Home ব্লগবাজি তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার নতুন দিগন্তে মেঘ গণনা ( Cloud Computing )

তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার নতুন দিগন্তে মেঘ গণনা ( Cloud Computing )

তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার নতুন দিগন্তে মেঘ গণনা ( Cloud Computing )

তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় মেঘ গণনা

সুপ্রকাশ দে

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া গোটা পৃথিবীই আজ অচল । ব্যবসা, শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি, চিকিৎসা পরিষেবা থেকে শুরু করে মহাকাশ, মহাসমুদ্র সর্বত্রই তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া । তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগলবন্দি ইন্টারনেটের দৌলতে সারা বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয় । আর এই ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী ও সহজলভ্য করতে ক্লাউড কম্পিউটিং বা মেঘ-গণনার ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠছে ।

ক্লাউড কম্পিউটিং হল কম্পিউটারের রিসোর্স গুলি, মূলত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সার্ভিসগুলি দূরের কোনো ক্লায়েন্টকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রদান করা । ক্লাউড প্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো স্থানের একটি কম্পিউটার বহু দূরের আরেকটি কম্পিউটারের ক্ষমতাকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে  ভাগাভাগি করে নিতে পারে । এই প্রযুক্তিতে একটি মেশিনের সীমিত শক্তির পরিবর্তে অনেকগুলো মেশিনের শক্তি-সংযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা যায় । অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারের বিভিন্ন পরিষেবা ও ডেটা-স্টোরেজ সহজে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেতার কাছে ভাড়া দেবার সিস্টেমই হলো ক্লাউড কম্পিউটিং ।

ক্লাউড কম্পিউটং-এর ক্ষেত্রে ক্রেতারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সংযুক্ত থাকেন । কম্পিউটার বিজ্ঞানে নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম আঁকার সময় ইন্টারনেটকে একখন্ড মেঘের ছবি দিয়ে বোঝানো হয় । সেখান থেকেই ‘ক্লাউড’ বা ‘মেঘ’ কথাটি এই প্রযুক্তির নামের সাথে জুড়ে গেছে ।

ক্লাউড প্রযুক্তি কম্পিউটিংকে বিদ্যুতের মত পরিষেবায় বদলে দিয়েছে । যেমন- আমরা বাড়িতে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করি । যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বলে কিছু না থাকতো, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে জেনারেটার রাখতে হতো । সেক্ষেত্রে সমস্যা হলো, যদি কোনোদিন বাড়িতে একটি এসি মেশিন বসে বা পাঁচটির জায়গায় কুড়িটা আলো জ্বালাতে হয় তাহলে জেনারেটরটি পালটে উচ্চক্ষমতার অরেকটি নতুন জেনারেটার কিনতে হতো । এছাড়া প্রতিনিয়ত তার রক্ষণাবেক্ষণ, খরচ ইত্যাদি সব কিছুই মাথাব্যাথার বিষয় হয়ে দাঁড়াতো । কিন্তু আমাদের সেসব ঝামেলায় পড়তে হয়না ।সুইচ টিপছি, আলো জ্বলছে পাখা চলছে । যতটুকু খরচ করছি, মাসের শেষে ততটুকু বিল দিচ্ছি । বিদ্যুৎ উৎপাদন কোথায় কিভাবে হচ্ছে সেসব আমাদের জানার দরকার হয়না । বিদ্যুৎ তৈরী করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবার দায়িত্ব বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির । দশটির জায়গায় কুড়িটি আলো জ্বালালেও আমাদের অসুবিধা হয়না । আমরা শুধু টাকা দিয়েই নিশ্চিন্তে প্রয়োজনমত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি । ক্লাউড পরিষেবার ব্যাপারটাও অনেকটা এরকম । তবে পার্থক্যটা হলো, কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনগুলো বিদ্যুতের মত এক রকমের হয়না, অনেক ধরণের হয় । আর পরিষেবার দাম নির্ধারিত হয় ক্লাউড কম্পিউটিং এর পরিমাণ, জটিলতা এবং কতক্ষণ সময় ব্যবহার করছি তার উপর । ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে নিজের চাহিদামত পরিষেবা কিনে নেওয়া যায় ।

জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কাজ করে ক্লাউড, কোথায় থাকে এত ডেটা । ক্লাউড আসলে খুব বড় আকারের ডেটা সেন্টার, যেখানে হাজার হাজার সার্ভার সাজানো থাকে । লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তাদের ঠান্ডা রাখতে   হয় । এই হাজার হাজার সার্ভার দিয়ে অজস্র ক্লায়েন্টের জটিল সব সমস্যার সমাধান করা হয় । প্রত্যেক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেমে ডেডিকেটেড সার্ভার রয়েছে । ওই ডেটা সেন্টারে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা (যাদের সিস্টেম-অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বলা হয়) তারা সেই সব সিস্টেমকে ম্যানেজ করে, রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং গ্রাহকের চাহিদা নিশ্চিত করে ।

আমাদের সমস্যা সমাধানে ক্লাউডের ভূমিকাটা ঠিক কিরকম সেটা বুঝিয়ে বলা যাক । ধরা যাক আপনার অফিসের কম্পিউটারের তিনশো জিবি ধারণ ক্ষমতা আছে । কিছুদিন পর আরো ডেটা সেভ করার প্রয়োজন হলো । দোকানে গিয়ে একটা হার্ডডিস্ক কিনে আনলেন । কয়েক মাস পর আরো স্টোরেজ স্পেসের দরকার হলো । আবার হার্ডডিস্ক কিনে আনবেন? এটা একটা খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার । তাছাড়া কম্পিউটার বা হার্ডডিস্ক হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । হার্ডডিস্ক কোনো কারণে ক্রাশ করত পারে, সমস্ত ডেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে । আপনি যদি ডেটা রাখার জন্য ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করেন তাহলে এই সমস্ত অসুবিধা থাকছে না । ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে আপনি যত খুশি স্টোরেজ স্পেস ভাড়া নিতে পারেন বা কিনতে পারেন । আপনার সব তথ্য ক্লাউডে থাকবে । তথ্য হারানো বা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি নেই  । তাছাড়া আরো একটা সুবিধা হচ্ছে, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্লাউডে থাকা ডেটা আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাকসেস করতে পারবেন ।

আবার ধরুণ, আপনার কোনো কাজের জন্য অনেক প্রোসেসিং পাওয়ার (Processing Power) লাগে কিন্তু এই কাজটা শুধুমাত্র মাঝে মাঝে হয় । যেমন ধরুণ, স্টাফ সিলেকশন কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো । বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী একই সময়ে ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর দিয়ে রেজাল্ট দেখতে  চাইছে । তখন সার্ভারের উপর প্রচন্ড চাপ পরে । চাপ নিতে না পেরে সার্ভার ডাউনও হয়ে যায় । এই সমস্যা এড়াতে আপানার নিজস্ব সার্ভারের ক্যাপাসিটি বা ক্ষমতা বাড়ানো হলো, বা হয়তো আরো পাঁচটি সার্ভার কিনে কাজ চালাতে হলো । কিন্তু সারা বছর তো মেশিনটা এত লোড টানছে না । তাই বছরের বাকি সময়ের জন্য এটা একটা অপচয় । ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা হচ্ছে, আপনার যখন প্রয়োজন তখন আপনি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে সার্ভারের ক্ষমতা ভার্চুয়ালি বাড়িয়ে নিতে পারছেন, বা একটির জায়গায় পাঁচটি সার্ভার ভাড়া নিয়ে নিচ্ছেন । যখন দরকার নেই তখন তা ছেড়ে দিতে পারছেন । বাকি সময়ের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে না । অপ্রয়োজনীয়ভাবে উচ্চক্ষমতার সার্ভার কেনার ঝামেলাও থাকছে না ।

