Home ব্লগবাজি পথ — ৩২ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩২ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৩২ ~    হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ —— ৩২
—————–
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মাটির দেওয়াল, মাটির মেঝে, খড়ের চালের নিচে আমরা চারজন। বাইরে মুষলধারে
বৃষ্টি। মেঝে চব্বিশ ঘণ্টাই স্যাঁতস্যাঁত করছে। ঘরের সর্বত্র কেন্নো ঘুরে
বেড়াচ্ছে।
আকাশে মেঘ দেখলেই আমাদের চিন্তা শুরু হয়ে যেত। কারণ তার পরেই তো বৃষ্টি।
ঘরের পূর্বদিকের দেওয়ালটা তো জল পেয়ে ফুলে গিয়ে পড়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
আছে। তাই বৃষ্টি শুরু হলেই দেওয়ালটা আমার সব মন আকর্ষণ করে নিত। বার বার চেয়ে
দেখতাম আর মনে মনে প্রশ্ন করতাম আর কতক্ষণ?
খড়ের চালে প্রতি বছর খড় বদলাতে হয়। তাহলে ঘরের সুরক্ষা নিয়ে কোনো
চিন্তা থাকে না। কিন্তু বাবার সেই ক্ষমতা ছিল না। একবছর অন্তর অন্তর ঘরের চাল
পরিবর্তন করা হত। তাই দ্বিতীয় বছর ঘরের চাল ফুটো হয়ে জল মেঝে আর দেওয়ালকে
ভাসিয়ে দিত।
বর্ষার বৃষ্টির রিমঝিম সুরে অনেকেই যখন কবিতা, গল্প, গানে মগ্ন তখন
আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত কাটত দারুণ আশঙ্কায়। মনে হতো এর চেয়ে কোনো পাকা
বাড়ির বারান্দাতেও যদি আমাদের ঠাঁই হতো বেঁচে যেতাম। প্রতিদিন এক চিন্তা।
ঘরটা পড়ে যাবে না তো!
কিছুদিন পর আমরা আরও একটা ঘর পেলাম। না, তৈরি করা আমাদের সম্ভব ছিল না।
পৈতৃক সূত্রে আমরা একটা ঘর ভাগে পেলাম। কিন্তু খুশি হওয়ার মতো কিছু ছিল না।
কারণ এতে খরচ অনেক বেড়ে গেল। একটা ঘরের খড় যোগাতেই অস্থির, তার ওপর আরও একটা।
নতুন ঘরে আমি আর বাবা শুয়ে আছি। ঘুমের মধ্যে মনে হলো গায়ে ঠান্ডা ঠান্ডা
যেন কি একটা পড়ছে। চোখ খুলতেই কানে এলো বৃষ্টির আওয়াজ। তার পরেই দেখতে পেলাম
বৃষ্টির জল খড়ের চাল ভেদ করে মশারীর ভেতর দিয়ে আমাদের গায়ে। সাথে সাথে
বাবাকে তুললাম। মশারী খুলে বিছানা গুটিয়ে ঘরের এককোণে চলে যেতাম। যেখানে
বৃষ্টি তুলনামূলক ভাবে একটু কম পড়ছে। গোটানো বিছানার গায়ে হেলান দিয়ে
সারারাত জেগে বসে থেকেছি। কখনও ঘুমে ঢুলে পড়েও গেছি। কিন্তু বাবাকে একদিনের
জন্যও বলতে শুনি নি ——- ” গরিবের ঘরে এই কষ্টটুকু আমাদের করতেই হবে।” বাবা
আমার কষ্টকে কোনোদিন বড় করে দেখে নি।
আজ বুঝতে পারি, সেই দিনগুলোতে বাবার আচরণ কতটা সঠিক ছিল। কিছু না বলে
বাবা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল —– এটাই জীবন। বাঁচাতে গেলে এভাবেই বাঁচতে হয়।
সৌভাগ্যবানেরাই জীবনের সকল পথ মাড়িয়ে যেতে পারে।

হরিৎ~10/07/2017

********************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here