কোটিপতি হতে চান? এখনো অনেক গুপ্তধন লুকোনো আছে আপনার অপেক্ষায়

কোটিপতি হতে চান? এখনো অনেক গুপ্তধন লুকোনো আছে আপনার অপেক্ষায়

 

সাধারণত গুপ্তধন শব্দটি শুনলেই  মানুষের মনে প্রবল অ্যাডভেঞ্চার, নেশা আর অজানাকে আবিস্কার এর ইচ্ছে তৈরি হয়। প্রাচীন কাল থেকে গুপ্তধনই ছিল ধনী হওয়ার একমাত্র সহজ উপায়  । লুকিয়ে রাখা টাকা, সোনা, হিরে, দুর্লভ রত্নের খোঁজে যুগে যুগে কত রক্ত ঝরেছে, কত মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তার হিসেব নেই ।  একজন- দুজন নয়, হাজার হাজার মানুষ এই গুপ্তধনের খোঁজে কোথায় যে হারিয়ে  গেছে তার কোন  তথ্য  আজও ইতিহাসের পাতায়  উল্লেখ  নেই । । তবুও বিশ্বের অনেক জায়গায় আজও অনেক রহস্যময় গুপ্তধন লুকিয়ে আছে যা আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি । এমনি অনাবিষ্কৃত কিছু গুপ্তধনের গল্প রইল আজ,    

 

১ঃ    এল-ডোরাডো (El Dorado)

এল ডরাডোকে  The city of Gold বলা হত ।  এই গুপ্তধনকে  আভিশপ্ত  ও বলা হয়  ।    একদিনে ধনী হওয়ার নেশায় এই বিপুল ঐশ্বর্য উদ্ধার করতে যারাই চেষ্টা চালিয়েছে  প্রকৃতি তাঁদের নির্মম মৃত্যু দণ্ড  দিয়েছে । কথিত আছে  দক্ষিণ আমেরিকার কলাম্বিয়ার গুয়াটাভিটা  ঝিলের নিচে  কয়েক মণ  সোনা  নিমজ্জিত আছে  । বহুযুগ আগে সূর্য উপাসক  চিব্বা আদিবাসি্রা  কলাম্বিয়ার এই যায়গায় বসবাস করত । সূর্যের আরাধনায় তাঁরা তাদের পরিধানের সোনার অলঙ্কার  সূর্য দেবকে অর্পণ করত এই গুয়াটাভিটা  ঝিলে। এই ভাবে ঝিলের  পাদদেশে কয়েক শত  মণ সোনা সঞ্চিত হয়ে আছে। এই গুপ্তধনের একক মালিকানা পেতে চেয়েছিলেন ফরাসি জলদস্যুরা, কিন্তু  তারাও এই সোনা উদ্ধার   করতে পারেনি । প্রথম বিশ্ব  যুদ্ধের সময় গোটা কলাম্বিয়া এই গুপ্তধন উদ্ধারে প্রচেষ্ট হয় কিন্তু আজ অবধি গোয়াটাভিটা  ঝিল পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায়নি ।     

 

২ঃ   Cahuenga Pass এর গুপ্ত ধন

১৮৬৪ শালে মেস্কিকোর রাষ্ট্রপতি বেনিটো জুয়ারেস  কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি  ৪ সৈনিককে দিয়ে সানফ্রান্সিস্কো পাঠান, কিন্তু কিছু  পথ যেতেই  দুর্ভাগ্য বশত এক সৈনিকের মৃত্যু হয় । বাকিরা ঐ সম্পদ নিরাপদ রাখার জন্য  সেই জায়গাতেই পুঁতে রেখে যান ।  দিয়াগো মারেনা নামে এক ব্যাক্তি  তাদের এই কাজ দেখে নেয় ।  সৈনিকেরা ঐ জায়গা ছেড়ে যেতেই  দিয়াগো তা উদ্ধার করে পালায়, এবং তা  লসএঞ্জেলস এর কাছে পাহাড়ের মধ্যে Cahuenga Pass নামে একজায়গায় পুঁতে দেয় । কিন্তু সেই রাতেই দিয়াগোর মৃত্যু হয় । মৃত্যুর আগে সে তার এক বন্ধুকে এই ঘটনা বিস্তারিত জানায় । দিয়াগোর বন্ধু মার্টিনেজ তার  সৎ ছেলেকে নিয়ে এই গুপ্তধন খনন শুরু করে্ন তার ও মৃত্যু হয় সেই রাতেই । আচমকা গুলি বিদ্ধ হয় তার ছেলেরও  মৃত্যু হয়। ১৮৮৫ সালে বাস্কিউ শেফার্ড নামক এক ব্যাক্তি এই সম্পদের কিছু অংশ পায় । সমুদ্র পথে  স্পেন যাবার সময় জাহাজ   ডুবে তারও  মৃত্যু হয় । আজ অবধি এই গুপ্তধন না কেউ খুঁজে পেয়েছে না ভোগ করতে পেরেছে।  কথায় আছে   “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু “, তা বারবার মনে করিয়ে দেয় এই গুপ্তধনের ইতিহাস। 