আবার ধরুণ, কোনো বড় ক্যালকুলেশনের জন্য ৩২-কোর প্রসেসরের প্রসেসিং-পাওয়ার দরকার যা আপনার কম্পিউটারে এই মূহুর্তে নেই । বা হয়তো একটি বড় ও জটিল সফটওয়্যার আপনার কোম্পানির কাজের জন্য রান করাতে চান, কিন্তু সেটা আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার-কনফিগারেশন সাপোর্ট করতে পারছে না । এই অবস্থায় আপনাকে কম্পিউটারটির যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে বা আপগ্রেড করতে হবে যা খরচসাপেক্ষ । আপনি কোনো ক্লাউড সংস্থার কাছ থেকে ওই সার্ভিসটি নিতে পারেন কম খরচে, কম ঝামেলায় । সেক্ষেত্রে আপনি নিজের কম্পিউটারেই ইন্টারফেসের সাহায্যে ভার্চুয়ালি সফটওয়্যারটি রান করাতে পারবেন ক্লাউডে থাকা অন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারে । এই ধারণাটিকে হার্ডওয়্যার ভার্চুয়ালাইজেশন বলা   হয় । ক্লাউড কম্পিউটিং এর মূল সুবিধা হলো আপনাকে হার্ডওয়্যার নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না । ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে যে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনগুলি আছে সেগুলি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন একটা ইন্টারফেস এর মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সাহায্যে ।

আর একটি উদাহরণ দেওয়া যাক । ধরুণ, আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট-অফিস সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা নেই । আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সংযোগ করলেন যারা আপনাকে ভার্চুয়ালি মাইক্রোসফট-অফিস এনভাইরনমেন্ট দিলো যেখানে আপনি আপনার কাজ করে নিতে পারলেন । এছাড়াও অনলাইন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায় । অনলাইনের মাধ্যমে লাইভ সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুয়োগ পাওয়া যায় ।

ক্লাউড নির্ভর পরিষেবা কতরকমের হয় তা কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । যেমন-

  • পরিকাঠামোগত সেবা (Infrastructure as a Service, সংক্ষেপে IaaS)- এখানে পরিকাঠামো ভাড়া দেওয়া হয় । মানে সার্ভারের উপর যে ভার্চুয়াল মেশিন চালানো হয় সেগুলিই ক্লায়েন্টরা ভাড়া নেয় । সেই ভার্চুয়াল মেশিনে ক্লায়েন্ট নিজের ইচ্ছামত সফটওয়্যার বসাতে পারে । আমাজনের EC2 এরকম একটি উদাহরণ ।
  • প্লাটফর্মভিত্তিক সেবা (Platform as a Service, সংক্ষেপে PaaS)- এখানে সরাসরি ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ক্লায়েন্ট-কে প্লাটফর্ম ভাড়া দেওয়া হয় যার উপর ইউজার অ্যাপ্লিকেশন চালাতে পারে ।
  • সফটওয়্যার সেবা (Software as a Service, সংক্ষেপে SaaS)- যে সফটওয়্যারটি আপনি ব্যবহার করতে চাইছেন সেটা আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করা   নেই । কিন্তু ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার কাছে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি পৌঁছে দিচ্ছে । সফটওয়্যারটিক্লাউডের উপর চলছে, কিন্তু আপনি নিজের কম্পিউটার বা মোবাইল দিয়েই দিব্যি কাজ চালিয়ে নিতে পারছেন ।
  • স্টোরেজ সেবা (Storage as a Service, STaaS)- এক্ষেত্রে হার্ডডিস্ক বা ফিজিক্যাল স্টোরেজের পরিবর্তে ক্লাউড স্টোরেজে ডেটা স্টোর করা হয় ।

উপরের পরিষেবা গুলি ছাড়াও, DaaS (Data as a Service), BPaaS (Business Process as a Service), SECaaS (Security as a Service), ইত্যাদি আরো অনেক ধরণের সার্ভিস ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি ক্লায়েন্টদের চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করে থাকে ।

