Home ব্লগবাজি পথ —— ১৭ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —— ১৭ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —— ১৭    ~    হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —— ১৭
——————
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিকালবেলা খেলতে বেরোতাম। গুলিডাণ্ডা, মার্বেল, হিঙে —– কত কিছু যে
খেলতাম। যা-ই খেলি না কেন, বাড়ি ফিরতে যেন কোনো দিন সন্ধ্যে উত্তীর্ণ না হয়।
কড়া শাসন। না মানলে দিদির ভয়ঙ্কর প্রহার।
মা সন্ধ্যের শাঁখ বাজাত আর আমি বাড়িতে ঢুকতাম। বিকেলে খেলা থেকে আনন্দের
শেষ বিন্দুটাকেও শুষে নিয়ে তবে বাড়ি ফিরতাম।
হাত পা ধুয়ে তবে পড়তে বসতে হোত। কোনো ছাড় নেই। যেমন তেমন করে ধুলে
হবে না। মা আর না হয় দিদি সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। শীতকালে ধুলো লেগে হাত পা এত
ফেটে যেত যে জল লাগলেই জ্বলতো। মুখে আওয়াজ করলেই মারতো —— ” খেলার সময়
খেয়াল থাকে না!” আমি সাথে সাথে চুপ করে যেতাম। কারণ তখন কথা বললে মারের হাত
থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
কলাইয়ের বাটিতে মা মুড়ি আর ভেলি গুড় দিত। তাই আনন্দ করে খেতাম। মুড়ি
খেতে খেতে উঠোনে তাকাতাম। দেখতাম মা তুলসীতলায় প্রদীপ দিয়েছে। অন্ধকার উঠোনটা
ওই প্রদীপের আলোয় এক অদ্ভুত আলো আঁধারির সৃষ্টি হত। কি দারুণ যে লাগতো সেই
সময় তা বলে বোঝাতে পারবো না।
গরমকালের সন্ধ্যেবেলাটা আমার কাছে একটা উৎসবের মতো। যেদিন খুব গরম করত
সেদিন মাকে বলে উঠোনে চ্যাটাই পাততাম। তার ওপর হ্যারিকেন রেখে খুব পড়তাম। এত
আনন্দ হতো যে পড়া থামাতাম না। আসলে উঠোনে বসে কোনোদিন তো বাড়ির সামনেটাকে
দেখি নি, তাই উঠোনে বসে বাড়িটাকে একটা নতুন রূপে দেখতে পেতাম। এটা আমার কাছে
উৎসবের আনন্দের মতো। তখন আমার কাছের মানুষরাও এটা অনুধাবন করতে পারতো না। মা
দিদি শুধু দেখতো উঠোনে বসলে আমার পড়া কিছুতেই থামছে না। তাছাড়া বিকেলে মাঠের
ওই কোলাহলের পর সন্ধ্যেবেলা চারপাশের শান্ত পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে রাখতো।

হরিৎ:08/07/2017

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here