Home ব্লগবাজি পিটার দ্য সোবার ~ দেবব্রত সান্যাল

পিটার দ্য সোবার ~ দেবব্রত সান্যাল

পিটার দ্য সোবার    ~  দেবব্রত সান্যাল

পিটার দ্য সোবার

দেবব্রত সান্যাল

 

“ড্রিংক করলে আমি সোবার থাকি স্যার ” , এমন কাঁঠালের আমসত্ত্ব গোছের শব্দবন্ধ একমাত্র পিটারই বলতে পারে। আমি তখন ম্যাঙ্গালোরে এক পাবলিক সেক্টরে পাওয়ার প্ল্যান্টের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার , আর পিটার আমার সাথে কাজ করে,  ইন্সট্রুমেন্টেশন টেকনিশিয়ান। বয়েস ও অভিজ্ঞতায় অনেকটাই বড়ো হবার সুযোগে রোজই আমাকে কিছু না কিছু বলে যেত। কখনো মজা করে জিজ্ঞেস করতাম, “এসব জ্ঞান তোমার নিজের পিটার?”

পিটার তার বিখ্যাত হাসি হেসে বলতো ,” অরিজিনাল শুধু পিটার, বাকি সব রিপিটার।”

পিটার ডিউটিতে মদ খেয়ে আসতো , লাঞ্চ ব্রেকেও দু এক ঢোক মেরে দিতো। চেপে ধরলে বলতো , ” এগুলো আবার মদ নাকি ? কফির কাজিন। মদ হলো আমাদের ফেনী। ডাক্তাররা বলে শরীরের লিকুইড চাই , তাই ঢালি। ”

” জল ঢেলে দেখলে কেমন হয় ?”

” ছি : , কি যে বলেন ! জল তো নাওয়া ধোয়ার জন্য। আমার জল সহ্য হয় না। ”

লজ্জার সাথে মানতে বাধ্য হচ্ছি , মদ না খেলে পিটারের হাত কাঁপতো , হাতে স্ক্রু ড্রাইভার ও ধরতে পারতো না। আবার মদ খেয়ে থাকলে একদম ঠিক থাকতো , কিন্তু সঙ্গত কারণেই ওকে মেশিনের কাছে যেতে দিতে পারতাম না।

পিটারের বাড়ির লোকেরা ব’লে ব’লে হয়রান। ম্যাঙ্গালোরে গোয়া থেকে ফাদার ডি সুজা যখন এলেন , তার সারমন শুনতে পিটারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফাদার ডিসুজাকে পিটারের কথা আগে থেকেই বলা ছিল।  ফাদার বের হবার সময় পিটারের দিকে , বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পান করার ভঙ্গি করে তর্জনী দিয়ে না করে গেলেন।

পিটারের  বাড়ির লোক বললো, “ফাদারের কথা তো শুনবে। ”

পিটার বলে , ” অবশ্যই , ফাদার ইশারায় পরিষ্কার  বলে গেছেন , ‘বাপু হে , আর যাই করো , মদ খাওয়াটা ছেড়ো না’ । ”

পিটারের আর দুবছর চাকরি বাকি।  বললাম ভি আর নিয়ে নাও। বাণী শুনতে হলো ,” আমি টায়ার্ড , কিন্তু রিটায়ার্ড নই। ”

পিটারের মেয়ে জেনি , সেন্ট জোসেফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে ইনফোসিসে ঢুকেছে । সেখানে নাকি এক বাঙালি ছেলের সাথে প্রেম হয়েছে , এখন ওরা বিয়ে করতে চায়। .পিটার ক্ষোভ সামলে রাখতে পারলো না, ” এতো ছেলে থাকতে  কিনা বাঙালি ! নন ভেজ বলতে চিকেন আর মিষ্টি জলের মাছ , মুখে রসগোল্লা রেখে হিন্দি বলবে আর কুল ড্রিঙ্কস খেতে দেবে। ”

আমি স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করতে গিয়ে কোনো ফল পেলাম না, পিটারের আক্ষেপ বেড়েই চললো। “ধুতি পরে আগুন জ্বালিয়ে বিয়ে করবে , মজা টজার ব্যাপারই নেই। ছি : আত্মীয় স্বজনকে কি বলবো ? ভাবুন শেষে কিনা বাঙালি। ”

” আমিও তো বাঙালি পিটার , তাতে এতো কি হলো ?”

” বস তো আর পছন্দ করা যায় না , মেনে নিতে হয়। কিন্তু সান ইন ল ?”

জামাইয়ের ক্ষেত্রেও পিটারের করার কিছু ছিলোনা। বিয়েতে নেমতন্ন খেতে গিয়ে দেখি , পিটার স্যুট টাই পরে মেয়ে জামাইয়ের সাথে ছবি তুলছে। হাত মিলাতে গিয়ে দেখলাম , পিটারের হাত কাঁপছে। ওখানে আমার প্ল্যান্টের ক’জন ছাড়া সবাই অচেনা , খাওয়া সারতে সারতে দেখলাম , জোড়ায় জোড়ায় নাচ শুরু হয়েছে। ওসব তো আমাদের আসেনা , তাই ভাবলাম এবার যাওয়া যাক । যাওয়ার আগে পিটারকে একবার বলে যাবো, তাই  পিটারকে খুঁজতে খুঁজতে দেখি হলের বাইরে আধো অন্ধকারে একা দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে। আর বিরক্ত করলাম না , পিটারের আবার জল একেবারে সহ্য হয় না।

দেবব্রত সান্যাল:20/06/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here