কম্পিউটারে থাকা ডেটা ক্লাউডে স্টোর করা কি খুব কঠিন কোনো বিষয় ? তাও কিন্তু নয় । ধরা যাক আপনি কোনো ফাইল ক্লাউডস্টোরে রাখতে চাইছেন । ইন্টারনেট কানেকশন আছে এরকম কোনো কম্পিউটারে প্রথমে কোনো একটি সংস্থার ক্লাউড বেসড অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে হবে, যেমন- গুগল ড্রাইভ, ড্রপ বক্স, স্কাই ড্রাইভ ইত্যাদি । এবার ওখানে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন করতে হবে । যে ফাইল বা ডেটা ক্লাউডে রাখতে চাইছেন সেটা ওই অ্যাপের ভিতর রাখলে ফাইলটি সাথে সাথে সিনক্রোনাইজড হয়ে যাবে । এবার আপনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো ডিভাইস (কম্পিউটার, মোবাইল) দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওই ফাইলটি অ্যাকসেস করতে পারবেন ।

‘ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং’ (NIST) –এর সংজ্ঞা অনুসারে ক্লাউড কম্পিউটিং-এ পরিষেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবেই । যেমন-

(১) রিসোর্স স্কেলেবিলিটি বা ‘যত চাই তত পাই’ : অল্প হোক বা বেশী, ছোট হোক বড়, সব রকম ক্রেতার চাহিদাই তাদের প্রয়োজন মত প্রদান করবে ক্লাউড সংস্থাগুলি ।

(২) অন-ডিমান্ড সেবা বা ‘চাহিবা মাত্রই’ : ক্রেতা যখন চাইবে তখনই এই সার্ভিস প্রোভাইডার সার্ভিস দিতে পারবে । ক্রেতা তার প্রয়োজন মত যখন খুশি চাহিদা বাড়াতে বা কমাত পারবে ।

(৩) ‘পে-অ্যাজ-ইউ-গো’ অর্থাৎ ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’ পেমেন্ট মডেলে ক্রেতা যেরকম পরিষেবা নেবে সেরকম পয়সা দেবে । ক্রেতাকে আগে থেকে কোনো সর্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না ।

                                        ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারের ফলে ইউজার সাইডে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের চাহিদা কমে যাচ্ছে । ইউজার সাইডের ওয়ার্কলোড চলে যাচ্ছে ক্লাউডের দিকে । কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে শুধুমাত্র একটি জিনিস দরকার সেটা হলো ক্লাউড সিস্টেমের ইন্টারফেস-সফটওয়্যার যা ওয়েব ব্রাউজারের মতোই একটি সহজ অ্যাপ্লিকেশন । বাকি কাজগুলো ক্লাউড নেটওয়ার্ক সম্পাদন করে । যেহেতু আলাদা করে কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার কেনার প্রয়োজন হয়না, হার্ডওয়্যার মেনটেন্যান্স এর জন্য মাথা ঘামাতে হয়না, সফটওয়্যার ইনস্টল করা বা আপগ্রেডের ঝামেলা নেই, তাই ক্লাউড পরিষেবায় স্বাভাবিক ভাবেই খরচ অনেক   কম । যতটুকু ব্যবহার করবেন শুধুমাত্র ততটুকুর জন্য পয়সা গুনতে হবে, অনেকটা বিদ্যুৎ পরিষেবার মত । ল্যাপটপ হারিয়ে গেলে বা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে ডেটা হারিয়ে যাবার ভয় থাকে । কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং-এ ডেটা হারানো বা নষ্ট হবার ভয় নেই । এছাড়া ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজগুলি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসেই কন্ট্রোল করা যায়, শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হলো । ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মূল সুবিধা এগুলিই ।

সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে, ক্লাউড একটা ব্যবসায়িক মডেল, অর্থের বিনিময়ে পরিষেবা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা প্রযুক্তি । যেসব ক্রেতার অল্প সময়ের জন্য উচ্চক্ষমতার কম্পিউটার দরকার বা সার্ভার দরকার, বা  তথ্য রাখার জায়গা দরকার, কিন্তু অল্প সময়ের জন্য সে অজস্র টাকা খরচ করতে চাইছে না । ক্লাউড প্রযুক্তির দৌলতে সেটার দরকারও পড়ছে না । ক্লাউডের সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে প্রয়োজনমত ওই পরিষেবা ভাড়া নিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যা অনেক বেশী সাশ্রয়কারী এবং সহজ উপায় ।

