[ad_1]
ছোট সংসার মা ও ছেলের। এভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে কাটল ছন্দ। কারণ এই ছেলে আর কারও ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। কিন্তু মা সেই দেহ আগলে রেখেই কাটিয়ে দিল চারদিন। আসলে ছেলে আর ইহলোকে নেই। তিনি পরলোকগমন করেছেন। কিন্তু মা সেটা মানতে নারাজ। মায়ের দাবি, ছেলে ঘুমোচ্ছে চারদিন ধরে। তাই কেউ যেন ডেকে তাঁর ঘুম না ভাঙায়। এলাকায় তখন পচা গন্ধ বেরতে শুরু করেছে। রানাঘাটে ব্যবসায়ী ছেলের বাড়িতে যেতেই মিলল মৃতদেহ। ছেলের পচাগলা দেহের পাশেই নির্দ্বিধায় ঘুমিয়ে পড়তেন মা। বিছানা রক্তাক্ত। ওই পচাগলা দেহ উদ্ধার করতে গেলে বাধা দিলেন মা। পুলিশ অবশ্য ওই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত ব্যবসায়ীর নাম স্বপন দাস (৫২)। ওই প্রৌঢ় বহুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজেই চিকিৎসকের কাছে যেতেন। তাঁর মা সাধনা দাস বার্ধক্যজনিত অসুখে অসুস্থ। চারদিন আগে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকেই মৃত্যু হয়েছে স্বপন দাসের। এটা তাঁর মায়ের কাছে চরম আঘাত। তাই ছেলের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ওই বৃদ্ধা। তাই ছেলে ঘুমোচ্ছে বলে সবাইকে জানিয়েছেন। সোমবার স্বপন দাসের বাগানের সুপারি কিনতে যান এক ব্যবসায়ী। তিনি স্বপনকে অনেকবার নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। বরং তখন একটা হালকা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই হাঁকডাকের অনেকক্ষণ পর স্বপনের মা বেরিয়ে আসেন। আর ওই ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমার ছেলে চারদিন ধরে ঘুমোচ্ছে। কেউ ডাকবি না।’ বৃদ্ধার কথা শুনে সন্দেহ হয় ওই ব্যবসায়ীর। তারপর বাড়ির ভিতর থেকে আসা দুর্গন্ধ পান তিনি। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের বিষয়টি জানান। তখন বৃদ্ধাকে দরজা থেকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে প্রতিবেশীরা ঘরে ঢোকেন। তখনই দেখেন, বিছানায় স্বপনের নিথর দেহ। বিছানার চাদর রক্তাক্ত। আর তার পাশেই বৃদ্ধার শোয়ার জায়গা। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘রবিবার দুর্গন্ধ পেয়েছিলাম। কিন্তু তার উৎস বুঝতে পারিনি। আজ চমকে উঠেছি।’
আরও পড়ুন: রাজভবনে হঠাৎ হাজির কুণাল ঘোষ, রাজ্যপালের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ চলল কথা
আর কী জানা যাচ্ছে? এই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালে শেক্সপিয়র সরণি থানার রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনা। যেখানে একটি ফ্ল্যাটের শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক বৃদ্ধের দেহ। তারপরে উদ্ধার হয় আর এক মহিলা এবং দু’টি পোষ্যের কঙ্কাল। যা গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মৃতার ভাই পার্থ দে, দিদি এবং বাবার কঙ্কাল আগলে বসেছিলেন বাড়িতে। তাঁর ধারণা ছিল, আবার বেঁচে উঠবেন সবাই। স্বাভাবিক হয়ে যাবে জীবন। কিন্তু মানসিকভাবে অবসাদে পৌঁছেছিলেন তিনি। এমন ঘটনা আরও ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। এবার রানাঘাটের ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।