 

৩ঃ   ইঙ্কা সভ্যতার গুপ্ত ধন (Inca Gold Treasures)      

কথিত আছে আমেরিকায় ব্যাঙ্কে যত  টাকা আজও আছে,  তার থেকে অনেক বেশি  সোনা ইঙ্কা সভ্যতার মানুষের কাছে ছিল । স্পেনীয় জলদস্যু  ফ্রান্সিস্কো পিজারোর ১৫৩২ সালে ইঙ্কা আক্রমন করেন। রাজাকে মুক্ত করার বদলে একটি বড় ঘর ভর্তি সোনা ও সমপরিমান রুপো দাবি করেন। ইঙ্কারা তাতে রাজী হয়ে সমস্ত সোনা একত্রিত করে, কিন্তু পিজারো রাজা কে হত্যাই করে দেন। ১৫৩৩ সালের ২৬শে জুলাই ইঙ্কা সেনাপতি রামানিহুল স্পেনীয়দের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সেই সমস্ত ধণসম্পদ পুর্বের কোনও জনমানবহীন গুহা বা হ্রদ এর তলায়ে লুকিয়ে রাখেন। আজ পর্যন্ত এই গুপ্তধনের হদিস কেউ পায়েনি। 

 

৪ঃ   চেঙ্গিস খানের সমাধি

 চেঙ্গিস খান প্রায় সারা পৃথিবী জয় করে প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন বিশাল মোঘল  সাম্রাজ্যের । অপার ধনসম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী এই মুঘল সম্রাট এর মৃত্যু হয়ে  ১২২৭ সালে । ইতিহাস বলে চেঙ্গিসএর মৃত্যু ঘটে চীনদেশে, তার মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়ে মঙ্গোলিয়ায়। এক অজানা ও দুর্ভেদ্দ্যস্থানে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। তার সাথে সমাধিতে দেওয়া হয় অনেক অনেক ধনসম্পদ। কিন্তু কেউ আজ অবধি জানেন না সেই সমাধির আসল অবস্থান, বলা হয়ে যে কর্মী বা বাহিনী তাঁকে সমাধি দিতে যান তাঁদের সবাই কে সেখানেই হত্যা করা হয়ে যাতে বাকি পৃথিবী এর কোনো খোঁজই না পায়ে।  অনেক ঐতিহাসিক এবং সন্ধানীরা আজও চেষ্টা করে চলেছেন এই সমাধিক্ষেত্র আবিস্কার এর কিন্তু এখনো অবধি কেউ কৃতকার্য হননি। 

 

৫ঃ   লি অন ত্রিবুকোর গুপ্তধন  

 ১৯৩৩ সালে, আমেরিকায় তৎকালীন অর্থনৈতিক মন্দা যা  great depression নামে খ্যাত চলাকালীন কোটিপতি ব্যাবসায়ি লি অন ত্রিবুকো  নিউ মেক্সিকোর মরুভুমিতে ১৬ টন সোনা  লুকিয়ে রাখেন । তাঁর বিমানচালক রেড ময়সার পরে জানান যে   লি অন ত্রিবুকো তার দুই তিন বন্ধুর সাথে মিলে বারবার মরুভুমিতে গিয়ে এই সম্পদ পুঁতে আসেন । তাদের ধারণা ছিল, আমেরিকান সরকার এর রাজকোষে রাখা সোনা কমে এলেই সোনার দাম আকাশছোঁয়া হবে। কিন্তু যা মানুষ ভাবে না তাই হয় । আমেরিকা সরকার  একটি বিল পাশ করে জানায়  যে সোনার উপর  কারোর নিজস্ব কোন মালিকানা থাকবে না  এবং  সমস্ত  সোনা  রাষ্ট্রীয়   সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা  করা হয় । এই বিল লি অন ত্রিবুকোকে দেউলিয়া করে দেয় । লোকসান এর জেরে একে একে সব অংশীদার দের সাথে  শেষ পর্যন্ত লি অন ত্রিবুকোর ও মৃত্যু ঘটে । চিরদীন এর মতো মরুভুমির গভীরে তলিয়ে যায় ১৬টন সোনা।