ক্লাউড কম্পিউটিং মূলত চার ধরণের হয়ে থাকে ।

(১) পাবলিক ক্লাউড- যা সাধারণ জনগণ ব্যবহার করতে পারে । যেমন আমাজনের EC2 । যে কেউ এই পরিষেবা নিতে পারে ।

(২) হাইব্রিড ক্লাউড- যেটা শুধু কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের জনগণ ব্যবহার করতে পারে ।

(৩) প্রাইভেট ক্লাউড- এটা হল পাবলিক ও প্রাইভেটের সংমিশ্রণে তৈরী ।

(৪) কমিউনিটি ক্লাউড- এটা একাধিক সংস্হা বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে ।

                                   ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু প্রয়োগ আগেই আলোচনা করেছি । এবার আরো কয়েকটি অ্যপ্লিকেশন সম্পর্কে বলা যাক । ক্লাউড কম্পিউটিং-এর দুনিয়ায় বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন আছে । যেমন- আউটরাইট (Outright), যেটি একটি ফাইনান্স অ্যাপ্লিকেশন যার সাহায্যে ব্যবসায়িক সংস্থার অ্যাকাউন্ট মেনটেন করা যায় । আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট-অফিস সফটওয়্যার ইনস্টল করা না থাকলেও গুগল-অ্যাপসের সাহায্যে ডকুমেন্ট তৈরী, স্লাইড শো তৈরী, স্প্রেডশিড তৈরী, ইত্যাদি সব কাজ করতে পারবেন । বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে স্কাইপের মাধ্যমে ভিডিও চ্যাট করা যায়, সেটিও একটি ক্লাউড নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন । ভার্চুয়াল হার্ডডিস্ক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য ড্রপ-বক্স (DropBox) একটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন । অনলাইন ব্যাকআপ রাখার জন্য ‘মোজি (Mozy) খুবই জনপ্রিয় ।

জেনে বা না জেনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু সার্ভিস আমরা সবাই ব্যবহার করে থাকি ।ওয়েব বেসড ই-মেল পরিষেবা যেমন জি-মেল, ইয়াহু ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা তথ্য আদানপ্রদান করে থাকি । প্রত্যেকের ই-মেল অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ডেটাও স্টোর করে রাখা যায় । সেই তথ্য কিন্তু আমাদের কম্পিউটারে থাকেনা, তা থাকে সার্ভিস কম্পিউটারের ক্লাউডে । যে কোনো জায়গা থেকে ই-মেল আইডি তে লগ-ইন করলেই আমরা তা অ্যাকসেস করতে  পারি । এটাও ক্লাউড প্রযুক্তিরই একটা প্রয়োগ । গুগল, ফেসবুক, টুইটার, এই সব কিছুই কিন্তু ক্লাউড প্রযুক্তির উপরেই চালিত হচ্ছে ।

তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় ক্লাউড কম্পিউটিং-ই হবে ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রক । একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হিসাবে এটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে । মাইক্রোসফট, গুগল, ইয়াহু, আমাজন থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তির উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে এবং গবেষণা চালাচ্ছে । অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের বিনামূল্যে কিছু পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে । যেমন গুগল সংস্থা অনেক আগেই বিনা মূল্যে গুগল-ড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা চালু করেছে । মাইক্রোসফটে ওয়ান-ড্রাইভে এক টিবি ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা বিনামূল্যে দিচ্ছে ।

তবে এই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে । ক্লাউড পরিষেবা গ্রহণ করতে গেলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন । আমাদের দেশে এখনো বিপুল জনগোষ্ঠী উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবার বাইরে । তথ্যের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাজনিত বিষয় নিয়েও কিছু প্রশ্ন রয়েছে যেগুলি নিয়ে গবেষণা চলছে । তবে ভবিষ্যতে ক্লাউড কম্পিউটিং যে তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হতে চলেছে সে কথা বলাই যায় ।

 

সুপ্রকাশ:20/06/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here