পথ —— ২২
——————
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
একদিন বাগানে ঢুকেই দেখি চার পাঁচজন অচেনা ছেলে ঘোরাফেরা করছে। আমি জানতে চাইলাম তাদের এখানে কি দরকার। ছেলেগুলো বলল কোনো কারণ নেই, তারা এমনই এসেছে। আমার কেমন যেন সুবিধার ঠেকল না। নিশ্চয়ই ওদের কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমি তাদের বাগান ছেড়ে চলে যেতে বললাম। বাগানের মালিকের ভয় দেখালাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মালিকে ব্যাপারটা জানালাম। মালি বললো, আমি যেন ওদের ওপর নজর রাখি।
সেদিন বই নিয়ে গাছে উঠে গেলাম। গাছ থেকে ছেলেগুলোর ওপর যাতে নজর রাখতে পারি। পড়তে পড়তে একটা আওয়াজ কানে এলো। মনে হলো একটা ঢিল খুব দ্রুত গাছ পাতা ভেদ করে চলে গেল। আমের সময় তো নয়। গাছে ঢিল ছুঁড়বে কেন? তাহলে কি ওরা পাখি মারতে এসেছে? আমার সন্দেহ মিথ্যে নয়। দেখি ছেলেগুলোর প্রত্যেকের হাতেই গুলতি। তার মানে আমি যখন ছেলেগুলোর সঙ্গে প্রথম কথা বলি তখন ওরা গুলতিগুলো লুকিয়ে রেখে ছিল। গাছ থেকে নেমে এলাম।
পাখি মারা, কুকুর বিড়ালকে ইঁট দিয়ে মারা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। এক্কা নামে আমাদের একটা কুকুর ছিল। গাড়ি চাপা পড়ে মরে যাওয়ার দিন আমি সারাদিন কেঁদে ছিলাম। বাগানে এতো পাখি যে গুণে শেষ করতে পারা যাবে না। কতরকম যে ডাক! মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বাগানের সবকিছুই এত আপন ছিল, যেন একটা সংসারের মতো।
কিন্তু ওদের সঙ্গে তো একা পেরে উঠবো না। সেই সময় আমার চেহারা এত রোগা ছিল, ধমক দিলে পাত্তা দেবে না। ছুটে গিয়ে মালিকে ডেকে নিয়ে এলাম। মালি একটা লাঠি নিয়ে তেড়ে এলো। মালিকে ওই মূর্তিতে দেখে ছেলেগুলো দে ছুট!
সেদিন দুপুরে বাড়িতে খেতে যেতে পারি নি। দেখি মা আমার জন্যে ভাত নিয়ে আসছে। খুব আনন্দ হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমি কিছু একটা করছি। সেদিন মায়ের সঙ্গে গাছের নিচে বসে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম।
হরিৎ: 20/06/2017
**********************