 

৬ঃ    ওক আইল্যান্ডের সুড়ঙ্গ 

ওক আইল্যান্ডে  ১৭৯৫ সালে কিছু কিশোর স্থানীয় নোভা-স্কোটিয়া বদ্বীপের কাছে  এক জায়গায়  গর্ত খোঁড়ার দাগ দেখতে পায় । তারা সবাই মিলে ওই গর্ত খুঁড়তে শুরু করে, প্রতি ১০ফুট নিচে তারা ওক কাঠের একটি করে ডাল পেতে থাকে, যাতে সাঙ্কেতিক নানা চিনহ আঁকা থাকে। আরও গভীরে তারা একটি পাথরের খন্ড খুঁজে পান যাতে লেখা ছিল ৪০ ফিট  নিচে ২ মিলিওন  পাউন্ড  রাখা আছে ।  পরবর্তিকালে সরকারি সাহায্য নিয়েও এই সুড়ঙ্গর তলায়ে গিয়ে পৌছনো সম্ভব্ হয়নি। এখনো মাটির গভীরে রয়ে গেছে সেই গুপ্তধন।

 

 ৭ঃ   অ্যাপাচে ডাকাতদের  গুপ্ত ধন (Apache Indian Treasures)

একসময় অ্যারিজোনায়   সোনা ও রূপায়  ভর্তি  একটি  ট্রেনের  কামরা লুঠ হয় । সমস্ত ধন-সম্পদ লুঠ করে স্থানীয় অ্যাপাচে লুঠেরারাই। ঐ সময়  অনেক পত্র পত্রিকায় এই নিয়ে লেখাও হয় ।  যদিও আজ অবধি ওই এককামরা ভর্তি বিপুল সম্পদ উদ্ধার করা যায়েনি। মনে করা হয় অ্যারিজোনার  মেঞ্চেস্টার মাউন্টেন এর পিছনে আজও পুঁতে রাখা আছে সেই গুপ্তধন। 

 

 

৮ঃ     দ লস্ট ডাচম্যান গোল্ড মাইন  

দক্ষিণপশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স, অ্যারিজোনা, এখানেই পর্বতের পাদদেশে লুকিয়ে আছে একটি সোনার খনির দরজা।  স্থানীয় অ্যাপাচে উপজাতিরা পবিত্র এই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দিত না।  স্পেনের  এক ব্যাক্তি যার নাম বস্কিক মরাদ তিনি এই  সোনার খনির খোঁজা শুরু করেন । কিন্তু রহস্যময় কারনে তাঁর ও তাঁর  সাথিদের মৃত্যু  হয় । ১৮৪৫ ডন মেগুএল  পেরাসটাস নামক এক ব্যাক্তি কিছু সোনা পায় । কিন্তু স্থানীয় আপাচে আদিবাসিরা  তার হত্যা করে ও সোনা সমস্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয় । এমনকি খনির প্রবেশদ্বার  ভেঙ্গে দেয় ।  এক ডাচ ব্যাক্তি জ্যাকব ওয়াল্ট যিনি জার্মানি থেকে এসেছিলেন দীর্ঘ ২০ বছর  খোঁজের পর যখন সোনার খনির সন্ধান পান কিন্তু সে সম্পর্কে কিছু বলার আগেই তার মৃত্যু হয় । ১৯৩১ সালে  এডল রুট এই খনি খুজতে এসে হারিয়ে যান, ২ বছর পর তার দেহাবশেষের সাথে পাওয়া একটি কাগজে  লেখা ছিল “   I have seen  the gold mine. I have win “।  

