পথ ----- ১৩
----------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাইরে বেরিয়ে যখন হঠাৎ বড় হয়ে গেছি সেসময় একদিন কেশবপুর কালীতলায়
যাই। কালীপুজো সারাবছর ধরেই হয়। কালীপুজোর কোনো সময় নেই। তবে এই পুজোর একটা
সময় সবাই জানে। দীপাবলিতে যে কালীপুজো হয়। কেশবপুরের কালীপুজো ওই কার্তিক
মাসেই হতো।
আমাদের ধনেখালির বাড়ি থেকে কেশবপুর হেঁটে ঘন্টা দেড়েক। বাসে মিনিট
কুড়ি। যাতায়াতের পথটা এমনই যে আমাকে সবসময় টেনে রাখতো। আমাদের পাড়াটা
পেরোলেই একবারে ফাঁকা। শুধু সবুজ আর সবুজ। ধানের ক্ষেত।
পথের ধারে কোনো বাড়িঘর নেই। বাস থেকে নেমে অনেকটা হেঁটে গেলে তবে গ্রাম।
পথে দাঁড়িয়ে সেই গ্রামের ছবি চোখে পড়ে না।
পথ যে বন্ধু হতে পারে, চোখের মনের শুশ্রূষা হতে পারে তা এই পথের দিকে না
তাকালে আমার শেখাই হতো না। কত পথ আমায় ডেকেছে, কত পথ আমায় ভয় দেখিয়েছে, কত পথ
অভিভাবকের মতো শাসন করেছে। কিন্তু এই পথ আমার বন্ধু। কাঁধে হাত রেখে আমরা
দুজনে পাশাপাশি হেঁটেছি।
এখানে পথ আমার সবুজ বন্ধু। যখনই তার ওপর দিয়ে গেছি কখনও নিজেকে একা মনে
হয় নি। কখনও ভয় পাই নি। দুপাশে তাকালেই পথ যেন বন্ধুর মতো আমাকে তার দুহাত
বাড়িয়ে দিয়েছে। খুব শান্ত মনে হয়েছে তাকে। তার শরীরে উগ্রতার লেশমাত্র দেখি
নি।
প্রথম যেদিন তাকে কাছে পাই সেদিন তো ছিল অভিযানের আনন্দ। মাকে "একটু
আসছি" বলে বেরিয়ে পরেছিলাম। তখন তো আকাশে বাতাসে শীতের আমেজ এসেই গেছে। দুপুর
তখন অনেকটাই লঘু। তাই সাথে সাথে নিষেধ নয়। " বেশি দূরে যাবি না। তাড়াতাড়ি
ফিরবি " ----- বলে বাঁধন আলগা করে দিয়েছিল।
সারা পথ নিজের ছন্দে হেঁটে গিয়েছিলাম। পুজো বলে আমার মতো দু একটা মানুষ
হেঁটেও যাচ্ছিলো। যদিও আমার গন্তব্যই তাদের গন্তব্য কিনা জানি না। এই প্রথম
এতটা পথ একা হেঁটে যাওয়া।
পথে এক মাতালের পাল্লায় পরেছিলাম। তখন মাতালকে খুব ভয় পাই। দূর থেকেই
বুঝতে পারছি লোকটার পায়ের ঠিক নেই। কিন্তু ওকে পেরিয়ে যাব কিভাবে ! কাছে
আসতে দেখি মানিক কাকা। দারুণ নেশাতেও আমাকে চিনতে পেরেছে। জড়ানো গলায় বলছে
------- " কোথায় যাচ্ছিস একা একা ? " যতটা গম্ভীর গলায় বললো আমার উত্তর শুনে
একবারে গলে গেল ----- " যা যা মায়ের কাছে যা। বলবি আর যাই কোরো মা, কাকার মতো
মাতাল কোরো না। " আমার ভয় হাওয়া। তবে ওই বয়সে ভাবতে ভালো লেগেছিল, পথই
মাতালটাকে মানিক কাকা করে দিয়েছিল।
~ হরিৎ :02/06/2017
***********************
Related