আপনার উপন্যাস আমাদের পছন্দ হয়নি। কিন্তু আপনি আপনার মেলে এমন
সব বিশ্রী অভিযোগ করেছেন , তাই বলছি , আপনার মানসিকতা শুধু বিকৃতই নয় ভয়ঙ্করও
বটে। আপনার ভালোর জন্য বলছি ,আপনি ডাক্তার দেখান রাহুলবাবু ।”

রাহুলের মাথাটা এখন কুলপির মতো ঠান্ডা ,, মনে পড়ে গেছে, কাল রাতে কাকে খুন
করার প্ল্যান করেছিল।এবার তো খুনটা হবেই হবে।

 

দেবব্রত সান্যালঃ১১/০৬/২০১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here