 

৯ঃ    চার্লস আইল্যান্ডের গুপ্তধন

আমেরিকায় মিলফোর্ড সিটির কাছেই  ১৪ একর এর এক দ্বীপ যার নাম চার্লস আইল্যান্ড। এই  দ্বীপকে অভিশপ্ত দ্বীপও বলা হয়।  ১৭২১ সালে মেক্সিকোর সম্রাটর গুয়াতমোসিন এর সম্পদ  চুরি যায় । কিছু স্থানীয় নাবিক চুরি করা ধনসম্পদ এই দ্বীপে লুকিয়ে রাখে ।   এই গুপ্তধনের খোঁজে ১৮৫০ সালে কয়েক জন লোক ঐ জায়গায় যায় । কিন্তু সেখানে পৌছতেই  অশরীরী আত্মার শক্তিতে তাদের মৃত্যু ঘটে।  মনে করা হয় অশুভ আত্মা আজও পাহারা দিচ্ছে সেই লুকোনো ধনসম্পদ । আজ পর্যন্ত এই গুপ্তধন উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি ।

 

১০ঃ  পদ্মনাভস্বামী মন্দির

 

কেরলের ত্রিরুবন্তপুরামে স্বামী পদ্মনাভ মন্দির অবস্থিত । এই মন্দির  বিশ্বের সবচাইতে ধনী মন্দির ।  শ্রী বিষ্ণু এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত । এই মন্দিরের গর্ভগৃহে ভগবান  বিষ্ণুর বিশাল  মূর্তি  আছে । ঠাকুর  এখানে শেষ নাগের উপর শয়ন  অবস্থায়  বিরাজ মান ।

এই মন্দিরে ১,৩২,০০০   কোটির সম্পত্তি আছে  যার তুলনা সুইজারল্যান্ডের  সম্পত্তির সাথে করা হয় । এই মন্দিরের   সম্পত্তি নিয়ে অনেক রহস্যময় কাহিনী আছে । অষ্টাদশ শতকে ত্রিবাঙ্কোরের রাজারা এই মন্দির নির্মাণ করেন ।  ১৭৫০ সালে মহারাজা মার্তণ্ড নিজেকে  পদ্মনাভ দাস বলে ঘোষণা করেন ।  ত্রিবাঙ্কোর  রাজারা নিজের সব ধন  পদ্মনাভ মন্দিরে দান করেন । স্বাধীনতার পর সরকার এই মন্দিরের দায়িত্ব নিজে না নিয়ে রাজ পরিবারকে দিয়ে দেয় । এই মন্দিরের সঞ্চিত বিপুল ধনরাশির কথা ভেবে  স্থানীয় ভক্ত  সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান,  কোর্ট মন্দিরের দ্বার খোলার অনুমতি দেয় । বিচারক মণ্ডলীর সাত সদস্যর উপস্থিতিতে ৬টি দরজা খোলা হয়  । যার থেকে ১,৩২,০০০ কোটির সম্পত্তি পাওয়া গেছে । কিন্তু আশ্চর্য  ব্যাপার এই মন্দিরের সপ্তমদ্বার । এই দরজা আজ পর্যন্ত খোলা সম্ভব হয় নি । এই দরজায়ে কোনও কড়া/আংটা নেই ।  পুরানে কথিত এই  দাঁড়ের রক্ষক স্বয়ং শেষ নাগ । রাজপরিবারের সদস্য ত্রিনল মার্তণ্ড ইংরেজি  পত্রিকা টেলিগ্রাফে দেওয়া ইনটারভিউতে বলেছেন “ আমি সারা জীবন এই মন্দিরের সেবায়  নিজেকে উথসর্গ  করেছি। সপ্তমদ্বার খোলার অর্থ  দেশে প্রলয়  নেমে আসা । “  কোন সিদ্ধপুরুষ  গরুড় মন্ত্র স্পষ্টভাবে  উচ্চারণ করলে এই দাঁড় খুলবে । উচ্চারণ অস্পষ্ট  হলে সে ব্যাক্তির মৃত্যু হবে । আরও কত রহস্য এই মন্দিরে লুকিয়ে আছে তা  মার্তণ্ড পরিবারের চাইতে  ভাল কেউ জানেনা ।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here