পথ ——- ৩৩
——————
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
যা জানি না তা নিয়ে আমি কখনও কোনো মন্তব্য করতে যাই না। সকলের সামনে
একেবারে শুরুতেই আমি আমার অজ্ঞতার কথা জানিয়ে দিই। এজন্য বন্ধুদের কাছে অনেক
গালাগালি খেতে হয়েছে। আমার এই আচরণের উদ্দেশ্যে সকলের একটাই বক্তব্য —– আমি
আমার অজ্ঞতাকে স্বীকার করব কেন? হয় চুপ করে থাকব আর না হয় সামান্য জ্ঞান নিয়েই
এমন একটা ভাব দেখাবো যেন আমি অনেক কিছু জানি। লোকটার সাথে তো আমি ঘনিষ্ঠতা
করতে যাচ্ছি না, তাছাড়া তার সঙ্গে আর দ্বিতীয়বারের জন্য দেখাও হবে কিনা
সন্দেহ —– তাই তাকে আমার ঘরের কথা বলতে যাব কেন?
হাজার গালাগালিতেও আমার এই স্বভাবের নামমাত্র পরিবর্তনও হয় নি। এই স্বভাব
আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। আমাদের পরিবারের সবাই নিজেদের রাজনৈতিক মতবাদকে
প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো জায়গায় তারা তাদের প্রিয় দল সম্পর্কে মন্তব্যও
করেছে। আমার বাবাকে কখনও এই পথে পা বাড়াতে দেখি নি। বাবার এই আচরণের জন্য
তাকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি, কিন্তু উত্তর একটাই —— ” আমি রাজনীতিটা
একবারেই বুঝি না। আর যা বুঝি না তা নিয়ে কিছু বলতে গেলে নিজের কাছেই নিজে
বোকা হয়ে যাই। আমার পৃথিবী এসবের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ”
ভোটের দিন দেখার! আমাদের অঞ্চলে একতরফা ভোট হতো। বেশিরভাগ মানুষই ভোট
দিতে গিয়ে হাতে কালি না লাগিয়ে ফিরে আসত। ভোট দিতে গিয়ে তারা শুনতো তাদের
ভোট হয়ে গেছে। মাকেও অনেকবার এইভাবে ফিরে আসতে দেখেছি।
বাবাকে আমি কোনোদিন ভোট দিতে যেতে দেখি নি। প্রথমদিকে অত সব কিছু বুঝতাম
না। সকলের আঙুলেই কালি লাগানো থাকতো। কিন্তু বাবার আঙুলে কোনো কালির দাগ দেখতে
পেতাম না। বাবা বলতো, ওরা হয়তো কালি লাগাতে ভুলে গেছে। যখন এইধরনের উত্তর
শোনার বয়স হয়েছে তখন বাবাকে বলতে শুনেছি, ” আমার চোখের সামনে কে আছে? আমি তো
এদের কাউকে চিনি না। যাকে চিনিই না তাকে পছন্দ করার তো প্রশ্নই আসে না। ” ওই
বয়সে আমার চারপাশে এমন মন্তব্য আমি কারও মুখ থেকে শুনি নি।
” যে রাজনীতি মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখে নি, যে রাজনীতি মানুষকে সম্মান
করতে জানে না, সেই রাজনীতির সঙ্গে মানুষের কোনো যোগ থাকতে পারে না।” বুঝতে
পারতাম, ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারটা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে
পারে নি।
হরিৎ-12/07/2017
****************