পথ ------ ২৩ ------------------- হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বেনেপুকুর এমনই একটা পুকুর যেখানে ঘাট শ্রাদ্ধের কাজও হতো। তবে শুধু আমাদের পাড়া। মানে ব্রাহ্মণপাড়া। আমাদের পাড়া বিরাট জায়গা। অনেক ঘর বাসিন্দা। একসময় আমাদের পাড়ায় ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারও জায়গা হতো না। পাড়ার অনেকেই শুনতাম এটা গর্ব করে অন্য পাড়ার ছেলেদের বলছে। আমি এই অকারণ গর্বের কোনো কারণ খুঁজে পেতাম না। আমি যে গাছটার নিচে পড়াশোনা করতাম সেখানেই ঘাট শ্রাদ্ধের কাজগুলো হতো। কারণ জায়গাটা বেশ ছায়া ছায়া। যেহেতু আমাদের আত্মীয়-স্বজনেই ভরা থাকতো পাড়া তাই ওখানে কারও পারলৌকিক কাজকর্ম হলে আমিও ওখানে উপস্থিত থাকতাম। বেনেপুকুর যেন আমার কত চেনা। আমি সকলের আগে গিয়ে হাজির হয়ে যেতাম। অন্যদিন তো ঘোরা হতো না। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোতে সারা বাগানটা ঘুরে বেড়াতাম। ১৯৯৫ সালে বাবা মারা যায়। খুব একা তখন আমি। সংসারের হাল ধরার মতো বয়স হয় নি। তবু হাল ধরতে হয়েছিল। তখন আমি চুঁচুড়াতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে যখন দু' একদিনের জন্য ধনেখালির বাড়ি যেতাম তখন সারা দিনটাই বেনেপুকুরে বসে থাকতাম। কারও সাথে দেখা করতে, কথা বলতে ইচ্ছা করতো না। গাছটার নিচে একা একা বসে থাকতাম। কি শান্তি যে পেতাম! ওই আমগাছটার নিচেই বাবার কাজ হয়েছিল। পুরোহিত কত মন্ত্র যে বলে গেলেন আমি কিছুই শুনতে পাই নি। সেদিন পৃথিবীতে আমি সম্পূর্ণ বন্ধুহীন। আমার পাশে দাঁড়াবার মতো আর কেউ নেই। বেনেপুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে শুধু বসে আছি আর কাঁদছি। সেদিন যদি সত্যিই পাশে কেউ থাকে সে হল এই বেনেপুকুর। প্রতিদিন একটু একটু করে এখান থেকেই আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
হরিৎঃ ২১/০৬/২০১৭